Mamata Banerjee

পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীদের সব টিকিট তিনিই দেবেন, কালীঘাটে দলের বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা

কালীঘাটে দলের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক ও পদাধিকারীদের বৈঠকে এ দিন সংগঠন নিয়ে নিজের মত স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এখন থেকে সংগঠনের সাপ্তাহিক পর্যালোচনা করবেন নিজেই।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ০৪:৪৬
Picture of Mamata Banerjee.

পঞ্চায়েত ভোটে প্রস্তুতির বার্তা দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নির্বাচনের আগে দলের কাছে তাঁর ‘মুখ’ এখনও যে প্রধান শক্তি, তৃণমূল কংগ্রেসে তা সর্বজন স্বীকৃত। শুক্রবার সেই অস্ত্রেই পঞ্চায়েত ভোটে প্রস্তুতির বার্তা দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নও নিজেই দেবেন বলে এ দিন জানিয়েছেন তিনি।

কালীঘাটে দলের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক ও পদাধিকারীদের বৈঠকে এ দিন সংগঠন নিয়ে নিজের মত স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এখন থেকে সংগঠনের সাপ্তাহিক পর্যালোচনা করবেন নিজেই। প্রতি শুক্রবার কালীঘাটের অফিসে নেতাদের প্রয়োজন মতো ডেকে কথা বলবেন তিনি। দলে পুরনোদের সম্মান দেওযার কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের নেতৃত্বেও ‘সিলমোহর’ দিয়ে মমতা বলেন, ‘অনেকে বলে বেড়াচ্ছেন, মমতাদি না থাকলে দল করব না। তাঁরা কারা?’ তার পরেই তাঁর বার্তা, ‘তা-ই যদি হবে, তা হলে এত কষ্ট করে কেন দল করে দিয়ে যাচ্ছি! ইন্দিরা গান্ধী বা রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পরে কি কংগ্রেস উঠে গিয়েছে? যাঁরা এ কথা ভাবছেন, তাঁরা চাইলে চলে যান।’

Advertisement

রাজনীতিতে ছাত্র-যুবদের বরাবরই বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে মমতা। তবে তাঁদের ভূমিকা কী হবে, সে সম্পর্কে এ দিন নিজের মত জানিয়ে মমতা বলেন, ‘এখনই কেউ টিকিট চাইবেন না। আরও কাজ করুন। অভিজ্ঞতা হোক, তারপর।’ দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে ছাত্রযুবদের তৃণমূলের রাজনৈতিক অতীতের পাঠ দিতেও বলেছেন তিনি। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে দলের প্রার্থীবাছাই প্রক্রিয়া যে নিজের হাতে রাখছেন সে কথা জানিয়ে মমতা এ দিন বলেন, ‘জেলা সভাপতি, এমএলএ-রা কেউ কাউকে টিকিট দেবেন বলে কথা দেবেন না। সব টিকিট আমি দেব।’

সদ্যসমাপ্ত সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দলের পরাজয় বিশ্লেষণ করে সংখ্যালঘুদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, অন্তর্ঘাত এবং প্রার্থী নিয়ে যে ক্ষোভের কথা সামনে এসেছে, এ দিন সে সব সামনে রেখেই পঞ্চায়েতের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। বলেন, ‘নেতাদের অনেকে তো আগেই বলে দিয়েছিলেন তৃণমূল হারবে। ইদ্রিস আলি, আখরুজ্জামানের মতো নেতাদের নাম করে তাঁর মন্তব্য, ‘ট্রেনের মধ্যে আলোচনায় আমাকে, অভিষেককে গাল দিচ্ছেন। ‘শিওর’ বলে দিয়েছেন, কত ভোটে দল হারবে।’ সাগরদিঘির প্রার্থী নিয়ে দলের একাংশ যে প্রশ্ন তুলেছে, সে সম্পর্কে মমতা বলেন, ‘আমি তো সুব্রত সাহার (প্রয়াত দলীয় বিধায়ক) ছেলেকেই প্রার্থী করতাম। কিন্তু শুনলাম ব্যক্তিগত স্তরে কিছু অভিযোগ আছে তাঁর নামে। মামলাও আছে।’

এ দিনের বৈঠকে দলের সংখ্যালঘু সেলের মাথায় নতুন মুখ এনেছেন মমতা। হাজি নুরুলের বদলে এই দায়িত্বে এসেছেন ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেন। সেই সঙ্গেই এ দিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে দার্জিলিং-শিলিগুড়ি ও পূর্ব বর্ধমানের সঙ্গে নদিয়া, তাপস রায়কে দক্ষিণ দিনাজপুর ও মানস ভুঁইয়াকে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বীরভূমের দায়িত্ব কাউকে দেওয়ার কথা বলা হয়নি। মনে করা হচ্ছে, অনুব্রত মণ্ডলের জেলা আপাতত তৃণমূল নেত্রী নিজেই দেখবেন। সংখ্যালঘু-প্রধান মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার দায়িত্বে ছিলেন ফিরহাদ হাকিম। সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে হুগলির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শাসক দলের এ দিনের বৈঠকের চর্চা বাইরে আসতেই একযোগে আক্রমণ করেছে সিপিএম, বিজেপি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘দলটাই দুর্নীতিতে ডুবে। জেলা সভাপতিরা গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে ব্যস্ত। আগের মহাসচিব জেলে চলে গিয়েছেন। ভাইপোকে বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তার হাতে গেলে আরও কেলেঙ্কারি হবে, মুখ্যমন্ত্রী জানেন! কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাই নিজেই সব করবেন।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভাবছেন, পুরনোদের দায়িত্ব দিলে হয়তো দলের ভাঙন ঠেকানো যাবে কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। উনি এ ভাবে দল ধরে রাখতে পারবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement