Awas Yojana

সরকারি বাড়িতে ‘কাঁটা’ ফিলিং বালি

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যে আবাসের টাকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য। পূর্ব মেদিনীপুরে এই তালিকায় নাম রয়েছে অন্তত ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৬৭২ জনের।

Advertisement
দিগন্ত মান্না
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:১১
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে আবাস প্রকল্পের টাকা দেবে রাজ্য সরকার। তার পরেই শুরু হবে উপভোক্তার বাড়ি তৈরি। এই বাড়ি তৈরির সময় ভিত ভরাটের জন্য প্রয়োজন প্রচুর বালি (ফিলিং বালি)। পূর্ব মেদিনীপুরে একাধিক নদীতে পর্যাপ্ত ‘ফিলিং’ বালি থাকলেও সরকার অনুমোদিত কোনও খাদান না থাকায় বাড়ি তৈরি নিয়ে চিন্তায় উপভোক্তারা। তাই আবাসের টাকা দেওয়ার আগে জেলায় সরকার অনুমোদিত বালির খাদান চালু করার দাবি উঠেছে।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, আগে রাজ্যের প্রতিটি জেলার জেলাশাসকদের হাতে বালি খাদানের নিয়ন্ত্রণ ছিল। ফলে বালি পেতে খুব একটা ঝক্কি পোয়াতে হত না স্থানীয়দের। ২০২১ সালে রাজ্যে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের সমস্ত বালি খাদান পরিচালনার ভার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন’কে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে স্থানীয়ভাবে সরকারি অনুমতি নিয়ে খাদান চালুর বিষয়টি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। খাদান চালুর জন্য ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশনে’র অনুমতি পেতে অনেক ঝক্কি পোয়াতে হয় বলে অভিযোগ।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যে আবাসের টাকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য। পূর্ব মেদিনীপুরে এই তালিকায় নাম রয়েছে অন্তত ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৬৭২ জনের। এছাড়া, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে আবেদন জানিয়েও বাড়ি পেতে চলেছেন ১৭ হাজার ৩৯ জন উপভোক্তা। এদিকে, বাড়ি তৈরি করতে গেলে সরু দানার বালি অত্যন্ত জরুরি। বাড়ির ভিত ও পিলারকে ঢাকতে এই বালি ব্যবহার করা হয়। যার পোশাকি নাম ‘ফিলিং’ বালি। পূর্ব মেদিনীপুরে রূপনারায়ণ নদ, কংসাবতী এবং হলদি নদীতে পর্যাপ্ত ‘ফিলিং’ বালি রয়েছে। কিন্তু সেই বালি তোলার কোনও সরকারি অনুমতি নেই। ফলে বাড়ি তৈরির জন্য ‘ফিলিং’ বালির আকাল দেখা দিয়েছে।

কোলাঘাটে রূপনারায়ণ নদ থেকে অবৈধভাবে বালি তোলা হয়। সেই বালি একাধিক হাত হয়ে যখন গ্রাহকের কাছে পৌঁছয়, তার দাম অগ্নিমূল্য হয়। কোলাঘাট থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ১০০ ঘন ফুট (সিএফটি) বালির দাম পড়ে ৩ হাজার টাকা। পুলিশি ধরপাকড়ের কারণে সেই বালিও পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না বলে দাবি। আর হলদি নদীর বিভিন্ন জায়গায় থেকেও বেআইনিভাবে ফিলিং বালি তোলার অভিযোগ ওঠে।

কংসাবতী নদী পাঁশকুড়া ব্লক দিয়ে বয়ে গিয়েছে। নদীর প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশ জুড়ে প্রচুর বালি রয়েছে। সম্প্রতি ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন’ হলদিয়ার এক শিল্প গোষ্ঠীকে সেই বালির কিছু অংশ তোলার বরাত দিয়েছে কারখানা চত্বর ভরাটের জন্য। বাকি বালি সরকারি জল প্রকল্পের জন্য তোলা হবে বলে খবর।

জেলার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকার বাড়ি তৈরির টাকা দিলেও ফিলিং বালি না পেলে তাঁরা বাড়ি তৈরি করবেন কী ভাবে? কেনই বা সাধারণ মানুষের কথা ভেবে নিয়ম মেনে নদী থেকে বালি তোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না?

পাঁশকুড়ার রাধাবন গ্রামের লালু মাহাড় বলেন, ‘‘আবাসের তালিকায় নাম রয়েছে। কিন্তু বাড়ি তৈরির জন্য ফিলিং বালি পাওয়া যাচ্ছে না। চড়া দাম দিলে কিছু বালি মিলছে। কিন্তু প্রয়োজন মতো বালি পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার খাদানের না অনুমতি দিলে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় বাড়ি তৈরি করা যাবে না।’’ এ নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা ভাঙন প্রতিরোধ কমিটি জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছে।’’

এ ব্যাপারে জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) বৈধব চৌধুরী বলেন, ‘‘চার-পাঁচটি নদী থেকে বালি তোলার জন্য ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে জেলাশাসক শীঘ্রই একটি বৈঠক করবেন।’’

আরও পড়ুন
Advertisement