ইডি সূত্রের খবর, জলের দরে এই ধরনের বেআইনি রেজিস্ট্রেশন এই প্রথম নয়। ফাইল চিত্র।
মাস তিনেক আগে কয়লা পাচারের মামলায় সিবিআই রাজ্যের এক মন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল বলে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রের খবর। দক্ষিণ কলকাতার গরচা এলাকার আর্লে স্ট্রিটে অভিযানে টাকা উদ্ধারের সময় ইডি জানতে পেরেছে, ১২ কোটি টাকার অতিথি নিবাস মাত্র তিন কোটি টাকায় হস্তান্তরের ঘটনায় রাজ্যের সেই প্রভাবশালী মন্ত্রী জড়িত। তাদের দাবি, এর সঙ্গে জড়িত হিসেবে ওই মন্ত্রী ছাড়াও গজরাজ নির্মাণ সংস্থার অংশীদার বিক্রম শিকারিয়া, তাঁর ব্যবসার অংশীদার মনজিৎ সিংহ গ্রেওয়ালের নাম উঠে এসেছে।
ইডি সূত্রের খবর, জলের দরে এই ধরনের বেআইনি রেজিস্ট্রেশন এই প্রথম নয়। গত সাত বছরে ওই তিন মূর্তির যোগসাজশে ও প্রভাবে আলিপুর সাব-রেজিস্ট্রার দফতরে বাজারদরের থেকে কম দাম দেখিয়ে গজরাজ নির্মাণ সংস্থা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে। আলিপুর সাব-রেজিস্ট্রার দফতরে চিঠি দিয়ে সেই সমস্ত নথি তলব করেছে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, বিক্রম ও মনজিতের ‘মেন্টর’ ওই প্রভাবশালী মন্ত্রীর চাপেই ওই সব রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। তাই গত সাত বছরে গজরাজের যাবতীয় সম্পত্তি নথিভুক্তির নথি খতিয়ে দেখতে চাইছে ইডি। প্রয়োজনে ওই অফিসে সেই সময়ে কর্তব্যরত অফিসারদের তলব করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হতে পারে।
গরচার ওই ঠিকানায় মোট ৫৩টি সংস্থার লাইসেন্স আছে বলে কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর। মেয়র ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (ববি) বলেন, ‘‘৫৩টি কেন, ৫০০ লাইসেন্সও থাকতে পারে। তবে ওগুলো আদতে লাইসেন্স নয়, ‘সার্টিফিকেট অব এনলিস্টমেন্ট’। এটা অনলাইনে হয়। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বৃহস্পতিবার বিকেলে গড়িয়াহাট থানা এলাকার একটি গাড়ি থেকে এক কোটি টাকা উদ্ধার করেছে কলকাতা পুলিশ। সেই বিষয়েও খোঁজখবর শুরু করেছে ইডি। বুধবার কয়লা পাচারের মামলায় আর্লে স্ট্রিটে গজরাজ নির্মাণ সংস্থায় হানা দিয়ে তারা এক কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করতে পেরেছিল। তদন্তকারীদের দাবি, ওই নির্মাণ সংস্থায় আরও কয়েক কোটি টাকা থাকার কথা ছিল। ইডি হানার খবর পেয়ে সেই টাকা চারটি গাড়িতে পাচার করে দেওয়া হয়। তাই গড়িয়াহাটে গাড়িতে পাওয়া টাকার সঙ্গে গজরাজ সংস্থার যোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ইডি-কর্তারা। তাঁরা জানান, প্রয়োজনে এনফোর্সমেন্ট কেস রেজিস্টার (ইসিআর) দায়ের করে কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে ওই মামলার নথি চেয়ে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হতে পারে।
ইডি সূত্রের দাবি, কয়লা পাচারে লভ্যাংশের কোটি কোটি টাকা ভিন্ রাজ্যে জমি ও অন্যান্য সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। গরচা রোডে হানা দিয়ে টাকা উদ্ধারের পাশাপাশি প্রচুর বৈদ্যুতিন নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা। ওই সব নথি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বিক্রমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মনজিৎ ও ওই মন্ত্রী যে কয়লা পাচারের টাকা সম্পত্তি ও ব্যবসায় লগ্নি করেছেন, সেই বিষয়ে প্রচুর নথি তাদের হাতে পৌঁছেছে বলে ইডি-র দাবি।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, মাস তিনেক আগে ওই মন্ত্রীর বাড়িতে সিবিআই তল্লাশিতেও প্রচুর নথি পাওয়া গিয়েছিল। তা ছাড়া কয়লা কাণ্ডে কয়েক জন পুলিশকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওই সমস্ত নথি ও বয়ানের ভিত্তিতেই গজরাজ নির্মাণ সংস্থার হদিস পাওয়া গিয়েছে।
গড়িয়াহাটে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় গাড়িচালক দুলাল মণ্ডল ও মুকেশ সারাসাত নামে দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই টাকা রাখার পক্ষে কোনও নথি দেখাতে না-পারায় পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার আলিপুর আদালত থেকে তাঁরা জামিন পেয়েছেন। জামিনের শর্ত, প্রতি সপ্তাহে এক দিন তদন্তকারী অফিসারের মুখোমুখি হতে হবে এবং আদালতের নির্দেশ ছাড়া কলকাতা ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া যাবে না।