ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে ব্যস্ততা সেচ দফতরে। নিজস্ব চিত্র।
সাত সকালেই ঢুকে পড়ছেন অফিসে। খাওয়া-দাওয়া সেখানেই। বেরোচ্ছেন কেউ রাত দুটোয়। কারও আবার রাত কাটছে টেবিলে থাকা ফাইল-দস্তাবেজ কিংবা খোলা থাকা কম্পিউটারের মনিটরে। ঘনঘন বেজে উঠছে ফোন। নানা তথ্য জানতে চাইছে কলকাতা সেচ ভবন অথবা প্রশাসনের শীর্ষ মহল।
ঘাটালকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে প্রস্তাবিত ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো গত বছর বর্ষার আগে থেকেই এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় নথি-সহ সংশ্লিষ্ট ‘স্কিম’গুলি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। চলেছিল ডিপিআর, নকশা-ডিজাইনের কাজও। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ফেব্রুয়ারিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই প্রকল্পের শিলান্যাস হওয়ার কথা। সেই সময় যত এগিয়ে আসছে, তত বাড়ছে ব্যস্ততা। ঘাটাল সেচ দফতরে এখন দিনরাত এক করে ওই প্রকল্পের কাজ করছেন আধিকারিক ও কর্মীরা।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নামটি সেই ষাটের দশক থেকেই শুনে আসছেন ঘাটালের মানুষ। এই প্রস্তাব রূপায়ণ হলে নাকি প্রায় প্রতি বছরের বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে ঘাটাল। নানা সময়ে এই প্রকল্প নিয়ে নানা কাটাছেঁড়া হয়েছে। বহু বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। টাকা বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনও চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই প্রকল্প রাজ্যের টাকায় করার ঘোষণা করতেই যেন নতুন করে প্রাণ পেয়েছে এই প্রকল্প। আর সেই প্রকল্প শিলান্যাসের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই যেন রাতের ঘুম উবে গিয়েছে সেচ দফতরের কর্মীদের।
জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের অধীনে থাকা ‘স্কিম’গুলি মূলত নদী-খাল কেন্দ্রিক। খাল খনন, সংস্কার, স্লুইস গেট, পাম্প হাউস তৈরি, নদী সংস্কার-সহ অনেক কাজ নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে সরকারি জমি দেখা, কোথায় কী কাজ হবে তার ডিপিআর তৈরি করা। এই সব কাজ চূড়ান্ত হলে তবেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। সবই কাজই হবে নকশা দেখে।
সেচ দফতরে সাধারণত বর্ষার সময় ছাড়া বাকি সময় কাজের চাপ ততটা থাকে না। প্রায় প্রতি বছরই বর্ষার সময়ে ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই সময়ে সেচ দফতরে রাতে আলো জ্বলতে দেখা যায়। বসানো হয় জেনারেটরও। এখন শীতকাল হলেও সেই ছবিই যেন ফিরে এসেছে। ঘাটাল সেচ দফতরের পদস্থ আধিকারিক থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হাতে সময় নেই কারওই। ব্যস্ত অস্থায়ী কর্মীরাও।
শেষ বর্ষার আগে থেকে শুরু হয়েছে এই ব্যস্ততা। বন্যা মিটতেই ঘাটালে ফাইলগুলি চূড়ান্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। এই ক’মাসে অনেকটা কাজই সারা। তবে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন বহু তথ্য এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কাল, ২১ জানুয়ারি রয়েছে ‘মনিটারিং কমিটির’ বৈঠক। সেই বৈঠকও হবে ঘাটালে।