R G Kar Medical College And Hospital Incident

১৬ দিন পেরিয়েও রহস্য কাটল না, প্রশ্ন অনেক, সূত্র অধরা! নিগৃহীতার মায়ের প্রশ্ন, ‘আর কত সময়?’

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘিরে নানা মহলে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে— আর কত দিন কাটলে তবে যুক্তিযুক্ত উত্তর সামনে আসবে?

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৩০
আর জি কর কাণ্ডের ঘটনার প্রতিবাদে বিজ্ঞানী সমাজের ডাকে বৃষ্টির মধ্যে প্রতিবাদ মিছিল আচার্য ভবন থেকে শ্যামবাজার মোড় পর্যন্ত। ছবি রনজিৎ নন্দী

আর জি কর কাণ্ডের ঘটনার প্রতিবাদে বিজ্ঞানী সমাজের ডাকে বৃষ্টির মধ্যে প্রতিবাদ মিছিল আচার্য ভবন থেকে শ্যামবাজার মোড় পর্যন্ত। ছবি রনজিৎ নন্দী

অতিক্রান্ত ১৬ দিন। রহস্য কাটল না। এখনও উত্তর মিলল না অধিকাংশ প্রশ্নের।

Advertisement

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘিরে তদন্তের গতিপ্রকৃতি এখন এমনই, যা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে— আর কত দিন কাটলে তবে যুক্তিযুক্ত উত্তর সামনে আসবে? প্রশ্ন তুললেন খোদ মৃতার মা-ও। শনিবার তিনি বললেন, ‘‘আর কত সময় লাগবে? আমার মেয়ে কি বিচার পাবে না? এত দিন কেটে গেল, পুলিশ বা সিবিআইয়ের কেউই তো বিচার পাইয়ে দিতে পারল না।’’ একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তবে কি এতটাই বড় কোনও প্রভাবশালীর হাত রয়েছে আমার মেয়ের খুনের পিছনে? আন্দোলনে আমিও রাস্তায় নামব।’’

কেন স্পষ্ট উত্তর মিলছে না এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির? খোঁজ করতে গিয়ে একাধিক অসঙ্গতির দিক সামনে আসছে। যা এক সূত্রে বাঁধলে গভীর ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের। তাঁদের প্রশ্ন, আর জি করের ঘটনার পরে ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও কেন নিশ্চিত ভাবে জানা গেল না যে, ওই সেমিনার রুমেই তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল, না কি অন্য কোথাও? মৃতার পরিবারেই প্রশ্ন, ‘‘মেয়ের চুল পরিপাটি করে রাখা ছিল। কপালের উপরে হাতটা এমন ভাবে রাখা ছিল, যা এক ঝলক দেখলে মনে হয়, কেউ ঘুমোচ্ছে! যাকে ধর্ষণ ও খুন করা হবে, সে কি ওই ভাবে হাত কপালে রেখে ঘুমিয়ে থাকবে? তা ছাড়া মেয়ের সে রাতের বিছানার নীচ দিয়ে বিদ্যুতের তার গিয়েছে দেখলাম। কেউ কি বিদ্যুতের তারের উপরে বিছানা পেতে শুয়ে থাকবে?” তাঁরা বলেন, “মেয়ের মাথার কাছে ওর ডায়েরির পাতা পড়ে থাকা, পরিপাটি করে ওর জুতো সাজিয়ে রাখা দেখে তো মনে হচ্ছে, সবটাই সাজানো।” এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানিতে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, “ঘটনাস্থলের চরিত্রই বদলে ফেলা হয়েছে। সিবিআইয়ের তদন্ত করতে সমস্যা হচ্ছে।” এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের বক্তব্য, ঘটনাস্থলের চরিত্র বদলানোর এই দাবি নিয়ে আলাদা তদন্ত দরকার।

এই ঘটনায় যে সময়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে, যখন ময়না তদন্ত করা হয়েছে, যে ভাবে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা হয়েছে—সবটা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি নিজে জানতে চান, এমন ঘটনায়, যেখানে খালি চোখে দেখলেই খুন করা হয়েছে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সেখানে কেন ময়না তদন্তের পরে এফআইআর হল? প্রশ্ন রয়েছে ময়না তদন্তের রিপোর্ট ঘিরেও। তরুণীকে যে অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে, সেই বৃত্তান্ত লিখতে গিয়ে তাতে বলা হয়েছে, ‘তরুণীর চুল আঁচড়ানো ছিল। শরীরের নিম্নাঙ্গের পোশাক মেলেনি। ঊর্ধ্বাঙ্গের পোশাক ছেঁড়া ছিল। অন্তর্বাস এক পাশে সরানো অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে’। শরীরে মোট ২৫টি আঘাতের উল্লেখ রয়েছে। বেশির ভাগ ঊর্ধ্বাঙ্গে। ধর্ষণের শিকার কেউ, যাঁর মাথা, গলা, মুখ, নাক-সহ শরীরের ২৫টি জায়গায় আঘাত রয়েছে, তাঁর চুল কী করে আঁচড়ানো অবস্থায় থাকতে পারে? প্রশ্ন উঠছে, ধর্ষণ করা হলে সাধারণত শরীরের নীচের অংশে যত আঘাতের চিহ্ন মেলে, এ ক্ষেত্রে তা নেই কেন? যৌনাঙ্গে ‘সাদা ঘন চটচটে তরল’ পাওয়া গিয়েছে বলে লেখা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন ‘সাদা ঘন চটচটে তরল’ বলা হল? তবে কি বীর্য উদ্ধারের কথা না বলে অতিরিক্ত সাবধানী হয়ে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে? ময়না তদন্তে বলা হয়েছে, যৌন নিগ্রহের প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু সরাসরি ধর্ষণের কথা কেন লেখা হয়নি, উঠেছে সেই প্রশ্নও। এই ঘটনায় একমাত্র ধৃত সঞ্জয় রায় কি একাই সবটা ঘটিয়েছে— সেই মূল প্রশ্নেরও উত্তর এ পর্যন্ত মেলেনি। কারণ, ময়না তদন্তে রয়েছে, মৃত্যু হয়েছে নাক-মুখ এবং গলা টিপে শ্বাসরোধ করায়। প্রশ্ন রয়েছে, এক জনই কী করে একই সঙ্গে গলা টিপবে এবং নাক-মুখ চাপবে?

মৃতদেহ প্রথম কে দেখলেন? ঠিক কোন সময়ে তরুণীর মৃত্যু হয়েছে? সেই মৃত্যুর সময়ের সঙ্গে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ধৃতের উপস্থিতির সময় মিলছে কি? পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের সঙ্গে ঘটনার ‘সময় সারণি’ মিলছে কি না— এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই। এই মামলার বিচারে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন আইনজীবীদের অনেকে। তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়ে থাকলে তিনি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেনই। সে ক্ষেত্রে তাঁর নখে ধর্ষকের শরীরের টিস্যু পাওয়া যাবেই। এরই মধ্যে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বেশি করে দেখা দিয়েছে, তা হল, তেমন কোনও টিস্যুর সঙ্গে ধৃতের শরীরের টিস্যুর মিল আছে কি? ধর্ষণের ক্ষেত্রেও তেমনই পাওয়া যাবে বীর্যের নমুনা। কিন্তু ময়না তদন্তে উল্লেখ থাকা সাদা তরল আদতে বীর্য কি না, সেই প্রাথমিক প্রশ্নেরই এখনও উত্তর নেই।

কলকাতা হাই কোর্টের এক আইনজীবী বললেন, “মামলা এগোলে এমনও হতে পারে, টিস্যুর নমুনা, বীর্যের নমুনা মিলে গেল। তখন বলা হতে পারে, ধৃত সঞ্জয় শুধুই ধর্ষণ করেছে। খুন করেনি। কারণ, ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা যে ঘটনা পরম্পরা বলছেন, তাতে জানা গিয়েছে, নানা যৌনপল্লিতে ঘুরে আকণ্ঠ মত্ত অবস্থায় সঞ্জয় সেই রাতে সেমিনার রুমে গিয়েছিল। ওই কাহিল অবস্থায় খুন এবং ধর্ষণ দুটোই করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সে-ই যে খুন করেছে, তার প্রমাণ কোথায়?” সত্যিই কি প্রমাণ নেই? সিবিআই-সহ সমস্ত তদন্তকারী সংস্থার উপর ভরসা রেখে জানতে চাইছে গোটা দেশ।

আরও পড়ুন
Advertisement