ঘরে ফেরার পরে/১এক যুগ জেলবন্দি ছত্রধর মাহাতো ঘরে ফিরেছেন। তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী? তা কি মোড় ঘোরাবে জঙ্গলমহলের রাজনীতিরও?
Chhatradhar Mahato

অতীত আঁকড়ে অস্তিত্বের লড়াই

পরিস্থিতিতে ছত্রধরের সামনে এখন নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে পুরনো সঙ্গীরাই তাঁর ভরসা।

Advertisement
কিংশুক গুপ্ত
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:২৬
আমলিয়া গ্রামে বাড়ির ছাদে পুরনো সঙ্গী ও অনুগামীদের নিয়ে বৈঠকে ছত্রধর মাহাতো।

আমলিয়া গ্রামে বাড়ির ছাদে পুরনো সঙ্গী ও অনুগামীদের নিয়ে বৈঠকে ছত্রধর মাহাতো। নিজস্ব চিত্র।

পুরনো জঙ্গলমহল আর নেই। ফিকে হয়েছে তাঁর স্মৃতিও। তবে এক যুগ জেলবন্দি থাকার পরে লালগড়ে ফিরে সেই অতীতই উস্কে দিতে চাইছেন ছত্রধর মাহাতো।

Advertisement

মাওবাদী নাশকতায় জঙ্গলমহল যখন রক্তাক্ত, তখন পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটির মুখপাত্র ছিলেন ছত্রধর। রাজ্যে পালাবদলের পরে তিনি তৃণমূলে নাম লেখান। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদকও হয়েছিলেন। তবে সেই পদ আর নেই। সম্প্রতি এনআইএ মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে লালগড়ের আমলিয়া গ্রামের বাড়িতে ফেরার পরে বর্তমান ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূল নেতৃত্বও তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন।

এই পরিস্থিতিতে ছত্রধরের সামনে এখন নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে পুরনো সঙ্গীরাই তাঁর ভরসা। ছত্রধর ইতিমধ্যে পুরনো সঙ্গীসাথীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বাম আমলে দায়ের হওয়া যাবতীয় মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। তাঁর যে সব সঙ্গী এখনও পুনর্বাসন প্যাকেজ ও সরকারি চাকরি পাননি, তাঁদের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ছত্রধর। পাশাপাশি অধিকার আদায়ে গ্রামে গ্রামে ‘আপনা গাঁও, আপনা রাজ’ কমিটি গঠনের ডাক দিয়েছেন।

আমলিয়া গ্রামের ঢোকার মুখে লালগড়-রামগড় পিচ রাস্তার ধারে ছত্রধরের বাড়ির সামনে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে সার দেওয়া বাইক, গাড়ি। একতলা বাড়ির ছাদে বসে পুরনো সঙ্গীদের নানা সমস্যা শুনছেন ছত্রধর। বলছেন, ‘‘নেতাই যদি শহিদের মর্যাদা পায়, তাহলে ২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খাসজঙ্গলে যাঁদের মৃত্যু হয়েছিল, তাঁরা কেন শহিদের মর্যাদা পাবেন না?’’ উল্লেখ্য, খাসজঙ্গলে মৃতদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে ছত্রধরের সঙ্গে ট্র্যাক্টরের উপর সভা করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঝাড়গ্রামের টুটুহা গ্রামের উত্তম মাহাতোর মতো কয়েকজন ছত্রধরের আন্দোলনের প্রাক্তনী। তাঁরা বলছিলেন, ‘‘জেল খেটেও প্যাকেজ-চাকরি কিছুই জুটল না।’’ খাতায় প্রত্যেকের নাম ও সমস্যার বিবরণ লিখছিলেন ছত্রধরের এক অনুগামী। বোঝা গেল, পুরনো এই সব ক্ষোভ পুঁজি করেই নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব জানান দিতে চাইছেন ছত্রধর। সামনে বিধানসভা ভোট। তার আগে প্রত্যাবর্তনের ছত্রধরকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি কী ভাবে ব্যবহার করবে, সেই প্রশ্ন জঙ্গলমহলে ঘুরছে।

সূত্রের খবর, জল মাপছেন ছত্রধরও। তবে তৃণমূলের শীর্ষস্তর থেকে চূড়ান্ত সঙ্কেত না পেলে তিনি বিরোধীদের হাত ধরবেন না বলে ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়ে দিয়েছেন। আর সামনে শুধু বলছেন, ‘‘আপাতত মানুষের সমস্যা মেটাতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’’

Advertisement
আরও পড়ুন