—প্রতীকী চিত্র।
দলের নিচুতলার নেতৃত্বে মধ্যবিত্তদের প্রভাব কমিয়ে শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুরদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর চেষ্টা বেশ কয়েক বছর ধরেই করছে সিপিএম। দলের সাংগঠনিক কাঠামোয় সবচেয়ে নীচে থাকা শাখা কমিটিগুলির নেতৃত্বে এ বার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রান্তিক পরিবারের তরুণদের জায়গা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি হুগলি জেলা সিপিএমের।
রাজ্যে শাসন ক্ষমতা হারানোর পরে সময় যত গড়িয়েছে, ততই ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে সিপিএম। বিজেপি প্রধান বিরোধী দলের পরিসর দখলের পরে সিপিএম এই জেলাতেও কার্যত ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। এই আবহে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে জেলায় শাখা কমিটিগুলির নেতৃত্বে গরিব কৃষক, খেতমজুর ও শ্রমিকদের তুলে আনার চেষ্টা শুরু করেছে সিপিএম। হুগলিতে সিপিএমের শাখা স্তরের সম্মেলন-পর্ব সবেমাত্র মিটেছে। জেলা নেতৃত্বের দাবি, গ্রামাঞ্চলে নব নির্বাচিত শাখা কমিটির নেতৃত্বে ৬০ শতাংশের বেশি এসেছেন শ্রমিক, কৃষক অথবা খেতমজুর সম্প্রদায় থেকে। তাঁদের মধ্যে আবার তরুণদের সংখ্যাই বেশি। এই পরিবর্তনকে ‘নজিরবিহীন’ বলে দাবি করছেন তাঁরা।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘হুগলি জেলার এই সাংগঠনিক অগ্রগতির কথা বিবেচনা করেই রাজ্য কমিটি এ বার রাজ্য সম্মেলনের দায়িত্ব হুগলি জেলাকে দিয়েছে।’’
জেলায় সিপিএমের শাখা কমিটি রয়েছে ৮৮৯টি। সব ক’টির সম্মেলন শেষ হয়েছে। এখন এরিয়া কমিটির সম্মেলন চলছে। শাখাকে দলের ‘নিউক্লিয়াস’ বলে দাবি করে সিপিএম। জেলায় এই স্তরের সম্মেলন শেষে দলের পর্যবেক্ষণ, শাখা সম্মেলনে উপস্থিতির হার ৯৫ শতাংশ। ৩০ শতাংশ শাখার সম্পাদক বদল হয়েছে। এত সংখ্যক শাখায় সম্পাদক বদল গত কয়েকটি সম্মেলনে হয়নি।
সিপিএমের একটি সূত্রের খবর, শাখা স্তরের নেতৃত্বের একাংশের নিষ্ক্রিয়তা বাম আমলের শেষ দিকেই নজরে এসেছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তা আরও প্রকট হয়। বহু শাখা আক্ষরিক অর্থেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, শাখা কমিটির নেতৃত্বের বড় অংশ এসেছেন মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় থেকে। কৃষক, শ্রমিক, খেতমজুরের প্রতিনিধিত্ব তুলনায় অনেক কম।
দলের এক জেলা নেতার দাবি, এ বার শাখা ও এরিয়া কমিটিতে মধ্যবিত্তদের বাইরে থাকা বিভিন্ন অংশের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব গড়ে তোলার প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলায় এরিয়া সম্মেলন প্রায় শেষ-পর্বে এসে পৌঁছেছে। এই স্তরেও নেতৃত্বের গুণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরিয়া সম্মেলনে উপস্থিতির হার প্রায় ৯৪ শতাংশ। শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর ছাড়াও, শাখা এবং এরিয়া স্তরে নেতৃত্বের জায়গায় আদিবাসী, জনজাতি ও সংখ্যালঘু অংশের প্রতিনিধি আগের থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।