ইদের দিনে। বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
করোনা আবহে গত বছরের মতো এ বছরও বিধি মেনে পালিত হল খুশির ইদ। সংক্রমণ রুখতে ইদগাহ, মসজিদে অধিক সংখ্যক মানুষের জমায়েত না করার জন্য আর্জি জানায় প্রশাসন। ইমাম-মুয়াজ্জিনদের তরফেও ইদগাহ, মসজিদে জমায়েতের পরিবর্তে অল্প সংখ্যক লোক নিয়ে বাড়িতে, মসজিদে, খোলা জায়গায়, এমনকি ইদগাহ ময়দানেও অল্প সংখ্যক লোক নিয়ে বিধি মেনে ইদের নমাজ পড়ার জন্য আর্জি জানান হয়। প্রশাসনের এই বার্তা সমস্ত ইদগাহ, মসজিদ কমিটির কাছে পৌঁছে দিতে ইদের দিন কয়েক আগে থেকে জেলার প্রতিটি থানায় প্রশাসনিক কর্তারা বৈঠক করেন বিভিন্ন ইদগাহ, মসজিদ কমিটির কর্মকর্তা, ইমাম, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে। রোজার ইদের পর কোরবানি ইদেও প্রশাসনের ডাকে সাড়া দিলেন অধিকাংশ ইদগাহ কমিটি।
অধিকাংশ ইদগাহ কমিটি কোরবানি ইদের নমাজও ছোট, ছোট জমায়েত করে পড়ে। অধিকাংশ ইদগাহ কমিটির কর্মকর্তারা বলছেন,অতিমারির কারনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ইদের নমাজ পড়া হয়েছে। অধিকাংশ ইদগাহের গেটে ছিল স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা। মুসল্লিদের মুখেও ছিল মাস্ক, রুমাল। তবে হরিহরপাড়া, নওদা, ডোমকল, জলঙ্গি, রঘুনাথগঞ্জ, ফরাক্কা, কান্দি, বেলডাঙা সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু ইদগাহে জমায়েতের পাশাপাশি ভিড়ও চোখে পড়ে।
জেলা ইমাম নিজামুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা ইমাম সংগঠনের পক্ষ থেকে ইমাম, মুয়াজ্জিনদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। গত জুম্মার আগে ইদে কী কী করণীয় সে বিষয়ে বার্তা মসজিদ থেকে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ও ইমাম মুয়াজ্জিনদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই বাড়িতে, মসজিদে ছোট ছোট জমায়েত করে ইদের নমাজ পড়েছেন। কোথাও জমায়েত বেশি হলেও অধিকাংশ জায়গায় প্রশাসনের নির্দেশিকা মেনেই ইদের নমাজ হয়েছে।’’
হরিহরপাড়ার সব থেকে বড় ইদগাহ হরিহরপাড়া ইদগাহ ময়দান। জানা গিয়েছে প্রতি ইদে ওই ইদগাহ ময়দানে ১০-১২ হাজার মুসল্লি ইদের নমাজ পড়েন। এবছর সেখানে হাজার খানেক লোকের জমায়েত হয়েছিল। ইদগাহ কমিটির সম্পাদক ইউসুফ আলি বলেন, ‘‘বেশি মানুষের জমায়েত এড়াতে এলাকার বিভিন্ন মসজিদে ছোট ছোট জমায়েত করা হয়েছে। অনেকে বাড়িতে ইদের নমাজ পড়েছেন। কিন্তু কেউ ইদগাহে আসলে তো আর ফিরিয়ে দেওয়া যায় না!’’ হরিহরপাড়ার বাসিন্দা রাফি রেজা বলেন, ‘‘প্রতিবছর ইদগাহে ইদের নমাজ পড়লেও পরপর দু’বছর সেটা হচ্ছে না। গত ইদেও বাড়িতে নমাজ পড়েছি। এ বারেও ইদগাহে না গিয়ে অল্প সংখ্যক লোক নিয়ে মসজিদে নমাজ পড়েছি।’’
মুফতি জারজিস হোসেন নামে হরিহরপাড়ার এক ইমাম বলেন, ‘‘মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কী করণীয় হাদিসেও তার ব্যাখ্যা রয়েছে। আমরা নমাজ শেষে মুসল্লিদের সামনে সেকথা তুলে ধরেছি।’’
এ দিন নমাজ শেষে খুতবার বার্তায় করোনা সংক্রমণ থেকে কী ভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে হবে তারও বার্তা দেওয়া হয়। কোরবানির মাংস আড়ালে করার পরামর্শ দেওয়া হয়। নমাজ শেষে মাংস বিলির জন্য কম বয়সীদের হাতেও মোটরসাইকেল তুলে দেওয়া হয়। ফলে গত কয়েক বছর কোরবানি ইদের দিন দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি থাকে। দুর্ঘটনা এড়াতে ছোটদের হাতে বাইক না দেওয়া-সহ ট্রাফিক আইন মেনে সতর্ক ভাবেই বাইক চালানোর পরামর্শ দেন অধিকাংশ ইমাম।
এ বছর করোনা আবহে বিধিনিষেধের কারণে ইদের আনন্দ ম্লান প্রবাসী ও ভিন রাজ্যে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারে।
এ দিন সকালে ইদের নমাজ শেষে মাংস প্রস্তুত করে প্রতিবেশী, আত্মীয় পরিজনদের বাড়ি পৌঁছে দেন একে অপরের বাড়িতে।