Power Cut

মরুশহরকে টেক্কা দিয়ে রেকর্ড গড়ছে কলকাতার গরম, ‘রেকর্ড’ চাহিদা বিদ্যুতেরও! প্রশ্নে পরিষেবা

এ দিনও শহর এবং সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ-বিভ্রাট সংক্রান্ত পোস্টে ছেয়ে গিয়েছে সমাজমাধ্যম। অনেকেই দ্রুত প্রতিকার না পেলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৪৪

—প্রতীকী চিত্র।

এক দিকে, মরুশহরকে টেক্কা দিয়ে রেকর্ড গড়ছে কলকাতার গরম। অন্য দিকে, রেকর্ড তৈরি হচ্ছে বিদ্যুতের চাহিদাতেও! সূত্রের খবর, সিইএসসি এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা— দুই এলাকাতেই শুক্রবার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল সর্বকালীন চাহিদার নিরিখে শীর্ষে। এর পরেও অবশ্য সিইএসসি এবং বণ্টন সংস্থার কর্তারা বিদ্যুতের জোগানে ঘাটতি নেই বলে দাবি করেছেন। যদিও নাগরিকদের বড় অংশেরই অভিযোগ, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে প্রতিদিনই ভুগতে হচ্ছে তাঁদের। তীব্র গরমে যখন-তখন চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অন্ধকারে বসে ঘেমে স্নান করতে হচ্ছে। ‌সাহায্য চেয়ে ফোন করলেও সুরাহা মিলছে না। কখনও আবার সংস্থার কর্মীরা এসে সারিয়ে দিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি যে কে সে-ই!

Advertisement

শনিবার এই পরিস্থিতির বদল চেয়ে পথ অবরোধ করেন বেলগাছিয়া লাল ময়দান এলাকার বাসিন্দারা। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তাঁরা বেলগাছিয়া সেতুর কাছে মূল রাস্তায় বসে পড়েন। যার জেরে তীব্র যানজট তৈরি হয় ওই এলাকায়। পাশের আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বেগ পেতে হয় রোগী ও তাঁদের পরিজনদের। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ পুলিশ কোনও মতে বুঝিয়ে অবরোধ তোলে। মহম্মদ এতেশাম নামে এক অবরোধকারীর অভিযোগ, ‘‘গত তিন দিন ধরে যখন-তখন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে আমাদের এলাকায়। সিইএসসি-কে বার বার ফোন করেও লাভ হচ্ছে না।’’ তাঁর দাবি, গত বছরও একই অবস্থা হয়েছিল। সাধারণ মানুষ ভুগছেন দেখে রাজনৈতিক নেতারা এলাকায় একটি জেনারেটর রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও সিইএসসি-র টনক নড়েনি। এ বার কেউই আসেননি। তাই পথ অবরোধের রাস্তা নেওয়া হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টার পরে পুলিশি প্রহরায় ওই এলাকায় কাজ শুরু করেন সিইএসসি-র কর্মীরা।

শুধু ওই এলাকা নয়, এ দিনও শহর এবং সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ-বিভ্রাট সংক্রান্ত পোস্টে ছেয়ে গিয়েছে সমাজমাধ্যম। অনেকেই দ্রুত প্রতিকার না পেলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বেলগাছিয়া মিল্ক কলোনির এক বাসিন্দার আবার অভিযোগ, ‘‘আমার বয়স্ক মাকে দিনে চার বার নেবুলাইজ়ার নিতে হয়। বেলা ১১টায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। নেবুলাইজ়ারে দেওয়া ওষুধ তখন অর্ধেক ব্যবহার করা গিয়েছে। পরে যত ক্ষণে বিদ্যুৎ এসেছে, তখন আর নেবুলাইজ়ারের ওষুধ ব্যবহার করার সুযোগ ছিল না।’’ তাঁর প্রশ্ন, এই তীব্র গরমে সাধারণ নাগরিকদের যন্ত্রণা বুঝে কেন প্রশাসন সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না?

বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির কর্তারা যদিও দাবি করেছেন, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা (ডব্লিউবিএসইডিসিএল) এলাকায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় বিদ্যুতের মোট চাহিদা পৌঁছেছিল ৯৯৩৫ মেগাওয়াটে। যা সর্বকালীন রেকর্ড। গত বছর সর্বোচ্চ চাহিদা পৌঁছেছিল ৯২০০ মেগাওয়াটে। গত বারের ১৮ জুনের সেই চাহিদাকে এ বারের চাহিদা এপ্রিলের শেষেই ছাপিয়ে গিয়েছে। একই অবস্থা সিইএসসি-র ক্ষেত্রেও। সূত্রের খবর, শুক্রবার বিকেল ৩টে ১৫ মিনিটে সিইএসসি এলাকায় সর্বোচ্চ চাহিদা সর্বকালীন রেকর্ড তৈরি করে পৌঁছেছিল ২৭২৮ মেগাওয়াটে। গত বছর সিইএসসি এলাকায় সর্বোচ্চ চাহিদা তৈরি হয়েছিল ১৬ জুন, ২৬০৬ মেগাওয়াট। সংস্থার দাবি, এই পরিমাণ চাহিদা বৃদ্ধি ভাল ভাবেই সামলানো হচ্ছে। কোথাও কোথাও কিছু সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু সেগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

কিন্তু গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও যে বাড়বে, সে তো জানা কথাই। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কেন আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হল না? কেন এ বারও জায়গায় জায়গায় বাড়তি চাপের কারণে ট্রান্সফর্মার পুড়ে যাওয়ার বা যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনা ঘটছে?

সিইএসসি-র তরফে এই সব কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দেওয়া হয়নি এ দিন। সংস্থার কর্তাদের বার বার মেসেজ, ইমেলে বার্তা পাঠিয়েও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের যদিও দাবি, ‘‘জোগানে যাতে কোনও খামতি না থাকে, সে ব্যাপারে বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই নজর রাখা হচ্ছে। চাহিদা আরও খানিকটা বাড়লেও নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা দিতে সমস্যা হবে না। সিইএসসি-কর্তাদের সঙ্গেও আমাদের আলোচনা হয়েছে। অন্য যে সমস্ত সমস্যা হচ্ছে, সেগুলির দ্রুত সমাধান করে ফেলতে বলেছি।’’

আরও পড়ুন
Advertisement