(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উত্তম বারিক (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনে হারের পরেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জন্য দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ‘বাঘের বাচ্চা’ বলে বাহবা দিয়েছিলেন। সোমবার সেই উত্তম বারিক-ই মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েন। এর পর ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও নিজেকে খানিকটা গুটিয়ে নিয়েছেন পটাশপুরের বিধায়ক তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক। মঙ্গলবার কোলাঘাটে দলীয় বৈঠকেও প্রায় সারাক্ষণ 'চুপ' ছিলেন উত্তম।
সোমবার বিধানসভায় নিজের ঘরে পূর্ব মেদিনীপুরের ৯ জন দলীয় বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি নির্দেশ দেন, বিরোধ মিটিয়ো কাঁথি এবং তমলুক—দুই সাংগঠনিক জেলার সমস্ত পদাধিকারীদের নিয়ে কোলাঘাটে বৈঠক করতে হবে এবং কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন নিয়ে দলীয়ভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে হবে।
ওই বৈঠকেই আয়ের উৎস নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়তে হয় উত্তমকে। তারপর মঙ্গলবার দুপুরে দিঘা এসে পৌঁছন মমতা। এ দিন হেলিপ্যাডে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন তমলুক আর কাঁথি সংগঠনিক জেলার তৃণমূলের সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পীযূষ কান্তি পণ্ডা। হাজির ছিলেন যুব তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি। কিন্তু উত্তম বারিক এবং অখিল গিরিকেদেখা যায়নি।
দলীয় সূত্রের খবর, সে সময় তাঁরা দুজনেই কাঁথি থেকে চলে যান কোলাঘাট। সেখানে তৃণমূলের দুই রাজ্য কমিটির নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আশিস চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে শুরু হয় কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের দলীয় প্রার্থী তালিকা তৈরির বৈঠক। সেখানে আগাগোড়া উত্তম কার্যত ‘মৌন ব্রত’ নিয়ে ছিলেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। প্রার্থী তালিকা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের তরফে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি সম্মতি জানান। ব্যস এইটুকুই। এরপর অখিল এবং উত্তমকে সঙ্গে রেখে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন রাজীব এবং আশিস।
জেলার এক বিধায়ক বলছেন, ভরা বৈঠকে এ দিন উত্তমের সঙ্গে খানিক খুনসুটিও করেন অখিল। তাঁকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন যেহেতু দু’টি সাংগঠনিক জেলা মিলিয়ে তাই এই নির্বাচনের যাবতীয় আর্থিক দায়দায়িত্ব উত্তম নিক বলে জানান অখিল। পাল্টা উত্তম সংক্ষেপে বলেন, ‘‘যেখানে যা প্রয়োজন লাগবে নিশ্চিত পাশে থাকব।’’ যদিও এ দিনের বৈঠকে উত্তম-ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের জেলা সভাপতি পীযূষ কান্তি পণ্ডার সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছেন অখিল। কাঁথির একটি কেন্দ্রে দলের ব্লক সভাপতির পছন্দের প্রার্থী তালিকা বাতিল করার প্রস্তাব দেন অখিল। তাতেই রেগে যান জেলা সভাপতি। দুজনের মধ্যে চলে তুমুল তর্ক। পরে রাজ্য নেতৃত্ব এবং দলীয় বিধায়কদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ বিষয়ে তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিস চক্রবর্তী বলেন,"দলের বৈঠকে সকলেই ঐক্যমত পোষণ করেছেন। ঘোষিত প্রার্থী তালিকা নিয়ে বুধবার থেকে প্রচার হবে।’’