Shantanu Banerjee

জামাইয়ের ধার আছে, নেতা বলে লোকে চাকরি চাইত, শান্তনুর ‘গুণ’ বলতে গিয়ে চোখ ভিজল শাশুড়ির

জিরাটে শান্তনুর বাড়ির কাছে বারুইপাড়া এলাকায় রয়েছে আধুনিক রেস্তরাঁ এবং ধাবা। ২০২১ সালে এই ধাবা তৈরি হয়। হোমস্টের পাশাপাশি বলাগড়ের চাঁদরা-বটতলা অঞ্চলে গঙ্গার পাড়ে রয়েছে একটি রিসর্টও।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
বলাগড় শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩ ১৪:৩৭
arrested Shantanu Banerjee’s mother in law claims her son in law is innocent and obliging person

শান্তনুর মতো পরোপকারী মানুষ খুব কমই আছেন। দাবি তাঁর শাশুড়ির। —নিজস্ব চিত্র।

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁর মতো পরোপকারী মানুষ খুব কমই আছেন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে বলাগড়ের তৃণমূল নেতা শান্তনুর গ্রেফতারির পর এমনই দাবি করলেন তাঁর শাশুড়ি দীপালি গুপ্ত। এমনকি, যে নেতার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠে আসছে, বাজারে তাঁর বেশ কিছু ঋণ আছে বলে মন্তব্য করলেন তিনি। বোঝাতে চাইলেন, দুর্নীতিতে যুক্ত থাকলে কেন আর্থিক ঋণ করবেন জামাই।

শুক্রবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন শাসকদলের যুবনেতা তথা হুগলি জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু। ইডি সূত্রের দাবি, তাঁর বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে ৩০০ চাকরিপ্রার্থীর তালিকা। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, শুক্রবার ওই বিষয়ে গোয়েন্দাদের প্রশ্নের মুখে পড়েন শান্তনু। তাতে শান্তনুর বয়ানে একাধিক ‘অসঙ্গতি’ মেলে। তার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এখন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে শান্তনুর কোনও যোগসূত্র আছে কি না, তারই খোঁজখবর করছে ইডি। এই প্রেক্ষিতে জামাইকে ঢালাও সার্টিফিকেট দিলেন শাশুড়ি। শান্তনুর শাশুড়ির কথায়, ‘‘জামাই নির্দোষ, তাকে পরিকল্পনা করে ফাঁসানো হয়েছে। ওর মতো পরোপকারী (লোক) হয় না। মাঝরাতে কেউ অসুস্থ হয়েছে, খবর পেয়ে ও ছুটে গিয়েছে। তাকে কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়েছে।’’ এই কথা বলতে গিয়ে কান্নায় গলা বুজে আসে দীপালির। বলেন, ‘‘জামাই এমন কিছু (দুর্নীতি) করতে পারে আমি বিশ্বাসই করি না।’’

Advertisement

গত জানুয়ারি মাসেই শান্তনুর বাড়িতে তল্লাশি করেছে ইডি। তার পর কি চিন্তায় ছিলেন শান্তনু? শাশুড়ি বলছেন, এমনটা হয়নি। তিনি নিজেও এ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না। দীপালির কথায়, ‘‘ইডি যখন শান্তনুকে ডেকেছিল তখন ভয় করেনি। কারণ জামাই নির্দোষ। সেটা জানতাম।’’ তা হলে শান্তনু যে এত সম্পত্তির মালিক বলে তথ্য উঠে আসছে, সেটা কী ভাবে? শাশুড়ি বলেন, ‘‘ওর পৈতৃক সম্পত্তি ছিল ভালই। চাকরি করত।’’ তার পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ ছাড়া ও লোন নিয়েছে।’’ দীপালি দাবি করেন শান্তনু রাজনৈতিক দলের নেতা। তাই অনেকেই তাঁর কাছে নানা আবদার নিয়ে আসতেন। কেউ কেউ এসে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে বলতেন। বৃদ্ধার কথায়, ‘‘আমাকেও তো অনেকে বলত, জামাইকে একটু বলে দিতে। গ্রামে তো এ সব হয়।’’

দীপালি বলেন, মেয়ের সঙ্গে শেষ বার ফোনে কথা হয়েছে শুক্রবার। এখন মেয়ে কোথায় আছেন তা জানেন না। জামাইয়ের গ্রেফতারির খবর পান টিভি দেখে। উৎকণ্ঠার মধ্যে বার বার বৃদ্ধার দাবি একটাই— ‘‘জামাই নির্দোষ। ওকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’

উল্লেখ্য, জিরাটে শান্তনুর বাড়ির কাছে বারুইপাড়ায় রয়েছে ‘দ্য স্পুন’ নামে আধুনিক রেস্টুরেন্ট এবং ধাবা রয়েছে। ২০২১ সালে এই ধাবা তৈরি হয়। হোমস্টের পাশাপাশি বলাগড়ের চাঁদরা-বটতলা অঞ্চলে গঙ্গার পাশে একটি রিসর্ট আছে। সেগুলো শান্তনুর নামেই বলে খবর। সুকুমার নন্দীর মতো স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মাঝেমাঝেই ওই রিসর্টে বাইরে থেকে লোকজন আসতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিটিং হত। তবে তাঁদের পরিচয় কেউ জানেন না। স্থানীয়দের এ-ও অভিযোগ, ওই রিসর্ট এবং ধাবা তৈরির জন্য সব জমি কেনা হয়নি। সবাই যে স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছেন সেটাও নয়। জমি দেওয়ার জন্য রীতিমতো চাপ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বিজেপি। বলাগড়ের বিজেপি যুব মোর্চার কনভেনর চিরঞ্জিৎ রায়ের অভিযোগ, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা শান্তনুর কাছে এসেছে। সেই টাকা দিয়ে ধাবা, রিসর্ট, হোটেল, হোমস্টে, একাধিক ফ্ল্যাট এবং প্রচুর জমি কেনা হয়েছে। তার কোনওটি নামে তো কোনওটি বেনামে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement