Differently Abled

দুর্ঘটনা কেড়েছে বাক্‌শক্তি! মুখে বাঁশি নিয়ে ব্যস্ত মোড়ে স্বেচ্ছায় ট্র্যাফিক সামলান গুড়াপের চন্দ্রনাথ

চন্দ্রনাথের বয়স যখন দেড় বছর, তখন এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে উঁচু জায়গা থেকে পড়ে মাথায় চোট পেয়েছিলেন। তাঁর নাক, মুখ, কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:০১
গুড়াপের ব্যস্ত বেলতলা মোড়ে রোজ ট্র্যাফিক সামলান চন্দ্রনাথ ঘোষ।

গুড়াপের ব্যস্ত বেলতলা মোড়ে রোজ ট্র্যাফিক সামলান চন্দ্রনাথ ঘোষ। — নিজস্ব চিত্র।

কথা বলতে পারেন না। তবে বাঁশি বাজিয়ে গুড়াপের ব্যস্ত বেলতলা মোড়ে দিব্যি ট্র্যাফিক সামলান চন্দ্রনাথ ঘোষ। দূরপাল্লার বাস ছাড়াও ট্রেকার, অটো, টোটো যাতায়াত করে ওই মোড় দিয়ে। সেখানেই নিয়ম করে সকাল থেকে বিকেল— মুখে বাঁশি নিয়ে ট্র্যাফিক সামলান চন্দ্রনাথ। প্রায় বিনা পারিশ্রমিকেই। তাঁর বাবা-মায়ের দাবি, পরিবারের একমাত্র ভরসা চন্দ্রনাথের জন্য স্থায়ী কোনও চাকরির ব্যবস্থা করুক পুলিশ। হুগলি (গ্রামীণ)-র পুলিশ সুপার সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁদের।

Advertisement

হুগলির গুড়বাড়ি-২ পঞ্চায়েতের রোহিয়া গ্রামে থাকেন চন্দ্রনাথ। বাবা বিশ্বনাথ ঘোষ যাত্রাদলে অভিনয় করতেন একটা সময়ে। তা দিয়েই চলত সংসার। চন্দ্রনাথের বয়স যখন দেড় বছর, তখন এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে উঁচু জায়গা থেকে পড়ে মাথায় চোট পেয়েছিলেন। তাঁর নাক, মুখ, কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তার পরে বহু চিকিৎসকের কাছে চন্দ্রনাথকে নিয়ে গিয়েছিল পরিবার। এমনকি চেন্নাই, বেঙ্গালুরুতেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে ছেলে আর কথা বলেনি। চন্দ্রনাথের বাবা জানিয়েছেন, ওই দুর্ঘটনায় ছেলের ভোকাল কর্ড এবং কানের পর্দা ফেটে গিয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।

প্রতিবন্ধী স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন চন্দ্রনাথ। তার পরে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়। ছোট থেকেই তাঁর ইচ্ছা পুলিশ হবেন। কিন্তু ওই দুর্ঘটনার কারণে পুলিশের চাকরি মেলেনি। তাতে কী? ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজের দায়িত্বেই ট্র্যাফিক সামলান চন্দ্রনাথ। চন্দ্রনাথের স্ত্রী এবং দুই সন্তান রয়েছে। এক ছেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। পরিবারের দায়িত্ব এখন চন্দ্রনাথেরই কাঁধে। তাঁর বাবাও অসুস্থ। সব প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখে গত দু’বছর ধরে গুড়াপের বেলতলা মোড় এলাকায় রোজ ট্র্যাফিক সামলে যাচ্ছেন চন্দ্রনাথ। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি, যাই হোক, কোনও দিন চন্দ্রনাথের কামাই নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়েরা। বাড়ি থেকে প্রতি দিন প্রায় দু’কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে হাজির হন বেলতলা এলাকায়। চোখে কালো চশমা, গায়ে ট্র্যাফিক পুলিশ লেখা পোশাক, মুখে বাঁশি নিয়ে তিনি ট্র্যাফিক সামলান। এলাকার সকলের কাছে খুব প্রিয় চন্দ্রনাথ।

চন্দ্রনাথের বাবা বলেন, ‘‘ছেলের এই কাজে হুগলির পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন সাহায্য করেছেন। পুলিশ সুপারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তবে আমরা চাই ছেলের একটা স্থায়ী কিছু হোক। তার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমরা করজোড়ে নিবেদন করছি।’’ কামনাশিস বলেন, ‘‘চন্দ্রনাথ খুব ভাল কাজ করেন। আমার কাছে এসেছিলেন। অনেক দিন ধরেই ওখানে ট্র্যাফিক সামলান। যতটা সম্ভব আমরা ওঁকে সাহায্য করব।’’

Advertisement
আরও পড়ুন