Acid Attack

acid attack: চোরা বিক্রিতে নজরদারি কই? আবার অ্যাসিড হামলা, সংশয় নজরদারি নিয়েই

শক্তিশালী অ্যাসিড যা খোলা বাজারে আসার কথাই নয়, তার কারবার চলছে কী করে?

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা 
ধুবুলিয়া শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২১ ০৫:১৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মায়াকোলের অ্যাসিড হামলায় অভিযুক্ত এখনও অধরাই। আক্রান্ত মহিলার পরিবারের তরফে বুধবার রাতে প্রতিবেশী অভিজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওই রাতেই পুলিশ তার বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তাকে পাকড়াও করা যায়নি। এই ঘটনায় ফের অ্যাসিড বিক্রি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

দিন কয়েক আগেই কৃষ্ণনগর শহরে এক ছাত্রীকে অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছিল তার প্রাক্তন স্বামী। পরে অভিযুক্তের পাশাপাশি তাকে অ্যাসিড বিক্রির অভিযোগে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ধুবুলিয়ার মায়াকোল গ্রামে আবারও অ্যসিড হামলার ঘটনা ঘটল।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছর পঁয়ত্রিশের এক মহিলার মুখে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী যুবকের অভিজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে। ওই যুবক মহিলার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। মহিলা বর্তমানে কলকাতায় এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

আক্রান্তের পরিবারের অভিযোগ, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মহিলার বাড়িতে ঢুকে তাঁর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালিয়ে যায় অভিজিৎ। তাঁর আর্তনাদ শুনে ছুটে আসেন আত্মীয়স্বজনরা। মহিলাকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দু’দিন চিকিৎসার পর তাঁকে এনআরএসে পাঠানো হয়েছে।

মহিলার স্বামীর দাবি, প্রতিবেশী ওই যুবক তাঁর স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত, কুপ্রস্তাব দিত। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁর মুখে অ্যাসিড ছুড়েছে। যদিও পাড়াপড়শিদের একাংশের দাবি, অভিজিতের সঙ্গে মহিলার ‘সম্পর্ক’ তৈরি হয়েছিল। যা নিয়ে দুই বাড়ির মধ্যে অশান্তিও হয়। এমনকি মহিলার স্বামীর সঙ্গেও একাধিক বার অশান্তি হয়েছে। তবে সম্প্রতি মহিলা ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চাইছিলেন না। তার জেরেই এই অ্যাসিড হামলা।

অভিজিৎ অন্যত্র রাজমিস্ত্রির কাজ করে। সম্প্রতি সে কর্মক্ষেত্রে থেকে বাড়ি ফিরেছিল। তার পরিবারের একটি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি ওই মহিলা অভিজিতের কাছ থেকে দু’লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন। অভিজিৎ গ্রামেরই এক জনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে দিয়েছিল। মহিলা সেই টাকা পরিশোধ না করায় রাগের মাথায় সে এই কাজ করেছে। যদিও অভিজিতের মা মেনকা ঘোষের দাবি, “আমার ছেলে এই কাজ করেনি। করতে পারে না। সে ঘটনার আগেই কাজে চলে গিয়ে গিয়েছিল। এই হামলার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত।”

মহিলার ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে এবং মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। পরিবার সূত্রের খবর, হামলার সময়ে ছেলে বাড়িতে ছিল না, গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়েছিল। মা আর মেয়ে ছিল বাড়িতে। মহিলার স্বামীও তখন বাড়িতে ছিলেন না। রাতে রান্নাবান্না শেষ হয়ে গিয়েছিল। দুধ গরম করতে রান্না ঘরে যাওয়ার জন্য বাইরে বের হতেই ওই যুবক তার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ।

এই ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, অ্যাসিড বিক্রি নিয়ে এত কড়াকড়ি থাকার পরেও কী ভাবে তা সাধারণ মানুষের হাতে চলে আসছে? বিশেষত গয়নার দোকানে ব্যবহৃত হয় সালফিউরিক বা নাইট্রিক অ্যাসিডের মতো জোরালো অ্যাসিড যা মারাত্মক রকম জখম করতে পারে। সেই সব অ্যাসিড মজুত রাখার ও ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়মবিধি আছে। তা কী করে যে কারও হাতে চলে আসতে পারে, সেই প্রশ্ন এড়ানো যাচ্ছে না। তা হলে কি পুলিশি নজরদারিতে কোনও ফাঁক থেকে গিয়েছে?

সে কথা অবশ্য মানতে নারাজ জেলা পুলিশের কর্তার। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃশানু রায়ের দাবি, “আমরা চারদিকে কড়া নজরদারি চালাচ্ছি। সম্প্রতি থানাগুলি স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে অ্যাসিড বিক্রির নিয়নকানুন জানিয়ে তাদের সতর্ক করে দিয়েছে।” তবে পুলিশ যা নিয়ে সম্প্রতি ‘নজরদারি’ চালাচ্ছে, তা মূলত শৌচাগার পরিষ্কার করার কম শক্তির মিউরিয়েটিক অ্যাসিড যা প্রায় সর্বত্র মুদি থেকে হার্ডওয়্যার দোকানে পাওয়া যায়। দিন কয়েক আগেই অবৈধ ভাবে অ্যাসিড মজুত রাখার অভিযোগে তিন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে শান্তিপুর থানার পুলিশ। কিন্তু শক্তিশালী অ্যাসিড যা খোলা বাজারে আসার কথাই নয়, তার কারবার চলছে কী করে? নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের যুগ্ম সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “আমরা পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে থেকে বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে সতর্ক করছি। তার পরেও যদি কোনও দোকানদার বেআইনি ভাবে অ্যাসিড বিক্রি করে, আমরাও চাইব তার কঠিন শাস্তি হোক।” এ ক্ষেত্রেও অ্যাসিড বিক্রেতার খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। যদিও অভিযুক্তের নাগাল না পেলে অ্যাসিড বিক্রেতাকে ধরা কতটা সম্ভব তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement