Kolkata Hawker

কলকাতার রাস্তায় বসছেন বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে আসা হকার, ধরা পড়েছে পুরসভার সমীক্ষার নথিতে

সমীক্ষায় নেমে হকারদের কাছ থেকে তাঁদের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, আধার নম্বর, প্যান ইত্যাদি সংগ্রহ করছিল পুরসভার সমীক্ষক দল। তার পরেই ভিন্‌‌রাজ্যের হকারদের উপস্থিতির কথা জানা গিয়েছে।

Advertisement
অমিত রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ১২:২৯
Hawkers from Bihar Jharkhand are sitting on the streets of Kolkata, caught in the survey of the Kolkata Municipal corporation

ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

দখলমুক্ত করতে হবে কলকাতা শহরের ফুটপাত। প্রয়োজনে গড়তে হবে ‘হকার জ়োন’। জুনের শেষ সপ্তাহে দু’দফায় নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করে পুরসভাগুলিকে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশিই তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিলেন, ভিন্‌রাজ্যের বাসিন্দারা এ রাজ্যের রাস্তায় হকারি করতে এসে রাস্তা এবং ফুটপাত দখল করে নিচ্ছেন।

Advertisement

সমীক্ষার কাজে নেমে কলকাতা পুরসভার সমীক্ষক দল এমন হকারদের সন্ধান পেয়েছে, যাঁরা মূলত বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর কলকাতা পুরসভার তরফে ১৫০ জন পুরকর্মীকে হকার সমীক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সমীক্ষার কাজ করতে এক একটি হকার জ়োনে কমবেশি ১০টি করে দল নেমেছিল। প্রতিটি দলে চার-পাঁচ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী ওই কাজ শুরু করেন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৪০টি এমন ‘টিম’ নামানো হয়েছিল। কোন রাস্তায় কত হকার বসছেন, তাঁদের নাম, ঠিকানা-সহ যাবতীয় তথ্য অ্যাপে নথিভুক্ত করতে বলা হয়। সমীক্ষক দলটি যে তথ্য এবং নথি হাতে পেয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কলকাতা শহরের রাস্তা ও ফুটপাতের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছেন ভিন্‌রাজ্যের বাসিন্দারাই।

সমীক্ষায় নেমে হকারদের কাছ থেকে তাঁদের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, আধার নম্বর, প্যান ইত্যাদি সংগ্রহ করছিল পুরসভার সমীক্ষক দলটি। ওই সমস্ত তথ্য হাতে আসার পরেই কলকাতা শহরে ভিন্‌রাজ্যের হকারদের উপস্থিতির কথা জানা গিয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে আসার কথা জানতে পেরেছেন কলকাতা পুরসভার শীর্ষ আধিকারিকেরাও। এর পরে পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করে সেটি পাঠানো হবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সেই রিপোর্টে ভিন্রাজ্যের বাসিন্দাদের কলকাতা শহরে হকারি করার বিষয়টি উল্লেখ করা হবে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র। যে হেতু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এই সমীক্ষা হচ্ছে, তাই ওই বিষয়ে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। পুরসভা সূত্রে খবর, চলতি মাসের শেষে কিম্বা অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে সমীক্ষার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি হয়ে যাবে। তার পরে তা জমা পড়তে পারে নবান্নে।

কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৫ সালের তালিকা অনুযায়ী শহরে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার হকার থাকার কথা। কিন্তু সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, গত ন’বছরে ওই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ কলকাতা পুরসভার কোনও অধিকারিক। তবে ‘হকার জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র নেতা অসিত সাহা বলেন, ‘‘কোভিডের পর সারা পৃথিবী বদলে গিয়েছে। ২০১৫ সালের যে তথ্য নিয়ে কলকাতা পুরসভা আলোচনা করছে, তা সেই অর্থে প্রাসঙ্গিকই নয়। কারণ, কলকাতা শহরে এই মুহূর্তে প্রায় পাঁচ লক্ষ হকার রয়েছেন। তাঁদের সমস্যার কথা বা তাঁদের পুনর্বাসনের কথা বুঝতে গেলে আগে প্রশাসনকে হকার সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে যে সমস্ত হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাতে হকারদেরই কোনও প্রতিনিধি নেই। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে আমি নিজে উপস্থিত থেকে শুনেছিলাম, তিনি হাই পাওয়ার কমিটিতে হকার নেতাদের রাখার কথা বলেছিলেন।’’ অসিত আরও বলেন, ‘‘হাই পাওয়ার কমিটির আলোচনার কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত না-হলে আমরা হকারদের নিয়ে কলকাতা পুরসভা বা সরকারের নীতির কথা জানতে পারছি না। যা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। তাই ভিন্‌রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসে হকারি পেশায় যুক্তদের নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হলে তাতে হকারদের ভাবনার প্রতিফলন থাকবে না।’’

তবে কলকাতা শহরের উড়ালপুলগুলির নীচে হকার-সহ পাকাপাকি ভাবে দোকান ও ঘরবাড়ি তৈরি করে ফেলার মতো বিষয়টি যে পুরসভা যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শহরের অনেক জায়গায় কাগজকুড়ানি, গৃহহীন, ভবঘুরেরা রাতে ফুটপাথেই থেকে যাচ্ছেন। বিশেষত, উড়ালপুলগুলির নীচের অংশ ‘দখল’ করে নিচ্ছেন। তাঁদের সরাতে পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েলকে চিঠিও দিয়েছেন মেয়র। পুরসভার মাসিক অধিবেশনে সে কথা জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, গড়িয়াহাট, পার্ক সার্কাস, খিদিরপুর এলাকায় উড়ালপুলের নিচের অংশ দখল করে দোকান ও আশ্রয়স্থল বানানোর অভিযোগ জমা পড়েছে কলকাতা পুরসভায়। তার ভিত্তিতেই ওই পদক্ষেপ করেছেন ফিরহাদ।

আরও পড়ুন
Advertisement