Chandannagar

পোষ্য কুকুর নিয়ে মণ্ডপে ঢোকায় কটূক্তি! মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী চন্দননগরের তরুণী

শনিবার রাতে যখন তাঁর বাবা-মা ঠাকুর দেখতে বার হন, তখন ফাঁকা বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন তরুণী। তাঁর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। চন্দননগর থানা অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৩৬
A woman ends her life in chandannagar allegation for humiliation on social media

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

আলোর চন্দননগরের ফটকগোড়া নন্দঘোষ লেনে দত্ত বাড়িতে নেমে এল অন্ধকার। শনিবার রাতে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে আত্মঘাতী হলেন ওই বাড়ির কন্যা। অভিযোগ, পোষ্য কুকুরকে নিয়ে জগদ্ধাত্রীর মণ্ডপে ঢুকেছিলেন তিনি। তাতেই ভর্ৎসনা সহ্য করতে হয় তাঁকে। পরে সমাজমাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে পোস্ট করে কটূক্তির শিকার হন তিনি। অনুমান, ভর্ৎসনা এবং কটূক্তির কারণে মানসিক অবসাদে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ওই তরুণী। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম সুশ্রিকা দত্ত (২৩)। ফটকগোড়ার বাসিন্দা এবং সেখানকার বারোয়ারির পুজোর সদস্যাও। শুধু তিনি একা নন, তাঁর গোটা পরিবারই জগদ্ধাত্রী পুজোর সঙ্গে যুক্ত। তবে ষষ্ঠীর দিন, বৃহস্পতিবার মাকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ার মণ্ডপে গিয়েছিলেন সুশ্রিকা। সঙ্গে ছিল তাঁর দুই পোষ্য কুকুর। তাদের মধ্যে ছোট কুকুরটিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মণ্ডপে ঢোকেন। অপর কুকুরটিকে নিয়ে বাইরেই ছিলেন সুশ্রিকার মা। অভিযোগ, কুকুর নিয়ে মণ্ডপে ঢোকায় কমিটির এক প্রবীণ সদস্য সুশ্রিকাকে ভর্ৎসনা করেন। ঘটনার পর ‘অপমানে’ বাড়ি চলে আসেন তাঁর কন্যা, এমনই জানান সুশ্রিকার বাবা সুমন।

বাড়ি ফিরে মণ্ডপে ঘটা ঘটানো জানিয়ে সমাজমাধ্যমে দীর্ঘ পোস্ট করেন সুশ্রিকা। সেখানে ফটকগোড়া জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির নামও উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু সমাজমাধ্যমে নেটাগরিকদের একাংশের ব্যঙ্গ এবং কটূক্তির শিকার হতে হয় তাঁকে। যা মেনে নিতে পারেননি সুশ্রিকা। বারোয়ারির তরফেও সমাজমাধ্যমে পাল্টা পোস্ট করা হয়। সেই পোস্টের ছত্রে ছত্রে বোঝানো হয় বিষয়টি নিয়ে ‘সস্তা প্রচার’ পেতেই ওই তরুণী সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন। এমনকি তাঁর বাড়িতে ফোন করেও বিষয়টি নিয়ে নানা কথা বলা হয় বলে অভিযোগ সুমনের। পরে চাপে আগের পোস্ট সমাজমাধ্যম থেকে মুছে ফেলেন সুশ্রিকা।

নতুন পোস্টে সুশ্রিকা লেখেন, সব মিটে গিয়েছে। ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বারোয়ায়রির সদস্যদের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন সুশ্রিকা। তাঁর বাবার অভিযোগ, গোটা ঘটনায় তাঁর কন্যা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। পুজোর মধ্যে নিজেকে ঘরে বন্দি করে রেখেছিলেন। শনিবার রাতে যখন তাঁর বাবা-মা ঠাকুর দেখতে বার হন, তখন ফাঁকা বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন সুশ্রিকা। তাঁর দেহ উদ্ধার করে চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। চন্দননগর থানা অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।

ঘটনা প্রসঙ্গে ফটকগোড়া পুজো কমিটির সম্পাদক বিপ্লব দাস বলেন, ‘‘খুবই মর্মাহত আমরা। ওঁর বাবা যে অভিযোগ করছেন সেটা হয়তো ঘটনার আকস্মিকতায়। পুজো কমিটি এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। সে দিনকার ঘটনাটা খুব সামান্য একটা ঘটনা। ষষ্ঠীর রাত ছিল খুব ভিড় ছিল। সেখানে কুকুর নিয়ে প্রবেশ করায় অনেক দর্শনার্থী সরাসরি পুজো কমিটির দিকে আঙুল তুলেছিলেন। তখন তাঁকে অনুরোধ করা হয় কুকুর নিয়ে মণ্ডপের বাইরে যাওয়ার জন্য। ব্যক্তিগত ভাবে সমাজমাধ্যমে কে কী পোস্ট করেছেন, সে বিষয়ে পুজো কমিটি কিছু জানে না। কেউ কিছু মন্তব্য করে থাকলে তার দায়িত্ব পুজো কমিটির নয়।’’

আরও পড়ুন
Advertisement