বাঁ দিকে নন্দীগ্রামের চিল্লগ্রামে সিবিআই-এর প্রতিনিধি দল। ডান দিকে বিরুলিয়া বাজারে সিআইডি-র প্রতিনিধি দল। নিজস্ব চিত্র
একই দিনে নন্দীগ্রামে পা রাখল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) এবং রাজ্য গোয়েন্দা দফতর (সিআইডি)-এর প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার সিবিআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে যায়। নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের বহু এলাকা থেকে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ উঠেছিল। সেই এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন তদন্তকারীরা। অন্য দিকে, মঙ্গলবারই নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারে যান সিআইডি-র গোয়েন্দারা। গত ১০ মার্চ এই বিরুলিয়া বাজারেই পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই তদন্তে গিয়েছেন গোয়েন্দারা।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে এই নন্দীগ্রাম থেকেই ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিজেপি-র শুভেন্দু অধিকারী। প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনই বিরুলিয়া বাজারের কাছে মমতা পায়ে আঘাত পান। তার পর সেই ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় সিআইডি। অন্য দিকে, ভোট পরবর্তী হিংসা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তভার হাতে নিয়ে সিবিআই। গত কয়েক দিন ধরেই তারা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তদন্তের কাজে যাচ্ছে। এ বার দুই তদন্তকারী দলই একসঙ্গে দুই ভিন্ন উদ্দেশ্যে অভিযান চালাল নন্দীগ্রামে।
মঙ্গলবার সিবিআই প্রতিনিধিরা নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের কেন্দামারি, গোকুলনগর, মহম্মদপুর, চিল্লগ্রাম এলাকা পরিদর্শন করেন। ভোটের ফল ঘোষণার পরেই ওই এলাকাগুলিতে রাজনৈতিক সংঘর্ষের অভিযোগ ওঠে। বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গত ৩ মে হামলার জেরে চিল্লগ্রামের বাসিন্দা দেবব্রত মাইতি গুরুতর জখম হন বলে অভিযোগ। পরে তিনি মারা যান কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে পৌঁছে সিবিআইয়ের দলটি প্রথমে যায় দেবব্রতর বাড়িতে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। এর আগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর অভিযোগের ভিত্তিতে নন্দীগ্রাম পরিদর্শনে যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধি দলও।
সিআইডির গোয়েন্দারাও মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম দু’নম্বর ব্লকের বিরুলিয়া বাজারে যান। পায়ে আঘাত লাগার পর মমতা অভিযোগ করেছিলেন, ষড়যন্ত্র করে তাঁর উপর হামলা চালানো হয়েছে। দিন তিনেক আগেও সেই একই অভিযোগ করেন তিনি। সেই আবহে মঙ্গলবার বিরুলিয়ায় সিআইডি-র অভিযান তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সিআইডি-র গোয়েন্দারা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
সিবিআই প্রতিনিধি দলের নন্দীগ্রাম সফর নিয়ে ওই ব্লকেরই তৃণমূল নেতা স্বদেশ দাস বলেন, “নন্দীগ্রামে ভোটের আগের দিন বিজেপি-র নৃশংস হামলায় তৃণমূলের সদস্য রবীন মান্নার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাঁর বাড়িতে রাজ্যপাল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা কেউই যাননি। ভোট পরবর্তী হিংসায় ভেকুটিয়া এলাকায় তৃণমূলের লোকজনের বাড়িঘরে বিজেপি যে হামলা চালিয়েছে তারও কেউ তদন্ত করেনি। এর থেকেই পরিষ্কার, কাদের নির্দেশে ওঁরা কাজ করছেন।’’ স্বদেশের মন্তব্য, ‘‘আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের পক্ষে। সিবিআই-এর প্রতিনিধি দল কেন্দামারী গেল, কেন ভেকুটিয়া গেল না? এঁদের কাছে নিরপেক্ষতা আশা করতে পারছি না।’’
আবার বিরুলিয়ায় সিআইডি-র প্রতিনিধি দল যাওয়া নিয়ে বিজেপি-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি প্রলয় পাল বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই বলে এসেছেন, ওদের হাতে সিবিআই থাকলে আমাদের হাতে সিআইডি আছে। এখন হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই যখন ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে তদন্ত করতে নন্দীগ্রামে এল, ঠিক সেই দিনই বিরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর উপর হামলার তদন্ত করতে এল সিআইডি। এটা বিরোধীদের উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা বলেই আমাদের ধারণা।’’