Prabir Ghosh

প্রয়াত ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রবীর ঘোষ, বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর

বাংলা তো বটেই সারা দেশে কুসংস্কার বিরোধী লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন প্রবীর। তুকতাক, সম্মোহনের মতো বিষয় যে আজগুবি বিষয়, তা হাতেকলমে প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছিলেন প্রবীর।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:০৪
Prabir Ghosh passed away

প্রয়াত প্রবীর ঘোষ। ফাইল চিত্র।

প্রয়াত হলেন ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রবীর ঘোষ। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দমদমের মতিঝিলে নিজের ফ্ল্যাটেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিস ৭৮ বছর। তাঁর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। শনিবার একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তাঁর দেহটি দান করা হবে।

Advertisement

বাংলা তো বটেই, সারা দেশে কুসংস্কার বিরোধী লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন প্রবীর। তুকতাক, সম্মোহনের মতো বিষয় যে আজগুবি, তা হাতেকলমে প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছিলেন প্রবীর। বিজ্ঞানবিষয়ক একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা প্রবীরের ৫ খণ্ডে বিধৃত ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ বইটি এক সময় পাঠকমহলে তীব্র আলোড়ন তৈরি করেছিল। ব্যক্তিজীবনে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা প্রবীর বলতেন, তাঁকে কেউ অলৌকিক শক্তির প্রমাণ দেখাতে পারলেই তিনি নগদ ৫০ লক্ষ টাকা দেবেন। যুক্তিবাদী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাকরি ছেড়েছিলেন তিনি। শহরতলি কিংবা গ্রামে কোনও ঝাড়ফুঁক বা অলৌকিক ঘটনার খোঁজ পেলেই তাঁর প্রতিষ্ঠিত যুক্তিবাদী সমিতিকে নিয়ে সেখানে পৌঁছে যেতেন প্রবীর। হাতেকলমে প্রমাণ দিয়ে দেখাতেন, অলৌকিক বলে কিছুই হয় না। জ্যোতিষ কিংবা ওঝাদের কারবার নিয়ে বহু বার প্রকাশ্যেই সরব হয়েছেন তিনি। আবার ঢাকায় মৌলবাদীদের হানায় মুক্তমনা ব্লগারদের খুন হওয়া নিয়েও মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যুক্তিবাদী সমিতির সভাপতি ছিলেন তিনি।

১৯৪৫ সালের ১ মার্চ অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর। শৈশব কেটেছে পুরুলিয়ার আদ্রায়। পরে বাবার কর্মসূত্রে প্রথমে খড়্গপুর, তার পরে দমদমে চলে আসেন তিনি। দমদমের মতিঝিল কলেজ থেকে স্নাতক হন প্রবীর। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে ছাত্রজীবন থেকে পত্রিকা প্রকাশ করতেন তিনি। যুক্তিবাদী সমিতির কাজে পুরোদমে অংশগ্রহণ করতে ১৯৯৯ সালে ব্যাঙ্কের চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নেন তিনি। কখনও মাদার টেরেজ়ার ‘অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা’ ফাঁস করে দেওয়ার কথা বলে, কখনও আবার বালক ব্রহ্মচারীর মিথ্যাচার নিয়ে সরব হয়ে একাধিক বার বিতর্কে জড়িয়েছেন প্রবীর। তবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের অবস্থান থেকে সরেননি তিনি। এখনও কোনও জায়গায় ভৌতিক ঘটনার খবর এলে, তা যাচাই করতে ছুটে যায় প্রবীরের যুক্তিবাদী সমিতি। কোন কারণে সাধারণ ঘটনাকে অলৌকিক মনে হয়, তা-ও হাতেকলমে বুঝিয়ে দেন তাঁরা।

তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে ভারতীয় বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মণীশ রায়চৌধুরী বলেন, “একজন মানুষের মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু যুক্তিবাদী আদর্শের কখনও মৃত্যু হয় না। ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ সিরিজ-সহ বহু বই যুক্তিবাদী আন্দোলনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রতিটি মানুষ, যাঁরা যুক্তিমনস্ক হওয়ার প্রচেষ্টায় এই সব বই হাতে তুলে নেবেন, নিজের চিন্তা-চেতনাকে উন্নত করে যুক্তিবাদী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, তখনই তাঁদের মধ্যে প্রবীর ঘোষ বেঁচে থাকবেন।” বঙ্গবাসী কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক সুনন্দ পাত্র স্মৃতিচারণ করে বলেন, “সম্মোহন যে আসলে একটা বুজরুকি, তা ভরা সভায় হাতেকলমে প্রমাণ করার লোক বাংলায় খুব কম ছিল। প্রবীর ঘোষ তাঁদের মধ্যে অন্যতম।”

আরও পড়ুন
Advertisement