Ranaghat Robbery

বাথরুমে লুকিয়েছি, বন্দুক হাতে ধাক্কা দিচ্ছে ডাকাত

বাইরে বড় দরজার কাচ ভাঙার আওয়াজে চমকে উঠলাম। এর পর দুই-তিন বার পটকা ফাটার মতো শব্দ। কী হয়েছে তা বোঝার আগেই দরজায় দাঁড়ানো রক্ষী দাদার মাথায় পিস্তল ঠেকাল একটা লোক।

Advertisement
রুমকী রায়চৌধুরী
রানাঘাট শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৩৯
An image of the woman

রুমকী রায়চৌধুরী, দোকানের কর্মী। —ফাইল চিত্র।

দরজায় ভিতর থেকে ছিটকিনি লাগিয়েছি। কিন্তু বাইরে থেকে ধাক্কা পড়ছে। হুমকি দিচ্ছে বেরিয়ে আসার জন্য। শব্দ শুনছি গুলির।

Advertisement

কাঁপা হাতে গুগ্‌লে সার্চ করে যাচ্ছি রানাঘাট থানার নম্বর। যে নম্বর পেলাম, তাতে ফোনই যায় না! ১০০ ডায়াল করলে শুনেছি পুলিশ আসে। দরজায় পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে ১০০ ডায়াল করেই চলেছি। ফোন ধরল না কেউ! মাথা কাজ করছে না! ফোন করলাম হবু বরকে। বললাম, “ডাকাত পড়েছে, বাঁচাও!”

দিনের শুরুটা ছিল অন্য দিনের মতোই। দুপুর তখন প্রায় ৩টে ১০। বাইরে বড় দরজার কাচ ভাঙার আওয়াজে চমকে উঠলাম। এর পর দুই-তিন বার পটকা ফাটার মতো শব্দ। কী হয়েছে তা বোঝার আগেই দরজায় দাঁড়ানো রক্ষী দাদার মাথায় পিস্তল ঠেকাল একটা লোক। তিনি বাধ্য হয়ে ভিতরের দরজা খুলতেই তাঁকে ধাক্কা মেরে ছিটকে ফেলল ওরা। ছয় থেকে সাত জন। ভিতরে ঢুকেই গুলি চালাল আবার। সেই সঙ্গে নির্দেশ— “সকলে মোবাইল জমা দাও।”

আমি ক্যাশে বসি। ওই অংশটা দরজা থেকে সরাসরি দেখা যায় না। আমি সামনের দিকে গিয়ে দেখি, ওরা সবাইকে ধাক্কা দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। দোকানে ডাকাত পড়ার কথা কাগজে পড়েছি, টিভিতে দেখেছি। নিজে দেখব ভাবিনি। হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। দাঁড়িয়েছিলাম টয়লেটের পাশেই। ভাগ্যিস, হাতে মোবাইলটা ছিল। পালানোর আগেই ওদের চোখ পড়ল আমার উপরে। হুমকি ভেসে এল। আমার দিকে দৌড়ে এল এক জন। বলল, “নড়লেই গুলি করব।” হিন্দিতে কথা বলছিল ওরা।

ভাবলাম, দাঁড়িয়ে থাকলেও যদি গুলি করে! তাই ভগবানের নাম নিয়ে এক লাফে বাথরুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলাম। বাইরে লোকটা তখন ধাক্কা দিচ্ছে, শাসাচ্ছে। দরজা ভাঙার উপক্রম। আমি দরজায় পিঠ ঠেসে দাঁড়িয়ে। ভয় হচ্ছে, যদি গুলি চালায়!

গুগ্‌ল করে পাওয়া নম্বরগুলো কোনও কাজে দিচ্ছে না। জানতাম, হবু পিসশ্বশুর পুলিশে আছেন। তাই হবু স্বামীকে ফোন করে বললাম, “যে করে হোক, পুলিশ পাঠাও। দোকানে ডাকাত পড়েছে।”

পরে জানতে পারি, হবু শ্বশুরমশাইও থানার নম্বর পাননি। শেষ পর্যন্ত পিসশ্বশুর সব জানতে পেরে রানাঘাট মহিলা থানায় এক ব্যাচমেট-কে ফোন করেন।

ততক্ষণে ভিতরে লন্ডভন্ড চালাচ্ছে ওরা। ক্যাশের কাছে এসে হিরের কাউন্টার ভেঙে গয়নাগুলো নিয়েছে। তার আগে ক্যাশের কাছে থাকা সব তারও কেটে দিয়েছে। ওরা ভেবেছিল, ক্যাশের ওখানেই সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল ইউনিট। তাই ওখানকার তার কাটলেই ক্যামেরা অচল হবে। কিন্তু আমাদের কন্ট্রোল ইউনিট দোতলায়। তাই ভিতরের ছবি ধরা পড়েছে। ডাকাতদের কারও মুখোশ ছিল না। এক জন হেলমেট পরেছিল। বাকিদের মাথায় ছিল টুপি।

প্রায় সাড়ে ৩টে নাগাদ পুলিশ আসে। সঙ্গে মোটরসাইকেলে আসেন হবু শ্বশুরমশাইও। পুলিশ এসেছে জানতে পেরেই এতক্ষণ হিন্দিতে কথা বলা ছেলেগুলো হঠাৎ বাংলা বলতে শুরু করল। এক জন বলল, “পুলিশের দিকে ফায়ার করতে করতে পালা।” পরে শুনলাম, পুলিশের পাশেই থাকা হবু শ্বশুরমশায় ওদের গুলি থেকে কোনও মতে বেঁচেছেন।

ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে অনেকটা সময়। এখনও ত্রাস কাটছে না। বাথরুমের ভিতরের ওই সময়টা মনে হয় স্বপ্নেও তাড়া করবে।

অনুলিখন: রাজীবাক্ষ রক্ষিত

আরও পড়ুন
Advertisement