গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি করে চিকিৎসকের মৃত্যুরহস্য ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক তথ্য। তদন্তে পুলিশ ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছে, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ওই চিকিৎসককে। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘুমন্ত অবস্থাতেই ওই তরুণীর উপর হামলা করেন অভিযুক্ত। ধর্ষণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ওই তরুণীর উপর অত্যাচারও করা হয়। তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলেও তদন্তে উঠে আসছে।
শুক্রবার সকালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চার তলার সেমিনার হল থেকে কর্তব্যরত এক মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। ইতিমধ্যেই তাঁর দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে আরজি কর হাসপাতালে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট, ওই তরুণী চিকিৎসককে অত্যাচার করে খুন করা হয়েছে। সারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন মিলেছে। দু’চোখ বেয়ে রক্ত পড়তেও দেখা যায়। যৌনাঙ্গেও মিলেছে ক্ষতচিহ্ন। খুন এবং ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রুজু করে তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশ। বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে।
ঘটনার তদন্তে নেমে তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই এক জনকে গ্রেফতার করেছে। পেশায় তিনি সিভিক ভলান্টিয়ার। কী ভাবে শুক্রবার ভোরে সকলের চোখের আড়ালে অভিযুক্ত চার তলার সেমিনার হলে পৌঁছলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে পুলিশি তদন্তে একাধিক বিষয় প্রকাশ্যে আসছে। সেই সঙ্গে খুন এবং ধর্ষণের বিষয়টিও স্পষ্ট হচ্ছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, শুক্রবার ডিউটিতে ছিলেন ওই তরুণী। রাতে অন্যদের সঙ্গে টিভিতে অলিম্পিক্সে নীরজ চোপড়ার জ্যাভলিন থ্রো দেখেন তিনি। তার পর খাবার খেয়ে রাত আড়াইটে নাগাদ সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যান ওই চিকিৎসক। ১১টা নাগাদ বাড়িতে ফোনও করেছিলেন ওই চিকিৎসক। মৃতার মা জানান, ফোনে তাঁর মেয়ে বলেন খেয়ে নিতে। তিনি খাবার অনলাইনে অর্ডার করেছেন। খাবার খেয়ে সেমিনার হলে লাল রঙের কম্বল গায়ে জড়িয়ে মেঝেতে পাতা নীলরঙা কার্পেটেই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। ঘুমন্ত অবস্থাতেই তাঁর উপর হামলা করেন অভিযুক্ত।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সেমিনার হলে সিসিটিভি না থাকলেও ঘটনাস্থল এবং হাসপাতালের আশপাশের ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। সেই ফুটেজ দেখেই অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তকে ঘটনার রাতে দু’বার সেমিনার হলের বিল্ডিংয়ে ঢুকতে দেখা যায়। প্রথম বার বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ আরজি করে আসেন অভিযুক্ত যুবক। কিছু ক্ষণ পর বেরিয়ে আসেন। তার পর ৪টে নাগাদ আবারও সেই বিল্ডিংয়ে যান এবং ৩০-৩৫ মিনিট পর বেরিয়ে বাড়ি চলে যান। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই সময়ের মধ্যেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত যুবক ভোর ৪টে নাগাদ সোজা উপরে চার তলায় চলে যান। তার পর সেমিনার হলে ঢুকে ঘুমন্ত ওই চিকিৎসকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। আচমকা হামলায় যুবতীর তন্দ্রা কেটে যায়। তিনি বাঁচার চেষ্টা করেন। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। তার পর ধর্ষণ করে সেমিনার হল ছাড়ার সময় খুন করে পালান অভিযুক্ত। শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করা হয়েছে বলেই প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি তাঁরা এ-ও জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাওয়া গেলেই স্পষ্ট হবে বিষয়টি।
সিসিটিভি ফুটেজ থেকে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, অভিযুক্ত যখন ভোর ৪টে নাগাদ হাসপাতালের মধ্যে ঢোকেন তখন তাঁর গলায় একটি ব্লু-টুথ হেডফোন ছিল। সেখান থেকে বার হয়ে আসার সময় সেটা ছিল না। ঘটনাস্থলে ছেঁড়া ওই হেডফোনটি পাওয়া যায়। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, ভোরবেলায় অভিযুক্ত যখন হাসপাতালে ঢোকেন, তখন তিনি মত্ত অবস্থায় ছিলেন। ১১টার পর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বাইরে মদ খান তার পর ভোর ৪টে নাগাদ আবার ফিরে আসেন। ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে অভিযুক্ত সোজা বাড়ি চলে যান। ঘরে বসে আবার মদ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পুলিশ অভিযুক্তের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছে। সেই মোবাইল ঘেঁটে তাতে বেশ কিছু পর্নোগ্রাফির ভিডিয়ো পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। সেই সব সূত্র খতিয়ে দেখে অভিযুক্তের মানসিকতা বিচার করার চেষ্টায় পুলিশ।