Amartya Sen-Visva Bharati

শান্তিনিকেতন এখন যক্ষপুরী! ‘রক্তকরবী’র মধ্য দিয়ে অমর্ত্যের হেনস্থার প্রতিবাদ, ধর্না প্রতীচীতে

অমর্ত্যকে হেনস্থার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি মেনে শুক্রবার সকালে একত্রিত হন বিশিষ্টজনেরা। ‘প্রতীচী’র সামনে প্রতিবাদ সভার ডাক দেয় সামাজিক মর্যাদা রক্ষা সমিতি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ ১৩:২৬
অমর্ত্যের হেনস্থার প্রতিবাদ ‘রক্তকরবী’ নাটকের মধ্যে দিয়ে।

অমর্ত্যের হেনস্থার প্রতিবাদ ‘রক্তকরবী’ নাটকের মধ্যে দিয়ে। নিজস্ব চিত্র।

অমর্ত্য সেনকে দেওয়া বিশ্বভারতীর উচ্ছেদ-নোটিসের বিরুদ্ধে শুক্রবার থেকে ধর্না-অবস্থানে বসল সামাজিক মর্যাদা রক্ষা সমিতি। সকালে নোবেলজয়ীর ‘প্রতীচী’ বাড়ির সামনে থেকে শান্তিনিকেতন স্টেট ব্যাঙ্ক পর্যন্ত পদযাত্রাও করেন বিশ্বভারতীর আশ্রমিক এবং প্রাক্তনীরা। সেখানে রবীন্দ্রগান এবং ‘রক্তকরবী’ নাটকের মধ্যে দিয়েও প্রতিবাদ করেন শিল্পীরা। পথনাটিকায় নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করেছেন চৈতি ঘোষাল। তিনি বলেন, ‘‘শান্তিনিকেতন এখন যক্ষপুরী হয়ে উঠেছে। আমরা শিল্পীরা তো আমাদের শৈলী দিয়েই প্রতিবাদ করতে জানি। আমার মনে হয়, নন্দিনীর যক্ষপুরীতে রঞ্জনের আসা এবং ‘আয় রে ভাই, লড়ায়ে চল’— এটা বলার প্রয়োজন তৈরি হয়েছে। কারণ, অমর্ত্য সেনের অমর্যাদা করা যেতে পারে না।’’

বীরভূম জেলা আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত অমর্ত্য সেনের জমির বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না বিশ্বভারতী। বৃহস্পতিবার অমর্ত্যের জমি মামলায় এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এই রায়কে একযোগে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী, বর্তমান শিক্ষক থেকে শুরু করে আশ্রমিকদের একটি বড় অংশ। অমর্ত্যকে হেনস্থার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি মেনে শুক্রবার সকালে একত্রিত হন বিশিষ্টজনেরা। ‘প্রতীচী’র সামনে প্রতিবাদ সভার ডাক দেয় সামাজিক মর্যাদা রক্ষা সমিতি। তাদের পদযাত্রায় পা মেলান আশ্রমিক স্বপন ঘোষ, কুন্তল রুদ্র, সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যরা।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি-বিতর্কে অমর্ত্যের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন বার বার। বুধবার মালদহ সফরে যাওয়ার পথে বোলপুর স্টেশনে দলের নেতাকর্মীদের বিশ্বভারতীর উচ্ছেদ-নোটিসের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী ৬ এবং ৭ মে অমর্ত্য সেনের বাড়ির সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করার নির্দেশ দেন। সেই প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে তৃণমূল। জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল থেকেই প্রতীচীর সামনে ৬০-৭০ জন বাউল শিল্পীর পাশাপাশি, অনেক বিশিষ্টজনও শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বসবেন। সেখানে গানবাজনার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হবে। ওই প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত থাকার কথা কবীর সুমন, যোগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসন্ন, গৌতম ঘোষের। থাকবেন বিশ্বভারতীর শিক্ষক, প্রাক্তনীদের অনেকে।

এই কর্মসূচির কারণে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে ইতিমধ্যেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।’’

বিশ্বভারতীর উচ্ছেদ-নোটিসের উপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে সম্প্রতি বীরভূম জেলা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নোবেলজয়ীর আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী-সহ আরও কয়েক জন আইনজীবী। জেলা আদালত সেই মামলার পরবর্তী শুনানি দিন ধার্য করেছে ১৫ মে। কিন্তু, বিশ্বভারতীর নোটিস অনুযায়ী প্রতীচী বাড়ির ‘বিতর্কিত’ ১৩ ডেসিমেল জমি খালি করার সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৬ মে। অর্থাৎ, শনিবার। সে জন্য স্থগিতাদেশ চেয়ে মঙ্গলবার হাই কোর্টে আবেদন করেন নোবেলজয়ীর আইনজীবীরা। তারই প্রেক্ষিতে উচ্ছেদ-নোটিসে স্থগিতাদেশ দিয়ে হাই কোর্টের নির্দেশ, ১০ মে দুপুর ২টোয় জেলা আদালতে এই সংক্রান্ত মামলাটির শুনানি করতে হবে।

এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর। তাঁর কথায়, ‘‘এটা হওয়াই উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। উপাচার্য কোনও দিন ওই জমি নিতে পারবেন না।” বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত প্রাক্তন উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, “এই রায় খুবই যথাযথ। এতে অমর্ত্য সেন অনেকটাই স্বস্তি পেলেন।” প্রতীচী বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা গীতিকণ্ঠ মজুমদার বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বিশ্বভারতীর কাছে সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা তা না দেওয়ায় আদালতে যেতে হয়। এই রায়ে আমরা খুবই খুশি। তবে একজন বিশ্ববরেণ্য মানুষের প্রতি উপাচার্যের আরও সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত ছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement