(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসে ইডির তল্লাশি এবং তাদের কম্পিউটারে ফাইল ডাউনলোড করার প্রসঙ্গে মেয়ো রোডের জনসভা থেকে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজেই জানালেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বার্তা এসেছে তাঁর ফোনে। সেই প্রসঙ্গে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে একযোগে আক্রমণ করেছেন মমতা।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সোমবার মেয়ো রোডের জনসভায় হাজির হয়েছিলেন মমতা। সেখান থেকে তিনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে ‘প্রতিশোধপন্থী’ বলে কটাক্ষ করেন। অভিযোগ, তাঁর ফোনে অভিষেককে নিয়ে হুমকি বার্তা পাঠানো হয়েছে। মমতা বলেন, ‘‘এত প্রতিশোধপন্থী সরকার আমি আগে কখনও দেখিনি। সে দিন আমার ফোনে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। অভিষেককে নাকি ভোটের আগে গ্রেফতার করে নেবে।’’
এর পরেই লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রসঙ্গ উঠে আসে মমতার ভাষণে। তিনি বলেন, ‘‘ওদের কম্পিউটারে যা ছিল, নিয়ে নিয়েছে। কাউকে না জানিয়ে ইচ্ছামতো কাজ করেছে। বাইরে থেকে ফাইল ডাউনলোড করে কম্পিউটারে ঢুকিয়ে দিয়েছে।’’ ইডির উদ্দেশে মমতার বক্তব্য, ‘‘তোমরা যদি কম্পিউটারে ওস্তাদ হও, আমরাও ওস্তাদ। ঠিক তথ্যটি বার করে নিয়েছি। আমরা ঠিক বুঝতে পেরেছি, তোমরাই ওই ফাইল ডাউনলোড করেছো। তার পরে থানায় ডায়েরি করা হয়েছে। যিনি ডায়েরি করেছেন, তাঁকেও গ্রেফতার করে নেবে বলেছে। সকলকে গ্রেফতার করতে করতে একদিন জেলটা তোমাদের লোকেই ভরে যাবে।’’
গত সোমবার নিয়োগ মামলায় ধৃত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তিনটি এলাকায় তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি। আলিপুরে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস নামের একটি সংস্থার দফতরেও যান ইডি আধিকারিকেরা। এই সংস্থায় সুজয়কৃষ্ণ একসময় উচ্চ পদে কাজ করতেন বলে দাবি ইডির। সংস্থায় প্রায় ১৮ ঘণ্টা তল্লাশি চালানো হয়। ইডি চলে যাওয়ার পর সংস্থার এক কর্মী চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ইডি তাঁদের কম্পিউটারে ১৬টি অচেনা মাইক্রোসফ্ট এক্সেল ফাইল ডাউনলোড করে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের অফিসে যান লালবাজারের তদন্তকারীরা। দু’টি কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করা হয়।
এর পরেই ইডি লালবাজারে লিখিত ভাবে জানিয়েছিল, তাদের এক আধিকারিক তল্লাশি চালাতে গিয়ে সংস্থার কম্পিউটার থেকে নিজের কন্যার কলেজের হস্টেলের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। তা করতে গিয়ে কোনও ভাবে ওই ফাইলগুলি ডাউনলোড হয়ে গিয়ে থাকবে। তবে সংস্থার কর্মীদের উপস্থিতিতেই যা করার করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে তাদের অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল না বলে জানিয়েছে ইডি। তারা ওই সংস্থাতেও লিখিত ভাবে এ কথা জানিয়েছে।
সোমবার সুজয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এমন আরও দু’টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে একটি প্রকল্প এলাকা এবং লি রোডে সুজয়কৃষ্ণের মেয়ে এবং জামাইয়ের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। একযোগে তিন জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়। বিষ্ণুপুর এবং লি রোডে তল্লাশির কাজ শেষ হলেও আলিপুরের অফিসে তল্লাশি গড়ায় ভোর পর্যন্ত। ইডি সূত্রে খবর, সুজয়ের সংস্থা এসডি এন্টারপ্রাইজ়ের সঙ্গে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। ইডির চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ২০২০-২১ সালের মধ্যে সুজয়কৃষ্ণের এসডি এন্টারপ্রাইজ়ের সঙ্গে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের ৯৫ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে।
তল্লাশি অভিযানের পর লিখিত বিবৃতিতে ইডির দাবি, ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও) তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে লেখা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন অভিষেক। তিনি যে এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, মেয়ো রোডের সভা থেকে মমতা একপ্রকার তা নিশ্চিত করেই দিলেন। অভিষেক নিজেও সংস্থা সম্পর্কে একই কথা বলেছেন।