Justice Amrita Sinha

‘হেনস্থা করছে সিআইডি’! বিচারপতি সিংহের স্বামী চিঠি দিলেন মুর্মু, মোদী, মমতা, বোস, মেঘওয়ালকে

এর আগে সিআইডির বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ জানিয়ে কলকাতা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি দিয়েছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিংহের স্বামী, পেশায় আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৪২
বিচারপতি অমৃতা সিংহ।

বিচারপতি অমৃতা সিংহ। — ফাইল চিত্র।

একটি মামলার সূত্রে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে রাজ্যের সিআইডি তাঁকে মানসিক নিগ্রহ করেছে। তাঁর বিচারপতি স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বয়ান লেখানোর জন্য চাপ দিয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের স্বামী প্রতাপচন্দ্র দে এ বার এই অভিযোগ তুলে চিঠি দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

Advertisement

এর আগে সিআইডির বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ জানিয়ে কলকাতা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি দিয়েছেন পেশায় আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র। চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, যে মামলার সাক্ষী হিসাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে দু’বার তলব করা হয়েছিল, তার সম্পর্কে প্রশ্ন করার বদলে বিচারপতি সিংহের বিষয়ে নানা তথ্য জানার চেষ্টা করেছেন সিআইডির তদন্তকারী অফিসারেরা। প্রতাপচন্দ্র যাতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা সাজানো বয়ান দেন, তার জন্যও তাঁকে কুকথা বলার পাশাপাশি তাঁর উপর মানসিক নিপীড়নও চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রতাপচন্দ্রের অভিযোগ, সাজানো বয়ানের বিনিময়ে তাঁকে টাকা, বাড়ি, গাড়িরও টোপ দিয়েছেন তদন্তকারীরা।

প্রসঙ্গত, ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি অপরাধের মামলায় অবৈধ ভাবে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ উঠেছিল বিচারপতি সিংহের স্বামী প্রতাপচন্দ্রের বিরুদ্ধে। ৬৪ বছরের এক বিধবা এবং তাঁর মেয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। মামলায় সূত্রে গত ১ ডিসেম্বর বিচারপতির স্বামীকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিআইডির সদর দফতর ভবানী ভবনে দ্বিতীয় দফার জিজ্ঞাসাবাদ-পর্ব হয়েছিল গত ২২ ডিসেম্বর। সর্বশেষ জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করে প্রতাপচন্দ্র তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, উপর মহল থেকে নির্দেশ এলে ভুয়ো মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হবে বলেও সিআইডির অফিসারেরা জানিয়েছিলেন।

সিআইডি সূত্রে খবর, যে মামলায় বিচারপতির স্বামীকে ডেকে পাঠানো হয়েছে, সেটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। প্রথমে বিচারপতির স্বামীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মামলায় কোনও বাড়তি পদক্ষেপ করা যাবে না বলে জানায় শীর্ষ আদালত। তবে গত ১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জানায়, আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে পারবে তদন্তকারী সংস্থা। তার পরেই তাঁকে তলব করা হয়েছিল। সিআইডির একটি সূত্র জানাচ্ছে, তদন্তে সহযোগিতা করেননি প্রচাপচন্দ্র।

আইন সংক্রান্ত বিষয়ে খবরাখবর পরিবেশনকারী সংবাদমাধ্যম ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের শুনানিতে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডিকে ‘ভয়ডরহীন’ ভাবে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি এলভিএন ভাট্টির ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি, কোনও প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হলে সেটাও শীর্ষ আদালতকে জানানোর কথা বলা হয়। তদন্ত শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে মুখবন্ধ খামে তথ্য পেশের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ওই বিধবার সঙ্গে তাঁর কয়েক জন আত্মীয়ের বিরোধ শুরু হয়। মামলা গড়ায় আদালতে। আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টে জানান, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাঁকে বঞ্চিত করার জন্য বাপের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন দাদা এবং অন্যান্য আত্মীয়। সুপ্রিম কোর্টে ওই বিধবার আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলকে একাধিক বার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনকি, বৃদ্ধাকে যে মারধর করা হয়েছে, তার প্রমাণ রয়েছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। এর প্রেক্ষিতে ওই বৃদ্ধা আত্মীয়দের বিরুদ্ধে দু’টি ফৌজদারি অভিযোগ করেন।

‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিবাদী পক্ষের আইনজীবী তদন্তকারীদের উপর বেআইনি ভাবে প্রভাব খাটান বলে অভিযোগ করেন বিধবা। অভিযোগ, দু’টি মামলার তদন্ত যাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়, তার সব রকম চেষ্টা করেছেন বিচারপতি সিংহের স্বামী। ফলস্বরূপ, ওই দু’টি মামলার তদন্তপ্রক্রিয়াই বাধাপ্রাপ্ত হয়। শুধু তাই নয়, বিচারপতি সিংহের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন মামলাকারীরা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবেদনকারীরা তার পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁরা আর্জি জানান, আইনজীবী কিংবা তাঁর বিচারপতি স্ত্রীর প্রভাব ছাড়াই দু’টি ফৌজদারি অভিযোগের যাতে সঠিক ভাবে তদন্ত হয়, তার নির্দেশ দিক শীর্ষ আদালত। তদন্ত নিশ্চিত করার নির্দেশও চেয়েছিলেন। আবেদনে এ-ও অভিযোগ করা হয় যে, ওই দুই মামলার প্রাথমিক তদন্তে এক জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়ার পরেও তদন্তের গতি রুদ্ধ হয়েছে। হলফনামায় জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট তদন্তকারীকে এক বার ডেকে তিরস্কার এবং ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতি। তিনি নাকি বলেছেন, ওই দু’টি দেওয়ানি মামলায় কেন ফৌজদারি মামলার তদন্ত হচ্ছে?

‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সম্প্রতি মামলাকারীর আবেদনে প্রার্থনা জানানো হয় যে, শীর্ষ আদালত যেন বিচারপতি এবং আইনজীবী স্বামীর ওই কাজের জন্য তদন্তের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, মামলাকারীরা পর্যাপ্ত পুলিশি সুরক্ষার আবেদন জানান। শীর্ষ আদালত সেই আবেদনে সাড়া দেয়। অন্য দিকে, ওই মামলার শুনানিতে রাজ্যের তরফে সুপ্রিম কোর্টে বলা হয়, তদন্তের অবস্থা এবং অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আগেই কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে একটি রিপোর্ট গিয়েছে। ন্যায়সঙ্গত ভাবেই তদন্ত পরিচালনা হচ্ছে। আবেদনকারীদের সমস্ত অভিযোগ বিবেচনা করে সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত হচ্ছে।

Advertisement
আরও পড়ুন