—ফাইল চিত্র।
কয়লা-কাণ্ডে এ বার তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলাকে নোটিস দিল সিবিআই। রবিবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের একটি দল অভিষেকের কালীঘাটের বাড়িতে পৌঁছয়। রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় বলে নোটিসে জানিয়েছে সিবিআই। নোটিস দেওয়া হয়েছে অভিষেকের শ্যালিকাকেও। ঘটনাচক্রে, এই নোটিসের ৪৮ ঘণ্টা আগেই অভিষেকের করা একটি মামলাতে কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে বিধাননগরের বিশেষ আদালত।
সিবিআইয়ের দাবি, কয়লা-কাণ্ডে অভিষেকের স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক আর্থিক লেনেদেন করা হয়েছে। তদন্ত করতে গিয়ে ওই লেনদেনের হদিস পান তদন্তকারীরা। সেই জন্যই রুজিরার বয়ান রেকর্ড করতে চান তাঁরা। এ নিয়ে অভিষেকের বাড়িতেই রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তদন্তকারীরা। তাঁকে নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের দফতরে যেতে হবে না। এমনকি, তাঁকে তলবও করা হয়নি বলে জানিয়েছে সিবিআই। একটি মহলের দাবি, রুজিরাকে সাক্ষী হিসাবেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তদন্তকারীরা। ফৌজদারি আইনের ১৬০ ধারায় এই নোটিস দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
সিবিআইয়ের নোটিসের পর রবিবার বিকেলে মুখ খুলেছেন অভিষেক। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আজ দুপুর ২টোয় সিবিআই আমার স্ত্রীর নামে একটি নোটিস দিয়েছে। আইনের অনুশাসনের উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। ওরা যদি মনে করে যে এ ধরনের পরিকল্পনা করে আমাদের দাবিয়ে রাখা যাবে, তবে ভুল ভাবছে। আমাদের এ ভাবে নত করানো যাবে না’।
রবিবার দুপুর ২টো নাগাদ সিবিআইয়ের ৫ জন আধিকারিক অভিষেকের কালীঘাটের বাড়িতে যান। তবে সে সময় বাড়িতে তিনি বা অন্য কেউ ছিলেন না বলে জানা গিয়েছে। ফলে সিবিআই আধিকারিকদের যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর ওই বাড়িতে রেখে ২টো ২০ মিনিট নাগাদ ফিরে যায় দলটি। ওই নম্বরেই রুজিরাকে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দিয়েছে সিবিআই।
At 2pm today, the CBI served a notice in the name of my wife. We have full faith in the law of the land. However, if they think they can use these ploys to intimidate us, they are mistaken. We are not the ones who would ever be cowed down. pic.twitter.com/U0YB6SC5b8
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) February 21, 2021
কয়লাপাচার-কাণ্ডে ইতিমধ্যেই একাধিক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। ওই কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালার সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই তদন্ত করার সময় রুজিরায় অ্যাকাউন্টে লেনদেনে প্রশ্ন ওঠে। এর পরেইতদন্তকারীরা অভিষেকের স্ত্রীকে সাক্ষী হিসাবে প্রশ্ন করতে চান বলে জানা গিয়েছে। তবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিবিআইয়ের এই নোটিস ঘিরেও রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে।
অভিষেকের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে সম্প্রতি একটি জনসভায় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, ‘‘বেআইনি কয়লাপাচার চক্রের অন্যতম পাণ্ডা লালা ওরফে অনুপ মাঝি ‘ম্যাডাম নারুলা’-র অ্যাকাউন্টে নিয়মিত টাকা জমা করেন।’’ তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, ‘‘তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককে কাসিকর্ন ব্যাঙ্কের ওই অ্যাকাউন্টে প্রতিদিন নাকি দে়ড় লক্ষ তাই মুদ্রা জমা পড়ে।’’
প্রসঙ্গত, বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-র অনেক নেতাই অভিষেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলছেন। এ নিয়েও আইনি পদক্ষেপ করেছেন অভিষেক। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে ফাঁসিতে যেতেও রাজি আছেন। এ নিয়ে অমিত শাহের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন অভিষেক। তাতে রাজ্যের সাংসদ-বিধায়কদের জন্য গঠিত বিধাননগরের বিশেষ আদালতের তরফে ২২ ফেব্রুয়ারি, সোমবার সকালে অমিতকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে৷ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণও চেয়েছেন অভিষেক। তবে গত শুক্রবার কলকাতায় একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমিত বলেন, ‘‘প্রমাণ আমি দেব না। দেবে তদন্ত সংস্থা। তবে তখন যেন দিদি সেটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ না বলেন।’’