Anubrata Mandal

Madan-Anubrata: দল অনুব্রতকে যেতে না বললে পিজি থেকে ‘ইজি’ অসুস্থ লিখিয়ে নেওয়া যেত: মদন

গরুপাচার মামলায় ১০ বার অনুব্রতকে তলব করেছে সিবিআই। তার মধ্যে মাত্র এক বার তদন্তকারীদের মুখোমুখি হয়েছেন বীরভূমের ওই তৃণমূল নেতা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২২ ২২:১৮
অনুব্রত মণ্ডল ও মদন মিত্র

অনুব্রত মণ্ডল ও মদন মিত্র

দল চাইলে অনুব্রত মণ্ডল নিজেকে ‘অসুস্থ’ বলে লিখিয়েই নিতে পারতেন এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে। বৃহস্পতিবার অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর এমন মন্তব্যই করলেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র।

গরুপাচার মামলায় অনুব্রতকে ১০ বার ডেকে পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই)। তার মধ্যে মাত্র এক বার গিয়েছিলেন তিনি। শেষ যে দিন হাজিরা দেওয়ার জন্য তাঁকে নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠানো হয়, সে দিন অর্থাৎ গত সোমবারও তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাজিরা দেননি। বোলপুর থেকে আগের মতো গিয়েছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে। যেখানে এর আগে এক বার দীর্ঘ দিন ভর্তিও ছিলেন তিনি। যদিও সোমবার তাঁকে ভর্তি নেয়নি এসএসকেএম। চিকিৎসকদের একটি দল পরীক্ষানিরীক্ষা করে। তার পর ওই দলের একটা অংশ জানায়, ভর্তি করানোর কোনও প্রয়োজন নেই অনুব্রতকে। শেষমেশ ওই দিন বিকেলে বোলপুরের উদ্দেশেই রওনা দেন তিনি। এর পর বৃহস্পতিবার সকালেই তাঁর বাড়িতে সিবিআই পৌঁছয়। আটক করে নিয়ে যায়। পরে বিকেলে গ্রেফতার।

Advertisement

অনুব্রত যে তদন্তকারী সংস্থার মুখোমুখি হওয়ার ভয়েই অতীতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ফের হতে চেয়েছিলেন— সেই অভিযোগ তুলে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। কিন্তু মদনের দাবি, দল কখনওই অনুব্রতকে সিবিআই হাজিরা দিতে বারণ করেনি। দল যদি সত্যিই তা চাইত, তা হলে পিজি হাসপাতাল থেকে অনায়াসেই ‘অসুস্থ’ লিখিয়ে নিতে পারতেন অনুব্রত। বৃহস্পতিবার অনুব্রতের গ্রেফতারের পর মদনের এই মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়।

বিশেষ আদালত অনুব্রতকে ১০ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, অনুব্রত যদি এত বার সিবিআই হাজিরা না এড়াতেন, তা হলে কি এই পদক্ষেপ করতে চাইত তদন্তকারী সংস্থা? মদনের জবাব, ‘‘আমাকে সিবিআই-ইডি যত বার ডেকেছে, আমি গিয়েছি। সিবিআই কাউকে ডাকলে আমাদের দল কখনও কাউকে বলেনি যে, যাবেন না।’’ এর পরেই মদনের সংযোজন, ‘‘পার্টি যদি বলত, তা হলে পিজি হাসপাতাল থেকে একটা রিপোর্ট ইজি করে দেওয়া যেত। সেখানে তো পিজি বলেছে, অনুব্রত স্থিতিশীল। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাপারেও তো পিজি স্থিতিশীল বলেছে।’’

সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী তাঁর একটি নির্দেশনামায় জানিয়েছিলেন, যখনই সাম্প্রতিক কালে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে অথবা তদন্তকারী আধিকারিক বা সংস্থার সামনে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে, তাঁরা তখনই এসএসকেএম হাসপাতালের আশ্রয় নিয়েছেন। পিজি হাসপাতালকে প্রভাবশালীদের ‘আশ্রয়স্থল’ বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। এসএসসি ‘দুর্নীতি’-কাণ্ডেও রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সিবিআই হাজিরার নির্দেশ দেওয়ার সময় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, তদন্তকারীদের মুখোমুখি হওয়ার আগে পার্থ এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে গিয়ে ভর্তি হতে পারবেন না। পরে অবশ্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগে পার্থ গ্রেফতার হয়েছেন।

উচ্চ আদালতে এই পর্যবেক্ষণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ‘স্বস্তিজনক’ হওয়ার কথা ছিল না। সেই অস্বস্তি আরও জোরালো হয় এসএসকেএমে স্বাস্থ্য পরীক্ষারও পরেও এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে ধৃত পার্থকে ভুবনেশ্বর উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর। এমস কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, পার্থের শরীরে পুরনো কিছু সমস্যা থাকলেও তা তেমন মারাত্মক কিছু নয়। এ জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে না। ওই পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় সেখানে এসএসকেএমের চিকিৎসকেরাও ছিলেন।

ওই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়েছিল পূর্ব ভারতে চিকিৎসার ‘উৎকর্ষকেন্দ্র’ হিসাবে পরিচিত এসএসকেএম। ওই হাসপাতালে চিকিৎসকদের ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পিজি থেকে অনুব্রতকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর ওই প্রসঙ্গ টেনেই বিজেপির মু‌খপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের খামখেয়ালিপনার কারণেই হাসপাতালের গরিমা নষ্ট হচ্ছে। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেখানকার চিকিৎসকেরা নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং প্রতিষ্ঠানের মর্যাদার দিকে তাকিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’

এসএসকেএম হাসপাতালকে ‘দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল’ বলে আখ্যা করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই হাসপাতালকে নিয়ে হাই কোর্টের বিচারপতিদের মন্তব্য এবং বিরোধীদের কটাক্ষে জনমানসেও প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সেই আবহে মদনের মন্তব্য শাসকদলের অস্বস্তি আরও বাড়াবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement