প্রতীকী চিত্র।
‘রূপশ্রী প্রকল্পে’র সুবিধা পেতে ফের জালিয়াতির অভিযোগ উঠল। ১৮ বছরের উপরে রাজ্যের যে কোনও মেয়ের প্রথম বিয়ের ক্ষেত্রে এই প্রকল্পে সরকার এককালীন ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দেয়। অথচ কারও চার বছর আগে বিয়ে হয়েছে, কারও বা সাত বছর আগে বিয়ে হয়েছে, কেউ বা দুই বা তিন সন্তানের জননী এমন ১২ জন মহিলা রূপশ্রীর সুবিধা পেতে জালিয়াতি করেছেন বলে অভিযোগ। ওই ১২ টি ঘটনার তদন্ত করে বহরমপুর ব্লক প্রশাসন প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। এর পরেই ১২ জনের বিরুদ্ধে বহরমপুর ও দৌলতাবাদ থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
বুধবার রাতে বহরমপুরের বিডিও অভিনন্দন ঘোষ বলেন, ‘‘রূপশ্রী প্রকল্পে জাতিয়াতি করায় বহরমপুর থানায় ৯ টি এবং দৌলতাবাদ থানায় ৩ টি মামলা করা হয়েছে। বুধবার রাতেই এবিষয়ে এফআইআর করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘দিন পনেরো থেকে আমরা সন্দেহজনক আবেদনকারীর ক্ষেত্রে তদন্ত শুরু করি। তদন্তে ওই ১২ জনের নাম সামনে এসেছে।’’
বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার অধিকারী বলেন, ‘‘জালিয়াতি করে সরকারি অর্থ নয়ছয় করতে দেওয়া যাবে না। যাঁরা জালিয়াতির ঘটনায় যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ বছরের উপরে রাজ্যের যে কোনও মেয়ের পারিবারিক আয় যদি বছরে দেড় লক্ষ টাকার নীচে হয় তবে তাঁর প্রথম বিয়ের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার এককালীন ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করে। যার পোশাকি নাম ‘রূপশ্রী প্রকল্প’। সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে বিয়ের আগে ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন করতে হয়। আবেদনের সঙ্গে বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, বয়সের প্রমাণপত্র, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের দেওয়া পারিবারিক বাৎসরিক আয়ের শংসাপত্র, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর, বর কনের দুটি করে ছবি দিতে হয়। এছাড়া একটি হলফনামা দিতে হয়। এটাই কনের প্রথম বিয়ে, কনের বয়স ১৮ বছরের উপরে এবং বরের বয়স ২১ বছরের উপরে, ওই কনের পারিবারিক আয় বছরে দেড় লক্ষ টাকার নীচে এমন তথ্য হলফনামায় জানাতে হয়।
আর এমন আবেদন পাওয়ার পরে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করে আবেদনকারীর অ্যাকাউন্টে অর্থ দেওয়া হয়।
অভিযোগ, অনেক আগে বিয়ে হলেও কেউ কেউ এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে মিথ্যা গল্প ফাঁদে। বিয়ের কয়েকটি ভুয়ো নিমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে, ভুয়ো বিয়ের দিন দেখিয়ে বিবাহিত মহিলা থেকে শুরু করে কয়েক সন্তানের মায়েরাও রূপশ্রী প্রকল্পে আবেদন করেন। বহরমপুর ব্লকেও এমন ঘটনা সামনে এসেছে। বহরমপুর ব্লকের বহরমপুর থানা এলাকায় এমন ৯ টি ঘটনা তদন্তে উঠে এসেছে। তাতে কেউ টাকা তুলে নিয়েছে, কারও বা অর্থ অনুমোদনের মুখে।
একইভাবে বহরমপুরের ব্লকের দৌলতাবাদ থানা এলাকায় তিন জন মহিলার জালিয়াতির তথ্য সামনে এসেছে। এই ১২ জনের আগেই বিয়ে হয়েছে। সেই বিবাহিত মহিলারা রূপশ্রীর অর্থ পেতে জালিয়াতি করেছে।
বহরমপুরের বিডিও জানান, রূপশ্রীর প্রকল্পে জালিয়াতির ঘটনায় অন্য কোনও চক্র জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।