TMC MLA

‘সরকারি কর্মীরা সরকারকে ডোবাচ্ছেন’! আবাস নিয়ে ক্ষোভে ‘গণ আন্দোলনের’ আঁচ পাচ্ছেন তৃণমূল বিধায়ক!

জনসংযোগ যাত্রার শুরুতে খোশমেজাজেই ছিলেন অসিত মজুমদার। গৃহস্থকে ডেকে বলেন, ‘‘এক দিন আসব, বিনা চিনির চা খেতে। খরচও কম।’’ কিন্তু আবাস নিয়ে ক্ষোভের কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয় তৃণমূল বিধায়কের।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৩০
Asit Majumdar

তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার। —নিজস্ব চিত্র।

জনসংযোগে বেরিয়ে আবারও আবাস নিয়ে ভোটারদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন হুগলির চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার। যদিও ‘ভুলের’ দায় শাসকদল বা সরকারের নয়, সরকারি কর্মীদের বলে দাবি বিধায়কের। এমনকি, তিনি জানালেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনও হতে পারে।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনে হুগলি কেন্দ্রে তৃণমূল জয়ী হয়েছে। কিন্তু ওই লোকসভার অধীনস্থ চুঁচুড়া বিধানসভায় কেন বিজেপি জয়ী হল, তার কারণ খুঁজতে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন বিধায়ক অসিত। তাঁর পাঁচ দিনের জনসংযোগ কর্মসূচির তৃতীয় দিন ছিল শুক্রবার। দক্ষিণায়ন এলাকায় জনসংযোগে গিয়ে রাস্তা, নিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জল নিয়ে অভিযোগ শোনেন চুঁচুড়ার বিধায়ক। সেই সঙ্গে সরকারি আবাস প্রকল্পে যোগ্যরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে স্থানীয়েরা অনুযোগ করেন। তা শুনেই মেজাজ হারান বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা তালিকা করেছেন, সেই সরকারি কর্মীরা বেআইনি কাজ করেছেন। যাঁরা পাওয়ার (আবাস) যোগ্য, তাঁদের বাদ দিয়েছেন। এঁদের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন হবে।’’ যাঁদের ভুলে রাজ্য সরকারকে সমস্যা পোয়াতে হচ্ছে, সেই সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলের তিন বারের বিধায়ক।

শুক্রবার সকালে জনসংযোগ যাত্রার শুরুতে বেশ খোশমেজাজেই ছিলেন অসিত। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন পরামর্শ দেন, সে রকম বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন বিধায়ক। এক গৃহস্থকে ডেকে বলেন, ‘‘এক দিন আসব, বিনা চিনির চা খেতে। খরচও কম।’’ আবার কোদালিয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুকান্ত ঘোষকে স্থানীয় উন্নয়ন নিয়ে পরামর্শ দেন। কিন্তু বিধায়কের মেজাজ বিগড়ে যায় আবাস নিয়ে অভিযোগ শোনার পর। আবাসের সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত পঞ্চায়েতের এক কর্মীকে কড়া সুরে তিনি বলেন, ‘‘তুমি কোন হরিদাস পাল? যারা ঘর পাওয়ার যোগ্য, তারা ঘর না পেলে চাকরি করা কিন্তু সমস্যার হবে।’’ তার পর চুঁচুড়া, মগরা ব্লকের বিডিওদের ফোন করেন বিধায়ক। কেন তাঁর দেওয়া নামের তালিকা নিয়ে সমীক্ষা হচ্ছে না, জানতে চান। বিডিওদের তরফে জানানো হয়, তালিকা দেখেই ‘সার্ভে’ হচ্ছে। কেউ আবেদন করলে সেটাও দেখা হচ্ছে। তখন বিধায়ক তাঁকে জানান, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন যাঁরা গরিব, ঘর পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের বাদ দেওয়া চলবে না। কিন্তু সরকারি কর্মীরাই গন্ডগোলের মূলে রয়েছেন। অসিত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, যোগ্যরা যেন বাড়ি পান। কিন্তু সমীক্ষা যারা করছে, তারা দু’নম্বরি করেছে। প্রকৃত যোগ্যদের বাদ দিয়ে রাম-শ্যাম-যদু-মধুর নাম ঢোকাচ্ছে। আমি জেলাশাসককে বলব, ওই কর্মীদের আগে সাসপেন্ড করুন।’’

অসিত বলেন, ‘‘তালিকায় নাম (যোগ্যদের) না থাকলে, সেই দোষ কার? তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। গরিব মানুষ আবাসের ঘর না পেলে সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন হবে। আমি নিজে ঘুরে দেখছি, যারা বাড়ি পাওয়ার যোগ্য, তাদের নাম নেই। কোদালিয়া পঞ্চায়েতে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা বেআইনি করেছেন।’’ অসিত দাবি করেছেন, রাজনীতির রং দেখে তৃণমূল উন্নয়ন করে না। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা সাধারণ মানুষের জন্য। কে বিজেপি, কে সিপিএম, তাই দেখে উন্নয়নের কাজ করে না রাজ্য সরকার।

অসিতের মন্তব্য প্রসঙ্গে হুগলি জেলা কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্যেরা আছেন বলে, তাঁরা সরকারকে বদনাম করার চেষ্টা করছেন, এই বার্তাটা ভুল। যে বা যাঁরা এটা প্রচার করছেন, তাঁরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচার করছেন। আমরা যেমন আমাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি, তেমনই সরকারের যে সমস্ত প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়নের জন্য সাহায্য করছি। আমরা চাই, আবাস যোজনার সুবিধা যোগ্যরা পান। আমাদের সরকারি কর্মীরা সরকারি কাজে সব রকম ভাবে সহায়তা করছেন।’’

Advertisement
আরও পড়ুন