—ফাইল চিত্র।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে যুবতী চিকিৎসক খুনের ঘটনায় ধৃত যুবককে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হল। শনিবার তাঁকে শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হয়।
শুক্রবার সকালে আরজি করের চার তলার সেমিনার হল থেকে এক যুবতী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করে। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেই অভিযুক্তের সন্ধান মিলেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। শনিবার দুপুরের পর শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হয় ধৃতকে। সেখানে সরকার পক্ষের আইনজীবী ঘটনার নৃশংসতা বোঝাতে দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন।
শনিবার আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবীর সওয়াল, ‘‘আরজি করের ঘটনা খুবই নৃশংস। দিল্লিতে নির্ভয়াকাণ্ডের সময় যা ঘটেছিল, এখানেও তেমন ইঙ্গিত মিলছে।’’ তদন্তের স্বার্থেই অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে আদালতে দাবি সরকার পক্ষের আইনজীবী। সেই দাবি মেনে নেন বিচারক। অন্য দিকে, অভিযুক্তের পক্ষ থেকে কোনও আইনজীবী শনিবার সওয়াল করেননি।
আরজি করের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। সরব হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা। যুবতী চিকিৎসক মৃত্যুর প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। সদস্যেরা জানিয়েছেন, বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে তদন্ত-সহ তাঁদের বাকি দাবি যত ক্ষণ পর্যন্ত মানা হবে না, তত ক্ষণ বন্ধ থাকবে কাজ। শনিবার সকাল থেকেই হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ দেখান জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুধু আরজি কর নয়, শহরের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসকেরাও কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় চিকিৎসা পরিষেবাতেও প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালেই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। কর্মবিরতিতে চিকিৎসকেরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, দোষীকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে।
ঘটনার পরেই তদন্তের আশ্বাস দিয়ে মৃতার বাবাকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার তদন্ত করছে। শুক্রবার রাত ২টো পর্যন্ত কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে তাঁর দফায় দফায় কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মমতা। পড়ুয়াদের ক্ষোভকেও সঙ্গত বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথার সূত্র ধরেই শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বলেছেন, ‘‘মৃতার পরিবার যদি চায় অন্য এজেন্সি তদন্ত করবে, তাতেও আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’
শনিবার সকাল থেকেই আরজি করকাণ্ডের প্রতিবাদে শহরে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভের ছবি দেখা যাচ্ছে। ‘দেশ বাঁচাও গণ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন পাঁচ দফা দাবি তুলেছে। দোষীদের গ্রেফতার করে বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার কথা জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় যা পদক্ষেপ করেছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন, তা সমর্থন করেছে ‘দেশ বাঁচাও গণ মঞ্চ’। তাদের দাবি, ‘‘ছাত্র-ছাত্রীদের এই আন্দোলনের ন্যায্যতা মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে সমর্থন করেছেন, সেটি আমরা ঠিক মনে করি।’’