কোথায় যাবেন জানেন না ভাঙন দুর্গতেরা

erosion: গঙ্গায় ভেঙে পড়ল গ্রাম

ভাঙন শুরু হতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক আমিরুল ইসলাম ভাঙনের দায় চাপিয়েছেন কেন্দ্রের উপর।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শমসেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২১ ০৬:৫৩
ফুঁসছে গঙ্গা। ভাঙনে তলিয়ে গেল বাড়ি।

ফুঁসছে গঙ্গা। ভাঙনে তলিয়ে গেল বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

ভাঙনে শমসেরগঞ্জের মানচিত্র থেকে এক রকম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল নতুন শিবপুর গ্রাম।

গত বছরের ভাঙনেই ৪৩টি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে গ্রাম ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছেন এখানে ওখানে তাঁবুর নীচে বা কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে। তবু নদী থেকে মিটার দশেক দূরে গ্রামের ভিটে মাটি আঁকড়ে ছিলেন রঞ্জন মণ্ডল, ভবেশ মণ্ডলদের দশটি পরিবার। সোমবারের রাতভর ভাঙনে সবকটি বাড়িই তলিয়ে গেল গঙ্গা গর্ভে। এক রকম মুছে গেল গঙ্গা পাড়ের গোটা গ্রামটাই।

Advertisement

ওই এলাকায় গঙ্গার জলস্তর এখনও বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নীচে রয়েছে। কিন্তু গত ক’দিনের আকাশ ভাঙা বৃষ্টি ও নদী পাড়ে গঙ্গার আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউয়ের ধাক্কায় দুপুরের পর থেকেই পাড় ভেঙে গ্রামের দিকে এগোতে শুরু করে নদী। বিকেল থেকে একের পর এক দশ দশটি পাকা বাড়ি তলিয়ে যায় গঙ্গা গর্ভে।
এদিন ভাঙনে তলিয়ে গেছে বিমলা মণ্ডলের বাড়িও। বিমলা বলছেন, “চৌকি, বিছানা, চাল, বাসন পত্র কিছুই টেনে বের করতে পারিনি। বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হচ্ছে যেন আস্ত বাড়িটা কাঁপছে। রাতেই বাসুদেবপুর বেসিক স্কুল ঘরে উঠেছি সকলেই। কিন্তু ঘুমোতে পারিনি গোটা রাত। চোখের সামনে যেন ভাসছে গঙ্গায় বাড়িটা ধসে পড়ার দৃশ্যটা।”

এদিন গঙ্গা গিলে খেয়েছে রঞ্জন মণ্ডলের পাকা বাড়িও। তিনি বলছেন, “বহু কষ্ট করে বাড়িটা যখন তৈরি করি তখন গঙ্গা ছিল প্রায় দুশো মিটারেরও বেশি দূরে। বহু ভরসা নিয়ে এই বাড়িটা করেছিলাম। আশা ছিল আর হয়ত ভাঙবে না। ৫৩টি পরিবার নিয়ে আমাদের এই নতুন শিবপুরের বসতি গড়ে উঠেছিল।গোটা বসতিটাকেই গিলে খেল পদ্মা। এখন না হয় কদিন স্কুলে থাকলাম। কিন্তু পরে কোথায় যাব? এক কাঠা জমি পর্যন্ত নেই, যেখানে তাঁবু খাটিয়েও বাস করতে পারব। সবারই এক অবস্থা।”
নতুন শিবপুরের হরিপদ মণ্ডল। বলছেন, “যখনই ভাঙনে ভিটে হারিয়েছি তখনই দলবেঁধে সকলেই নতুন জায়গায় এসে বসতি গড়েছে। ফরাক্কা ব্যারাজ চালু হতেই যেন নদীর মুখও বদলে গেল। ফের পুব ছেড়ে চরা কেটে নদী এগোতে শুরু করল পশ্চিমে। তবু ভাবতে পারিনি এতটা এগিয়ে এসে তা হানা দেবে বাড়ির দোরগোড়ায়। সব হিসেব যেন ওলোট পালোট হয়ে গেল এক রাতের মধ্যে।”

এদিনের ভাঙন শুরু হতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক আমিরুল ইসলাম ভাঙনের দায় চাপিয়েছেন কেন্দ্রের উপর। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও হেলদোল নেই ভাঙন নিয়ে। এলাকার সাংসদ কংগ্রেসের। একদিনের জন্যও সংসদে মুখ খোলেননি ভাঙনের সমস্যা নিয়ে।” রাজ্য সেচ দফতরের রঘুনাথগঞ্জের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কল্পরূপ পাল জানান, ‘‘নতুন শিবপুরকে গঙ্গা দুদিক থেকে ঘিরে থাকায় ভাঙনের এত তীব্রতা। তার ফলে বাড়িগুলো এক রাতেই এ ভাবে ধসে পড়েছে। এই মুহূর্তে কিছু করার নেই। ভাঙন রোধে সাড়ে ২৭ কোটি টাকার স্থায়ী প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে ওই এলাকার প্রায় দু কিলোমিটার স্পার বাঁধাবার জন্য। সেটা করা গেলে ভাঙন অনেকটাই হয়ত ঠেকানো যেত।”

আরও পড়ুন
Advertisement