CV Ananda Bose

ঘণ্টাদুয়েক সঙ্গে সুকান্ত, তার পরেই রাজ্য নিয়ে কড়া বিবৃতি জারি করলেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস

জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল থাকার সময় রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সংঘাত ছিল প্রতিদিনের ঘটনা। কিন্তু আনন্দ বোসের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩৫
Image of CV Ananda Bose.

শনিবার সকালে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে সাক্ষাতের পরেই বিকেলে কড়া বিবৃতি রাজ্যপালের। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে ঘণ্টাদু’য়েক বৈঠকের পরেই রাজভবনের তরফে ‘কড়া বিবৃতি’ জারি করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শনিবার সকালে রাজভবনে যান বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত। প্রায় দু’ঘণ্টা একান্তে তাঁর বৈঠক হয় রাজ্যপালের সঙ্গে। একটি অভিযোগপত্রও রাজ্যপালের হাতে তুলে দেন তিনি। তার পর বিকালেই রাজভবন থেকে সেই সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে। সেই বিবৃতিতেই আনন্দ বোস রাজ্যের বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে ‘কড়া অবস্থান’ ব্যক্ত করেছেন।

বিবৃতিতে রাজভবন জানিয়েছে, গত দু’মাসের অভিজ্ঞতায় মূলত তিনটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা দরকার। প্রথমত, ভারতের সংবিধানকে অক্ষুণ্ণ রাখা। দ্বিতীয়ত, আইনের শাসন সুনিশ্চিত করা এবং তৃতীয়ত, বাংলার মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা। নিজের তিনটি মূলমন্ত্রের কথা বলার পর পরই বিজেপি সভাপতির সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন সুকান্ত তাঁর কাছে রাজ্যে দুর্নীতি ও বেনিয়মের পাশাপাশি পঞ্চায়েত নির্বাচনে আগাম সন্ত্রাসের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সুকান্তের সঙ্গে বৈঠকের পর জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার ক্ষেত্রে যথা সময়ে ‘কার্যকরী ও সক্রিয়’ হস্তক্ষেপ করা হবে। নির্বাচনে হিংসার কোনও স্থান নেই এবং আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট যাতে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তা-ও নিশ্চিত করা হবে। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে শাসকদলের হিংসার কথা যে বিজেপি সভাপতিই তাঁকে জানিয়েছেন, তা-ও নিজের বিবৃতিতে উল্লেখ করে দিয়েছেন আনন্দ বোস।

Advertisement

তার আগে রাজ্যপালের সঙ্গে সুকান্তের বৈঠক নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ মন্তব্য করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির বিধায়কেরা যে ভাবে রাজ্যপালকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, সুকান্ত সেই বিষয়েই ক্ষমা চাইতে রাজভবনে গিয়েছিলেন। রাজ্যপালের ওই বিবৃতির পর বিরোধী সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘এই রাজ্যপাল একদিন মুখ্যমন্ত্রীকে সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণনের সঙ্গে তুলনা করেন! তার পরে আবার রাজ্যের বিষয়ে কড়া বিবৃতি দেন। উনি তো এই ভাবে নিজের পদটাকেই মর্যাদাহীন করে ফেলছেন। এক একদিন এক এক রকমের কথা বলছেন!’’

জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল থাকার সময় রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সংঘাত ছিল প্রতিদিনের ঘটনা। এমনকি, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রেও রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলত শাসকদল। যে কারণে গত বছর বাদল অধিবেশনে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘আচার্য’ পদে বসানোর বিল পাশ করেছিল রাজ্য সরকার। সেই বিল ধনখড় জমানা থেকেই রাজভবনে আটকে। শনিবারের বিবৃতিতে বর্তমান রাজ্যপাল জানিয়েছেন, আগের নিয়ম মেনে পুরনো নিয়মই বহাল রাখা হবে। অর্থাৎ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর যে বিল রাজ্য সরকার বিধানসভায় পাশ করিয়েছিল, তা রাজভবনের সিলমোহর পাবে কি না, তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হল।

এ ছাড়া লোকায়ুক্ত নিয়োগ নিয়েও বিজেপি সভাপতি তাঁদের আপত্তির কথা রাজ্যপাল আনন্দ বোসকে জানিয়েছিলেন। সে বিষয়ে রাজ্যপাল সরকার পক্ষকে একটি অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) আনার পরামর্শ দিয়েছেন। রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা বিজেপি সভাপতি সুকান্তের সঙ্গে রাজ্যপালের একান্ত বৈঠককে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন। কারণ, সুকান্তের দাবিপত্র হাতে পাওয়ার পরেই রাজ্যপাল রাজ্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের ‘অবস্থান’ জানিয়েছেন।

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত দু’মাসে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে রাজ্যপালের। বিশেষত, তাঁকে লাগাতার কটাক্ষ শুনতে হয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর কাছে। ঘটনাচক্রে, শুভেন্দুকে বলতে শোনা গিয়েছে, রাজ্যপাল ‘ট্র্যাকে’ আসছেন। অর্থাৎ, ‘পথে’ আসছেন। যে ‘পথ’ তাঁরা চান। এর আগে বিজেপি নেতা তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত রাজ্যপালকে রাজ্য সরকারের ‘ফোটোকপি’ বলে আক্রমণ করেছিলেন। স্বপন আরও বলেছিলেন, ধনখড়ের সঙ্গে আনন্দ বোসের কোনও তুলনা হয় না।

পরিস্থিতি ঘোরালো হয় সরস্বতী পুজোর দিন রাজভবনে রাজ্য সরকারের ‘উদ্যোগে’ রাজ্যপালের বাংলা ভাষায় হাতেখড়ি নিয়ে। শুভেন্দু আমন্ত্রিত হয়েও ওই অনুষ্ঠান বয়কট করেছিলেন। বয়কটের কারণ এবং তাঁর উষ্মার কথাও গোপন করেননি বিরোধী দলনেতা। তার পরে বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে বাজেট বক্তৃতা পড়তে এসেও বিজেপি বিধায়কদের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন রাজ্যপাল। বিরোধী বিজেপি বিধায়কেরা রাজ্যপালের বক্তৃতার প্রতিলিপি ছিঁড়েছিলেন প্রকাশ্যেই।

তার পরেই শনিবার সুকান্ত রাজভবনে যান রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে। সে অর্থে এই প্রথম বিজেপির কোনও নেতা রাজ্যপালের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করলেন। তার পরেই রাজ্যপাল ‘কঠোর’ বিবৃতি জারি করেছেন। যা ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’। ঘটনাচক্রে, শনিবার রাজ্যপাল যখন ‘কড়া’ বিবৃতি জারি করছেন, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই কলকাতায় আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। তাঁর সঙ্গে রাতে শুভেন্দু-সুকান্তের বৈঠক হওয়ার কথা। ওই বৈঠকেও রাজ্যপালকে নিয়ে কথা হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। এখন দেখার, রাজ্যপালের বিবৃতির পরে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজভবনের সম্পর্ক কেমন দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন
Advertisement