ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানতে দিন দিন কমছে সুদের হার। একই অবস্থা রেকারিং ডিপোজ়িটেও। আর তাই মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিতে আমজনতার বাড়ছে আগ্রহ। বাজার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই তহবিলে টাকা রাখলে মোটা অর্থ লাভের সুযোগ রয়েছে বলেই মনে করেন অনেকে। এর গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির এটাই মূল কারণ বলেও মনে করা হয়।
কিন্তু সমস্যা হল, মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিকারীদের অনেকেরই এই তহবিল সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই। প্রথম বার বিনিয়োগকারীদের একটা বড় অংশ আবার না জেনেই মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখেন। ফলে তাঁদের লোকসানের মুখ দেখতে হতে পারে। যা নিয়ে বিশেষজ্ঞেরা দিয়েছেন সতর্কবার্তা।
মিউচুয়াল ফান্ডের দু’রকমের তহবিল রয়েছে। একটি হল, অ্যাক্টিভ। অপরটির নাম প্যাসিভ। বিনিয়োগের সময়ে এই দুই তহবিল সম্পর্কে লগ্নিকারীর স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। আর এটা জানা না থাকলে মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা না রাখাই ভাল।
অ্যাক্টিভ মিউচুয়াল ফান্ড একজন পেশাদার তহবিল ম্যানেজার দ্বারা পরিচালিত হয়। ওই ব্যক্তি নিয়মিত ভাবে বাজার বিশ্লেষণ করে লাভজনক শেয়ার, বন্ড ও অন্যান্য সিকিউরিটিজ়ে বিনিয়োগ করেন। বাজার থেকে বেশি মুনাফা তোলার চেষ্টা করেন অ্যাক্টিভ ফান্ডের তহবিল ম্যানেজার।
ফান্ড ম্যানেজার বাজার বিশ্লেষণ করে কোন স্টক বা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করা হবে, সেই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। অ্যাক্টিভ ফান্ডের ফি সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। একে ‘এক্সপেন্স রেশিয়ো’ বলা হয়। অধিক সক্রিয় পরিচালনার কারণে এই ফির পরিমাণ বেশি রাখা হয়।
বেশি মুনাফা দেওয়াই অ্যাক্টিভ ফান্ডের লক্ষ্য। ফলে এতে লগ্নি বেশি লাভজনক হতে পারে। অন্য দিকে, প্যাসিভ মিউচুয়াল ফান্ডে কোনও ব্যক্তির আলাদা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। এটি নির্দিষ্ট একটি মার্কেট ইনডেক্স মেনে চলে।
নির্দিষ্ট মার্কেট ইনডেক্স বলতে এ ক্ষেত্রে এস অ্যান্ড পি ৫০০ বা ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) সূচক নিফটিকে বোঝায়। এগুলির সঙ্গে মিল রেখে চলে প্যাসিভ মিউচুয়াল ফান্ড। ফলে বাজারের পারফরম্যান্সের উপর এই তহবিল থেকে মুনাফা পাওয়ার পরিমাণ নির্ভর করবে।
প্যাসিভ মিউচুয়াল ফান্ডে সুনির্দিষ্ট কোনও ম্যানেজার না থাকায় এর ফি খুব কম। এতে টাকার অঙ্ক শেয়ার বাজারের উত্থান-পতনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এখানে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের কোনও জায়গা নেই।
প্যাসিভ মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার থেকে বেশি মুনাফা তোলার কোনও লক্ষ্য থাকে না। এটি বাজারের সূচককে অনুসরণ করে চলে। সূচকের মতোই এতে লগ্নি করলে লাভ পেয়ে থাকেন গ্রাহক।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, অভিজ্ঞ লগ্নিকারীদের ক্ষেত্রে অ্যাক্টিভ ফান্ডে বিনিয়োগ বেশি লাভজনক হতে পারে। বাজারের ওঠানামা থেকে বেশি মুনাফা করতে চাইলে এই তহবিলকে ভাল বিকল্প বলেছেন তাঁরা।
তবে মনে রাখতে হবে অ্যাক্টিভ মিউচুয়াল ফান্ডে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি। এতে গ্রাহককে বেশি ফি দিতে হয়। ফান্ড ম্যানেজার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে লগ্নিকারীর টাকা ডুবতে পারে। আবার তাঁর মাস্টারস্ট্রোকে গ্রাহকের পকেট ভরার পুরো সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু যাঁরা কম ঝুঁকি নিয়ে এই তহবিলে লগ্নি করতে চাইছেন, তাঁদের জন্য সেরা বিকল্প হিসাবে প্যাসিভ ফান্ডের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞেরা। এতে দীর্ঘ সময় ধরে লগ্নির সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি একরকম নিশ্চিত রিটার্ন পাবেন গ্রাহক।
প্যাসিভ ফান্ডের দ্বিতীয় সুবিধা হল, এর ফি অনেকটাই কম। এটি বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মুনাফা দিয়ে থাকে। এই তহবিলে লম্বা সময়ের জন্য বিনিয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অ্যাক্টিভ ফান্ডে লগ্নির ক্ষেত্রে তহবিল ম্যানেজারের আগের পারফরম্যান্স বিচার করতে হবে। প্যাসিভ ফান্ডের ক্ষেত্রে সূচকের পারফরম্যান্স দীর্ঘ মেয়াদে কেমন তা বিচার করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, মোটা ফি উচ্চ মুনাফার পরিমাণ কমাতে পারে। আর তাই লম্বা সময়ের জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফি ও খরচের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
সবশেষে গ্রাহককে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা বিচার করতে বলেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। কারণ অ্যাক্টিভ ফান্ড বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও বেশি রিটার্নের সম্ভাবনা রয়েছে। প্যাসিভের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম ও দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল মুনাফার সুযোগ রয়েছে।
সব ছবি: সংগৃহীত।