নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অনশন তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা বৈঠকে বসেছেন।
বৈঠক শেষে প্রশ্ন থাকছেই, জট কি কাটবে? উঠবে কি অনশন? মঙ্গলবার রাজ্যের সকল চিকিৎসক যে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন, তা কি শেষ পর্যন্ত হবে?
নবান্নের তরফে জানানো হয়েছিল, নবান্নে ৪৫ মিনিট জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলা হবে। যদিও এক ঘণ্টা ৫৫ মিনিট কেটে গেলেও শেষ হয়নি বৈঠক। প্রায় দু’ঘণ্টা পর বৈঠক শেষ।
আন্দোলনকারী এক মহিলা চিকিৎসক জানালেন, ‘‘আন্দোলন আপনার থেকেই শিখেছি।’’ মমতা জানালেন, তিনি যখন অনশন করেছেন, প্রশাসনের তরফে কেউ আসেননি।
মমতা বলেন, ‘‘আমার কাছে একটি পরিবার আসার কথা। তাঁদেরও মেয়ে মারা গিয়েছে। আমায় যেতে হবে। আন্দোলন শুরু করলে শেষও করতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের দাবিতে ২১ দিন ধর্না করেছিলাম। সিঙ্গুর নিয়ে ২৬ দিন অনশন করেছি। কেউ আসেনি। গোপাল গান্ধী ব্যক্তিগত ভাবে আমায় ভালবাসতেন বলে এসেছিলেন। তোমাদের ভালবাসি। আলোচনায় ফাঁক রাখা হয়নি। মন খুলে কথা বলেছো।’’
কলেজস্তরে র্যাগিংয়ের অভিযোগ এলে কে খতিয়ে দেখবে? অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি নাকি টাস্ক ফোর্স? প্রশ্ন জুনিয়র ডাক্তারদের।
স্টেট টাস্ক ফোর্সের মতো কলেজেও কমিটি গড়ার ডাক জুনিয়র ডাক্তারদের।
মমতা জুনিয়র ডাক্তারদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কথা বললেন। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সরকার কাজ করবে কী করে?’’
অনিকেত ‘থ্রেট কালচার’ প্রসঙ্গে জানান, অনেক অভিযুক্তের পরীক্ষার খাতা পরখ করা হলে দেখা যাবে, তিনি ১০ নম্বরও পাননি। অথচ পদকে পেয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। হাউস স্টাফ হয়েছেন। মমতা পাল্টা বলেন, অনেকের বিরুদ্ধেই অনেক অভিযোগ রয়েছে।
আন্দোলনকারী ছাত্রীর অভিযোগ, টাস্ক ফোর্স কী কাজ করছে, তার সদস্য কত জন, তা নিয়ে কিছু তাঁরা জানেন না। দেবাশিস জানান, টাস্ক ফোর্সে সব মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন।
আন্দোলনকারী অনিকেত সরকারের ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। বললেন, ‘‘কলেজ ক্যাম্পাস সুস্থ জায়গা হতে হলে, সেখানে আমাদেরও থাকতে হবে। এক জন ছাত্র কলেজে প্রবেশের পর কী এমন ঘটছে যে সে পচা হয়ে উঠছে? সে কারণে ক্যাম্পাসের পিরবেশ সুস্থ, স্বাভাবিক করা প্রয়োজন।’’
মমতা বলেন, ‘‘তোমরা সাধ্যমতো অনশন করেছো। ভাল করেছো। আমি ২৬ দিন অনশন করেছি। কেউ আসেনি। আমি মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবকে পাঠিয়েছি। রোজ খবর নিয়েছি। ঘণ্টায় ঘণ্টায় রিপোর্ট নিই।’’
মমতা জানান, জুনিয়র ডাক্তারদের স্ট্রাইকের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। জনগণের টাকা অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে।
মমতা বলেন, ‘‘রং জানার দরকার নেই। পরিচয় জানার দরকার নেই। যদিও জানি সব। ৫৬৩ জন আন্দোলন চলার সময় বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করে টাকা নিয়েছেন।’’
সুপ্রিম কোর্টে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবীকে কটাক্ষ করলেন মমতা। তিনি জানালেন, কোর্টে ওই মহিলা আইনজীবী দাবি করেছেন, রাজ্যের হাসাপাতালে তুলোও পাওয়া যায় না। এর পরেই তিনি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের প্রশ্ন করেন, ‘‘এটা কি ঠিক? এতে রাজ্যের মুখ পুড়ল।’’
মমতা বলেন, ‘‘তোমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে, বোনেদের দেখে রাখা। বোনেদের দায়িত্ব রয়েছে ভাইদের দেখে রাখা।’’
রোগী কল্যাণ সমিতিতে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে, জানালেন মমতা।
মমতা সাসপেনশন নিয়ে জানালেন, তদন্ত করা হবে। পক্ষপাতিত্ব চলবে না, আগামী দিনে দেখা হবে বিষয়টি। সরকারকে না জানিয়ে ‘অ্যাকাডেমিক’ কাউন্সিল কী ভাবে তৈরি হল, কী ভাবে সাসপেন্ড করা হল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
জেলায় জেলায় গ্রিভ্যান্স সেল হওয়া উচিত বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ ভাবে তাঁদের না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে না। প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও আলোচনা না করে সাসপেন্ড কেন? এটাও কি থ্রেট কালচার নয়?’’