Kurmi Society

পুরনো মামলায় দু’জন গ্রেফতার, সরব কুড়মিরা

সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটের আগে একাধিক কুড়মি সংগঠন ফের একজোট হয়ে জাতিসত্তার দাবিতে সরব হতে পারে। তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে অস্বস্তিও বাড়ছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৯
Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

লোকসভা নির্বাচন দোরগোড়ায়। তার আগে কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলির সুর চড়ানোয় শুরু হয়েছে জল্পনা। সোমবার পুরনো মামলায় কুড়মি আন্দোলনের দুই কর্মী গ্রেফতারের পরই সরব কুড়মি নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, লোকসভা ভোটের আগে ভুয়ো অভিযোগে মামলা রুজু করে কুড়মি আন্দোলনের কর্মীদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে।

Advertisement

সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটের আগে একাধিক কুড়মি সংগঠন ফের একজোট হয়ে জাতিসত্তার দাবিতে সরব হতে পারে। তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে অস্বস্তিও বাড়ছে। ১০ মার্চ পুরুলিয়ার হুলহুলির টাঁইড়ে কুড়মালি উজ্জীবন মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে অজিতপ্রসাদ মাহাতোর নেতৃত্বাধীন আদিবাসী কুড়মি সমাজ। ৫ এপ্রিল চুয়াড় বিদ্রোহের শহিদ রঘুনাথ মাহাতোর মৃত্যুদিনে ঝাড়গ্রামের গড়শালবনিতে হবে দৌওদিয়াকে খৌওসিয়া কমিটির সমাবেশ। কুড়মি সংগঠনগুলি ক্ষোভ, তাদের জনজাতি তালিকাভুক্তির স্বপক্ষে রাজ্য উপযুক্ত তথ্য সম্বলিত সিআরআই (কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠাতে গড়িমসি করছে। এরই মধ্যে অনুপ মাহাতোর নেতৃত্বাধীন আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজ ১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতার রানি রাসমণি রোডে অবস্থান ও নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে।

অনুপের ওই কর্মসূচি নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন একাংশ কুড়মি নেতা। দৌওদিয়াকে খৌওসিয়া কমিটির মুখপাত্র তথা কুড়মি সমাজের (পশ্চিমবঙ্গ) রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাতো বলছেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর আছে, কুড়মি ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় লোকদেখানো কর্মসূচির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে নেগাচারীরা দাবি আদায় করতে পারলে বুঝব ওই কর্মসূচি সঠিক।’’ অনুপের সংগঠনটিও দৌওদিয়াকে খৌওসিয়া কমিটিভুক্ত। তবে গত কয়েক মাসে কমিটি থেকে তিনি সরে এসেছেন। অনুপের দাবি, ‘‘কেউ কেউ আমাদের তৃণমূলি সাজানোর কৌশল করছেন। অথচ রাজেশই দিন কয়েক আগে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে জামবনিতে বৈঠক করছেন।’’ রাজেশ পাল্টা বলছেন, ‘‘সম্পূর্ণ মিথ্যাচার।’’

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জাতিসত্তার দাবিকে সামনে রেখেই নির্দল হিসেবে লড়েছিল কুড়মিরা। ঝাড়গ্রাম জেলার ৭৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টিতে তারা বোর্ড গড়েছে। রাজেশের অভিযোগ, শাসক দল নানা প্রলোভনে ও ভয় দেখিয়ে কুড়মি জনপ্রতিনিধিদের দলে টানতে চাইছে। সোমবার ঝাড়গ্রাম ব্লকের দুধকুণ্ডি থেকে কুড়মি সংগঠনের দু’জন গ্রেফতারের পর সুর চড়িয়েছেন রাজেশ, অজিতপ্রসাদরা। অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলছেন, ‘‘ভুয়ো অভিযোগে মামলা দায়ের করে কুড়মিদের আন্দোলন দমনের চেষ্টা হচ্ছে। অগস্টের ঘটনা। আর পুলিশ ধরপাকড় শুরু করেছে লোকসভা ভোটের আগে।’’

গত বছর ১২ অগস্ট দুধকুণ্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতে কুড়মিরা বোর্ড গঠনের পরে সামাজিক সংগঠনের হলুদ পতাকা নিয়ে ৪৯ নম্বর জাতীয় সড়কে মিছিল হয়েছিল। বালিভাসা টোল প্লাজ়ায় কুড়মিরা হলুদ পতাকা লাগাতে গেলে তৃণমূলের সঙ্গে গোলমাল হয়। টোলপ্লাজা ভাঙচুরও হয়। সেই ঘটনার দুই অভিযুক্ত বরাশুলি গ্রামের মিহির মাহাতো ও ইন্দখাড়ার ভীম মাহাতোকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম আদালতে তোলা হলে দু’দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। পুলিশ সূত্রের দাবি, অভিযোগ দায়েরের পর অভিযুক্তদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬০ ধারায় নোটিস পাঠিয়ে মানিকপাড়া পুলিশ বিট হাউসে তলব করা হয়েছিল। অভিযুক্তরা তদন্তে সহযোগিতা করেননি। সরকারি আইনজীবী অনিল মণ্ডল বলেন, ‘‘খুনের চেষ্টা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, জাতীয় সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মত অভিযোগ থাকায় তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।’’

জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতো বলছেন, ‘‘ভয়ভীতি, প্রলোভন দেখানোর অভিযোগ মিথ্যা। জঙ্গলমহলের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের সঙ্গে আছেন। আইন আইনের পথে চলবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement