৯৫ বছর বয়সি কাদম্বরী দাসের সঙ্গে তাঁর বড় ছেলের বৌ সোমা নিজস্ব চিত্র
ঘরে একটা খাটে দুটো বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় হাতে বসে আথেন তিনি। হাতে তুলসী কাঠের মালা নিয়ে জপছেন একমনে। দেখে কে বলবে, সদ্য করোনা থেকে সেরে উঠেছেন?
শক্তিনগর আশু রায় রোডের বাই লেনের ৯৫ বছর বয়সি কাদম্বরী দাস। সোমবার সকাল, একটু আগে স্নান সারা হয়েছে। বড় ছেলের বৌ সোমা বলেন, “রোজ সকালে টাইম কলের জলে স্নান করা মায়ের বহু দিনের অভ্যেস।” বয়সের ভারে কানে একটু খাটো। আর ব্লাড প্রেশারের ওষুধ চলে। এ ছাড়া তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা নেই। তবে উঠতে বসতে একটু সাহায্য লাগে।
ছোট ছেলে গৌতম ও সোমাই তাঁকে সোজা করে বসিয়ে দিয়েছেন বিছানায়। সোমা বলেন, “কোভিডের পর দুর্বলতার জন্য সন্ধ্যার পর থেকে একটু বেশিই ঘুমাচ্ছেন মা। আগে তো একাই নিজের সব কাজ করতেন। এমনকি রান্নার কাজেও সাহায্য করার চেষ্টা করতেন।” বড় ছেলে সোমনাথ জানান, গত ২১ জুন কাদম্বরীর জ্বর এসেছিল। সেই জ্বর ছাড়ছিল না, সেই সঙ্গে খাবারে অনীহা। দিন পাঁচেকেও জ্বর কমে না। ইতিমধ্যে সোমনাথের বড় ছেলে অনীকেরও জ্বর আসে, সেই সঙ্গে কাশি। ২৮ তারিখ দু’জনেরই কোভিড পরীক্ষা হয়। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করে দেখা যায় কোভিড পজ়িটিভ। বিকেলে সিটি স্ক্যান করা হয়। তার পর বাড়ি। অনীকেরও করোনা ধরা পড়ে।
এক পর কয়েক দিন কাদম্বরীর জ্বর ছাড়ছিল না, সঙ্গে হালকা কাশি। আর ভীষণ দুর্বলতা। বারবার অক্সিমিটারে অক্সিজেন মাপা, সকালে স্নান করানো, খাওয়ানো, সব গৌতম-সোমারা করে গিয়েছেন ঘড়ির কাঁটা ধরে। নিজেদের আক্রান্ত হওয়ার ভয় উপেক্ষা করেই। দিন সাতেক পর হঠাৎ অক্সিজেনের মাত্রা কমে ৮৮ হয়ে যায়। অক্সিজেন সিলিন্ডার আসে। দিন কয়েক টানা অক্সিজেন চলে। সেই সঙ্গে স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন। আস্তে আস্তে জ্বর কমে। অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে ৯৫। খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ে।
কাদম্বরীর চিকিৎসক অমলচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “ওঁকে প্রথম যখন দেখি তখন অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। এখন উনি সুস্থ। তবে কোভিড পরবর্তী নানা সমস্যা থেকে সতর্ক থাকতে হবে।” আর সোমনাথ বলছেন, “মা আপাতত সুস্থ হয়ে উঠেছেন, এটাই আমাদের সবচয়ে বড় প্রাপ্তি।”