আলাদা আলাদা দলে ভাগ হয়ে পুরো এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছে র্যাফবাহিনী। নিজস্ব চিত্র।
রাস্তা জুড়ে পড়ে রয়েছে কাঁদানে গ্যাসের খালি শেল। জায়গায় জায়গায় পড়ে রয়েছে ইট-পাথরের টুকরোও। বেশ কয়েকটি জায়গায় ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে চাপা গুঞ্জন। শিশু মৃত্যুর জেরে অগ্নিগর্ভ তিলজলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাফ নামাতেই থমথমে বন্ডেল গেট এবং পিকনিক গার্ডেনের বিস্তীর্ণ এলাকা। আলাদা আলাদা দলে ভাগ হয়ে পুরো এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছে র্যাফবাহিনী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারাও।
ইতিমধ্যেই স্বাভাবিক হয়েছে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ট্রেন চলাচলও। পুলিশি তৎপরতায় সরানো হয়েছে বালিগঞ্জের কাছে রেল লাইনে অবরোধ করা বিক্ষোভকারীদেরও। বন্ডেল গেট এবং পিকনিক গার্ডেন এলাকাও ফাঁকা করা হয়েছে।
তবে এখনও পরিস্থিতি উত্তপ্তই রয়েছে মৃত শিশুর বাড়ির সামনের এলাকা। সেখানে এখনও চাপা উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে সাধারণের মধ্যে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই শিশুর আবাসনের দু’টি আবাসন আগে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ওই শিশু আবাসনের ভিতরে ঢুকেছে। এর পর সে নিখোঁজ হয়। তাঁদের দাবি, অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ যদি সঠিক সময়ে পদক্ষেপ করত, তা হলে ওই শিশুর মৃত্যু হত না। পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, রবিবার রাতে থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর সময় তিলজলা এলাকার এক মহিলা-সহ একাধিক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মুক্তির দাবিতেও তাঁরা সরব হয়েছেন।
West Bengal | Locals protest against the State Government and Administration over the death of a 7-year-old girl, in Kolkata. pic.twitter.com/ia65jSDxBI
— ANI (@ANI) March 27, 2023
তিলজলায় শিশুকে মৃত্যুর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত অলোক কুমারকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সন্তান লাভের আশায় বিহারের এক তান্ত্রিকের কথা শুনে ওই ৭ বছরের শিশুকে খুন করেন নিঃসন্তান আলোক।
এই ঘটনারই প্রতিবাদে তিলজলায় সোমবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়েছে পরস্থিতি। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা বন্ডেল গেট এলাকায় যান চলাচল আটকে প্রতিবাদে সামিল হন। বালিগঞ্জে অবরোধ করে আটকে দেওয়া হয় ট্রেন চলাচলও। দুপুরে পরিস্থিতি সামলাতে আসা পুলিশের একটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই আগুন নেভাতে আসা দমকলের ইঞ্জিনেও ইট, পাটকেল ছোড়া হয়। অশান্ত হয়ে ওঠে বন্ডেল রোড এবং পিকনিক গার্ডেন এলাকা। এর পরই র্যাফ নামিয়ে ব্যাপক ধরপাকড় এবং লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এলাকায় মোতায়েন করা হয় প্রচুর পুলিশ। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটানো হয়।
এই পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ডিসি এসইডি শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে না এলে যৌন নির্যাতন হয়েছে না কি বোঝা যাবে না। আমাদের মৃতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা রয়েছে। ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। মূলত বহিরাগতরাই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমরা ভিডিয়ো দেখে তাঁদের খোঁজ চালাচ্ছি। এদের মধ্যে ৪ জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পরও কেন এই ভাঙচুর চলল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’