৭৫ মিনিট পর অবশেষে দরজা খুললেন সন্দীপ ঘোষ। ছবি: সারমিন বেগম।
আরজি কর হাসপাতালে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বেলেঘাটার বাড়িতে রবিবার সকালে পৌঁছে গিয়েছে সিবিআইয়ের একটি দল। ৭৫ মিনিট বাইরে অপেক্ষার পর তারা ভিতরে ঢুকতে পেরেছে। শনিবার সিবিআইয়ের সিজিও কমপ্লেক্সের দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন সন্দীপ। রাতে বাড়ি ফিরেছিলেন প্রতি দিনের মতোই। তার পর রবিবার সকাল সকাল তাঁর বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে সিবিআই। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে আরজি
করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। এ ছাড়া, ওই
হাসপাতালে আর্থিক অনিয়মের মামলার তদন্তভারও সিবিআইয়ের হাতে দিয়েছে আদালত। দু’টি
মামলাতেই আপাতত কেন্দ্রীয় সংস্থার আতশকাচের নীচে রয়েছেন হাসপাতালের প্রাক্তন
অধ্যক্ষ সন্দীপ। আর্থিক অনিয়মের মামলায় শনিবার সিবিআই এফআইআরও করেছে। সূত্রের খবর, সেই এফআইআরের ভিত্তিতেই সন্দীপের বাড়িতে এসেছে সিবিআই।
রবিবার সকাল ৬টা ৫০ মিনিট নাগাদ সিবিআইয়ের দলটি সন্দীপের বাড়ির সামনে পৌঁছে যায়। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ডাকাডাকি করা হয় দীর্ঘ ক্ষণ। সিবিআইয়ের দলে রয়েছেন এক মহিলা আধিকারিক-সহ সাত জন। সন্দীপের চার তলা বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর সিবিআইয়ের দলের সকলকে বলা হয়, ফোনে সন্দীপের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কিন্তু সূত্রের খবর, ফোন বেজে গিয়েছে, কেউ উত্তর দেননি। সিবিআই দলের কয়েক জন সদস্য বেলেঘাটা থানার দিকে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৭৫ মিনিট পর অবশেষে দরজা খোলেন সন্দীপ। সিবিআইয়ের কয়েক জন আধিকারিক ভিতরে ঢোকেন।
সিবিআই আধিকারিকেরা সন্দীপের বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। কলিং বেল বাজানো হচ্ছিল। কিন্তু বাড়ির দরজা-জানলা সব বন্ধ ছিল। ভিতর থেকে তিনি বা তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য সাড়া দেননি। বাড়ির বাইরে স্থানীয়দের ভিড় জমতে শুরু করে।
আরজি কর-কাণ্ডে সন্দীপের নাম প্রকাশ্যে আসার পর নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সন্দীপ। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তাঁর বাড়িতে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছে কলকাতা পুলিশ। বেলেঘাটা থানার ওসির নজরদারিতে সন্দীপের বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট রয়েছে। সেই পুলিশকর্মীরাও বাড়ির সামনে রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গেও কথা বলছেন কেন্দ্রীয় আধিকারিকেরা। রাতে পুলিশ বাড়ির সামনে পাহারায় ছিল কি না, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর সেই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পর পর ন’দিন সন্দীপকে সিজিও কমপ্লেক্সে ডাকা হয়েছিল। গত শুক্রবার থেকে প্রতি দিনই তিনি হাজিরা দিয়েছেন।
আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সন্দীপের অপসারণ চেয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। অভিযোগ, তিনি অত্যন্ত ‘প্রভাবশালী’। মামলার তদন্তকেও তিনি প্রভাবিত করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। আন্দোলনের চাপে নিজেই ইস্তফা দেন সন্দীপ। তার পর স্বাস্থ্য ভবনের তরফে তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও বিক্ষোভ শুরু হয়। হাই কোর্টের নির্দেশে এর পর লম্বা ছুটিতে যান সন্দীপ। পরে তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যালের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।