পাঁশকুড়ার বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র এবং স্ত্রী, তৃণমূল নেত্রী সুমনা মহাপাত্র। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা নিয়ে আলোড়ন রাজ্য রাজনীতিতে। এ নিয়ে বিভিন্ন পোস্টে ছয়লাপ সমাজমাধ্যম। উঠছে মনগড়া এবং ভুয়ো তথ্য দিয়ে ‘লাইক’, ‘শেয়ার’ পাওয়ার প্রতিযোগিতার অভিযোগও। এই প্রেক্ষিতে তাঁর চিকিৎসক ছেলেকে নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ করে কেঁদেই ফেললেন তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। মঙ্গলবার সস্ত্রীক সাংবাদিক বৈঠক করে সৌমেন আশঙ্কা করেছেন, যে ভাবে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে তাঁর পরিবারের উপর হামলাও হতে পারে।
‘আরজি কর-কাণ্ডে জড়িত তৃণমূলের এক প্রভাবশালীর পুত্র’— এই মর্মে একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। পদবির সঙ্গে মিলিয়ে সেই চিকিৎসক প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেনের পুত্র বলে দাবি করেন কেউ কেউ। লাগাতার এই রকম পোস্টে ‘বিদ্ধ’ হয়ে মঙ্গলবার বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করেন সৌমেন এবং তাঁর স্ত্রী, পাঁশকুড়া পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর সুমনা মহাপাত্র। সৌমেন প্রথমেই জানিয়ে দেন, যে ব্যক্তির ছবি-নাম দিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে, তিনি তাঁর পুত্র নন। তাঁর পুত্রও চিকিৎসক। তবে তিনি এখন পাঁশকুড়াতেই কর্মরত। সৌমেন নিজেও চিকিৎসক। তাঁর কথায়, “আমার ছেলে চিকিৎসক বোধিসত্ত্ব মহাপাত্র ২০১৭ সালে ডাক্তারি পড়া শেষ করেছে। বর্তমানে পাঁশকুড়ার পাঁশকুড়া-১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ হিসাবে সে কর্মরত। তার পরেও ভুয়ো পোস্ট ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই কাজ করা হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে।” তৃণমূল বিধায়কের এ-ও অভিযোগ, এই কাণ্ডের নেপথ্যে বিরোধী নয়, তাঁর দলেরই একটি অংশ জড়িত থাকতে পারে।
তিনি জানান, গত শুক্রবার আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সমাজমাধ্যমে এক যুবকের ছবি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের ছেলে। তার পর থেকে লাগাতার ফোন আসা শুরু হয়েছে। সবাই এ নিয়ে জানতে চাইছেন। সৌমেনের স্ত্রী, তৃণমূল নেত্রী সুমনা বলেন, ‘‘আমার পুত্রবধূ গর্ভবতী। যে দিন এই ঘটনা ঘটেছে, সেই দিন আমার ছেলে বোধিসত্ত্ব বৌমাকে নিয়ে কলকাতার একটি হাসপাতালে ইউএসজি করাতে গিয়েছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দলেরই অনেকে আমাদের দীর্ঘ দিন ধরে টেনে নামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এ ভাবে মানুষকে ছোট করা যায় না।’’
গোটা ঘটনায় আতঙ্কিত মন্ত্রী সৌমেন। তিনি বলেন, “আমি তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলে। নিজের বেতন থেকে সব কিছুই দলের জন্য উৎসর্গ করেছি। সেই আমাকেই কালিমালিপ্ত করতে আরজি কর-কাণ্ডের সঙ্গে আমার ছেলের ভুয়ো ছবি এবং নাম ব্যবহার করে একাধিক পোস্ট করা হচ্ছে।’’ তার পর দলের একাংশের দিকে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “আমি জানতাম কাক কাকের মাংস খায় না। কিন্তু, এখানে এমন কেউ আছেন, যাঁরা আমার পিছনে ছুরি মারতে চাইছেন। আমার পরিবারকে টেনে রাস্তায় নামাতে চেষ্টা করছেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সমাজমাধ্যমে ভুয়ো পোস্টের জেরে আমাদের পরিবারের উপর হামলা হতে পারে।’’ যদিও এ নিয়ে পুলিশে কোনও অভিযোগ জানাননি বিধায়ক। কারণ কী? সৌমেন বলেন, “এই নিয়ে আমি পুলিশে কোনও অভিযোগ জানাতে চাই না। দলনেত্রীর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) উপর আমার আস্থা অমলিন। আশা করি, তিনিই এই সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন।”