মাত্র দশ ইঞ্চির ইলিশ। বিকোচ্ছেও ভাল। বড় ইলিশে হাত ছোঁয়ানো যাচ্ছে না। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
হাতে ইলিশ ঝুলিয়ে যেতে দেখে কারও মনে ইলিশের দাম কিংবা তার ঠিকুজি কুষ্ঠী জানার আগ্রহ দেখাবে না কেউ, গোপাল ভাঁড়ের এমন কথা সেই মধ্যযুগেও বিশ্বাস হয়নি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের। এ যুগে তো কথাই নেই। বিশেষ করে ভরা বর্ষায় যখন পদ্মার ইলিশের দেখা নেই মাছ বাজারে। সে যুগে যদি সেই কেনা মাছের ওজন, কত টাকা কেজি নিয়ে আগ্রহের পাশাপাশি ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া ইলিশ সাগরের না নদীর তাই নিয়ে মানুষের জিজ্ঞাসা থাকে, তা হলে এ যুগের মানুষ কাউকে ইলিশ হাতে নিয়ে যেতে দেখলে অবধারিত জিজ্ঞাসা করবেন “এ কি উপহার না কি লটারি পেলে?” পাবদার মাপের ইলিশ কেবল মিলছে নাগালের মধ্যে। পাঁচশো, এক কেজির ইলিশের দাম নাগালের বাইরে।
মাছের বাজারে পদ্মা ঘেঁষা জেলা মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ইলিশের বর্তমান দাম এমনই। ফলে মাঝ শ্রাবণেই দামের চোটে মাছের বাজারে গুটি কয়েক জলের রুপোলি শস্য দেখেই রসনার তৃপ্তি মেটাচ্ছেন মধ্যবিত্ত। এক পাইকারি মাছ বিক্রেতা সুশীল হালদার বলেন, “তা ছাড়া আর উপায় কি? ইলিশের যে আমদানি নেই মোটেই।”
জানা গেল, মুম্বই থেকে ডিমভরা যে ইলিশ আসছে, সাতশো আটশো গ্রামের সেই মাছ ৯০০ থেকে হাজার টাকায় বিকোচ্ছে পাইকারি বাজারে। যদি ওজনে তার থেকে বেশি হয় তা হলে সেই মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২৫০ টাকায়। মায়নমার থেকে আসা বরফের চারশো গ্রাম মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০টাকায়। আর দেড় কিলোর উপর সেই মাছের পাইকারি বাজার দর ১৫৫০টাকা। অথচ স্বাদ নেই ইলিশের। যে মাছের স্বাদ আছে সেই কাঁচা ইলিশের দেখাই নেই বাজারে। যদিও বা আসছে তা আকারে নিতান্তই ছোট।
স্বর্ণময়ী বাজারে যাঁরা কিনছেন তাঁদেরই একজন সুবর্ণা দত্ত বললেন, “মরসুমি মাছ। এতো বেশি দাম দিয়ে কিনতে গায়ে লাগছে। কিন্তু না খেলে যে বছরভর আর ইলিশ খাওয়ার ইচ্ছেই থাকবে না। তাই অগত্যা মন ভরাতে কিনতে হল।”
ইলিশের আমদানি কম হওয়ায় তার প্রভাব শুধু মধ্যবিত্তের হেঁসেলেই পড়েনি। ইলিশের প্রভাব পড়েছে বহরমপুরের বিভিন্ন হোটেল রেস্তরাঁতেও।
ইলিশের আকাশছোঁয়া দামে সেখান থেকে লুপ্ত হচ্ছে ইলিশের নানান পদ বিশেষ করে ইলিশ মালাইকারি, দই-ইলিশ, ইলিশ ভাপার মতো ইলিশের ‘ভার্সেটাইল’ পদ। এক রেঁস্তরাঁর মালিক শৈবাল রায়ের অভিযোগ “ইলিশের চালানের দাম যখন হাজার টাকা তখন খুচরো বাজারে সেই মাছ পনেরোশো টাকায় বিকোচ্ছে। হোটেল ব্যবসায়ীরা যখন বেশি পরিমাণে কিনছেন তখনও তার দাম চোদ্দশো টাকা কেজি পড়ছে।”
যার ফলে একশো গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ টুকরোর দাম পড়ছে তিনশো টাকার এদিক ওদিক। তবে তাঁর আক্ষেপ “পদ্মার ইলিশ পেলে এই স্বাদ আরও ভাল হতে পারত।”
বছর চারেক আগে এই বহরমপুরেই গঙ্গার বুকে ইলিশ উৎসব হয়েছিল, সুন্দরবনের ইলিশে উৎসবের ধাঁচে। সেই উৎসবের অন্যতম হোতা বিশ্বদীপ মণ্ডল বলেন, “সে বার তিন থেকে সাড়ে তিন কুইন্ট্যাল ইলিশ বিক্রি হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল ইলিশের নানান পদ। তিন দিনের সেই উৎসব ঘিরে মানুষের আগ্রহও ছিল তুঙ্গে। পড়শি জেলা থেকেও অনেকে এসেছিলেন সেই উৎসবে যোগ দিতে।” সেই উৎসবের পরের বছর এফইউসি মাঠে হয়েছিল ইলিশ ও চিংড়ি নিয়ে ঘটি-বাঙালের লড়াই। যদিও জয় হয়েছিল ইলিশেরই।
বিশ্বরূপ বলেন, “সেবারও নয় নয় করে প্রায় আড়াই তিন কুইন্ট্যাল ইলিশ বিক্রি হয়েছিল।”
করোনা আবহে সেই উৎসব এখনও অধরা। সেপ্টেম্বরে গঙ্গা বক্ষে আবারও ইলিশ উৎসব করার কথা ভাবছেন বিশ্বদীপবাবু। তবে যদি সস্তায় কাঁচা ইলিশ মেলে তবেই।