মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলার পাশাপাশি রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলায় শুরু হচ্ছে ‘জয় জোহার’ মেলা। আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে এই মেলা হচ্ছে ঝাড়গ্রামের আটটি ব্লকেই।
সোমবার নবান্নে আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে জোর দিয়েছেন তিনি। এমনকি, আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার পর্যটনকে চাঙ্গা করার কথা বলেছেন। তবে কি বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী! চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।বিজেপির অভিযোগ, এ ভাবে আদিবাসীদের মন জয় করা যাবে না। আদিবাসী মানুষজন এখনও বঞ্চিত। আদিবাসীদের উন্নয়ন হয়নি। নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের পকেট ভরেছে।
আজ, বুধবার ও আগামী কাল বৃহস্পতিবার দু’দিন ধরে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি, লালগড়, জামবনি, সাঁকরাইল, গোপীবল্লভপুর-১, গোপীবল্লভপুর-২, নয়াগ্রাম ও ঝাড়গ্রাম ব্লকে মেলা হবে। জেলাস্তরীয় অনুষ্ঠানটি হবে জামবনি ব্লকের পড়িহাটি এলাকায়। এই মেলার জন্য শুধুমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলার ক্ষেত্রে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। জেলার প্রতিটি ব্লকে এই মেলা দু’দিন ধরে চলবে। মেলায় আদিবাসী সমাজের মানুষজনকে ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন দফতরের স্টল রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে মেডিক্যাল শিবির। তবে বিগত দিনের চেয়ে এ বার মেলায় থাকছে কিছু বাড়তি ব্যবস্থা। চাষিদের চাষের জন্য নানা জিনিসপত্র বিতরণ করা হবে। আবার প্রাণী সম্পদ দফতরের স্টল থেকে গবাদি পশুর জন্য খাবার বিলি হবে। মেলা চত্বরে পোস্ট অফিসের স্টল থেকে অ্যাকাউন্ট খোলা হবে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পড়ুয়াদের। মহিলা ফুটবল ম্যাচ, পুরুষ ক্রিকেট ম্যাচ হবে। উৎকর্ষ বাংলার উদ্যোগে ‘কেরিয়ার কাউন্সেলিং’য়ের ব্যবস্থা থাকবে। যাতে আদিবাসী ছেলেমেয়েরা ভোকেশনাল কোর্সের মাধ্যমে স্ব-নির্ভর হতে পারে। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের জেলা আধিকারিক পার্থ দে বলেন, ‘‘আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে জেলার আটটি ব্লকে জয় জোহার মেলা শুরু হয়েছে। দু’দিন ধরে চলবে। এ ছাড়াও নানা পরিষেবা বিতরণ করা হবে।’’
মূলত উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলের জেলাগুলির ব্লককেই চিহ্নিত করা হয়েছে জয় জোহার মেলার জন্য। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অধীনে থাকা ব্লকগুলিতেই এ ক্ষেত্রে ‘জয় জোহার মেলা’র আয়োজনের জন্য বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকারি সূত্রে খবর, ১৫টি জেলার মোট ১০২টি ব্লকে এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিগত ১১ বছরে আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য কী কী করেছে, তা তুলে ধরা হচ্ছে। আদিবাসীদের সুবিধার্থে রাজ্য সরকার কোন কোন প্রকল্প চালু করেছে তা প্রচার করা হবে। সঙ্গে সেই সব প্রকল্পের সুবিধা পেতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনকে কী করতে হবে, তা-ও বিস্তারিত ভাবে জানানো হবে। প্রতিটি জায়গায় সরকারি আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি ও আদিবাসী সংগঠনের মানুষজনেরা থাকবেন। একসময় জঙ্গলমহলে আদিবাসীদের সমর্থন চলে গিয়েছিল বিজেপি দিকে। তবে গত বিধানসভা নির্বাচনে তার অনেকটাই ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছিল শাসকদল তৃণমূল। গত লোকসভায় ঝাড়গ্রাম আসনটি পুনরুদ্ধার করেছে তারা।