দলে দলে মানুষ ভিড় জমিয়েছেন সমুদ্রসৈকতে। —নিজস্ব চিত্র।
দিন কয়েক ধরেই সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া। দফায় দফায় সতর্কতা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। তবু এর মধ্যেও পর্যটকদের ভিড় কমছে না দিঘায়!
বিগত বেশ কিছু দিন ধরেই লাগাতার বৃষ্টি হয়ে চলেছে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। বাদ যায়নি দিঘা-সহ উপকূলবর্তী এলাকাও। ঝোড়ো হাওয়ার দাপটের পাশাপাশি একটানা অঝোর বৃষ্টির জেরে উত্তাল হয়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। আর সমুদ্রের এই রুদ্র রূপ দেখতেই দিঘায় দলে দলে ভিড় জমিয়েছেন পর্যটকেরা। ভরা জোয়ারের সময়টুকু বাদ দিয়ে পুরোদমে চলছে সমুদ্রস্নান।
এমনিতেই গত কয়েক সপ্তাহে দিঘা সহ পার্শ্ববর্তী সমুদ্রসৈকতে একের পর এক দুর্ঘটনায় বেশ কিছু পর্যটকের মৃত্যুতে নাজেহাল স্থানীয় প্রশাসন। তাই এই পরিস্থিতিতে সমুদ্র স্নানে নামা পর্যটকদের উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। লাগাতার মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে সতর্কবার্তা। পর্যটকদের গভীর সমুদ্রে যাওয়া নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কেউ যাতে বেশি দূরে না যান, সে জন্য নজরদারি চালাতে নামানো হয়েছে স্পিডবোটও।
দিঘা হোটেল ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহে দিঘায় দলে দলে ভিড় জমিয়েছেন পর্যটকেরা। সপ্তাহান্তে সেই ভিড়ের পরিমাণ আরও খানিক বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেউ যাতে উত্তাল সমুদ্রে স্নান করতে নেমে দুর্ঘটনা না ঘটান, তা নিশ্চিত করতে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে প্রশাসনের। সমুদ্রতটে কড়া নজরদারি জারি রেখেছে পুলিশ এবং নুলিয়া বাহিনী। সজাগ রয়েছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরাও।
এর মধ্যেই সমুদ্রের বিপদসীমা চিহ্নিত করতে জলের বিভিন্ন জায়গায় পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিঘা থানা সূত্রে খবর, সমুদ্রতটের যে যে জায়গায় একাধিক পর্যটক স্নান করছেন, সেই এলাকাগুলিতে স্পিডবোটের সাহায্যে চালানো হচ্ছে টহলদারি। মদ্যপান করে কেউ যাতে সমুদ্রে না নামেন, তা নিয়ে বার বার কড়া সতর্কতা জারি করেছে পুলিশ- প্রশাসন। কাউকে মত্ত অবস্থায় জলে নামতে দেখলেই আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে উত্তাল হয়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। সে কারণেই জোয়ারের সময় কোনও পর্যটক যাতে জলে না নামেন, সে দিকে খেয়াল রাখতে আরও কড়া হয়েছে নজরদারি। এমনকি ভাটার সময়েও কেউ কোমরজল পর্যন্ত এগোলেই দ্রুত পারে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে তাঁদের। পাশাপাশি, সতর্ক করা হয়েছে মৎস্যজীবীদেরও। আগামী কয়েক দিনের জন্য মাছ ধরার ক্ষেত্রে আরোপ হয়েছে নানা বিধিনিষেধ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, দিঘায় দুর্ঘটনা এড়াতে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ, নুলিয়া, সিভিক ভলান্টিয়ার এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীকে নিযুক্ত করা হয়েছে। খারাপ আবহাওয়া, তবুও কমছে না পর্যটকদের উৎসাহ। পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবার লাঠি হাতে সমুদ্রসৈকতে টহল দিতে নেমেছেন দিঘা থানার ওসি স্বয়ং! পর্যটকদের সাবধান করতে কিছু ক্ষণ অন্তর মাইকে সতর্কবার্তা ঘোষণা করা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী কয়েক দিন এ ভাবেই নজরদারি চলবে। প্রসঙ্গত, শুধুমাত্র গত ১৫ দিনেই দিঘা, মন্দারমণি এবং শঙ্করপুরে সমুদ্রে তলিয়ে গিয়ে ছয় পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। গত এক মাসে মৃত্যু হয়েছে দশ জনের। তাই আর যাতে কোনও প্রাণহানি না ঘটে, সে জন্য এ বার আগে থেকেই সব রকম সতর্কতা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।