COVID-19

ঢেউ উঠছে করোনার, টিকা-টেস্ট না বাড়ালে ভেসে যাবে বাংলা, চাই সচেতনতায় জোর

ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণের হার ছাড়িয়ে গিয়েছে ৭ শতাংশের বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১,৯৬১ জন। কলকাতায় আক্রান্ত ৬০৬ জন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২১ ২০:২৬
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিয়মকানুন সহজ করা সত্ত্বেও রাজ্যে দৈনিক টিকাকরণের পরিমাণ বাড়ছে না। কিন্তু রাজ্যে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। পশ্চিমবঙ্গ এবং কলকাতা কি আবার লকডাউনের পথে চলেছে? আপাতত বিভিন্ন মহলে এই জল্পান জোরদার হতে শুরু করেছে। গত ১৫ দিনে যে ভাবে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কিত চিকিৎসকরা। দ্রুত বেশি সংখ্যক মানুষকে করোনার প্রতিষেধক টিকা দেওয়া না গেলে এবং সচেতন না করা গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেই আশঙ্কা তাঁদের।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, টিকাকরণের নিয়মকানুন সহজ করা সত্ত্বেও দৈনিক টিকাকরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তার পিছনে অন্তত তিনটি কারণ রয়েছে বলেও তাঁরা মনে করছেন। প্রথমত, ভোটের সময় যে ভাবে বিধিনিষেধ উড়িয়ে প্রতিনিয়ত মিটিং-মিছিল হচ্ছে, তার জেরে সংক্রমণের হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের হাতে করোনা নিয়ন্ত্রণের ‘অস্ত্র’ থাকলেও, তা প্রয়োগে ‘অনীহা’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখনই কড়া পদক্ষেপ না করলে দৈনিক রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০,০০০ ছাড়িয়ে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা।

Advertisement

দ্বিতীয়ত, জনতাকে সচেতন না-করা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে দৈনিক সংক্রমণ ছাড়িয়ে গিয়েছে দৈনিক এক লক্ষেরও বেশি। মহারাষ্ট্রে দৈনিক ৫০,০০০-এর উপর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। মহারাষ্ট্র ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, দিল্লি এবং গুজরাতেও করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বাংলায় যে ভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছেন চিকিৎসকেরা।

ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণের হার ছাড়িয়ে গিয়েছে ৭ শতাংশের বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১,৯৬১ জন। কলকাতায় আক্রান্ত ৬০৬ জন। তার পরেই উত্তর ২৪ পরগনা— ৫০৩ জন। রাজ্যে মোট সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যাও ১০,০০০ পেরিয়েছে। চিকিৎসকদের অধিকাংশের বক্তব্য, এমন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়েও হুঁশ ফিরছে না মানুষের। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও নির্বাচন নিয়ে মেতে রয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনও তাদের ‘ভূমিকা’ পালন করছে না। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ লক্ষ মানুষকে টিকার আওতায় আনতেই হবে।

চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জনসচেতনতার কাজে তেমন ‘সক্রিয়’ নয়। এখনও মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট নিরুৎসাহ রয়েছে। তা কাটানোর দায়িত্ব নিতে হবে প্রশাসনকেই। স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য বলছে, রাজ্যে গড়ে দৈনিক করোনার টিকা নিচ্ছেন এক থেকে দেড় লক্ষ মানুষ। কোনও কোনও দিন তা দু’লক্ষেও পৌঁছে যাচ্ছে। তবে এই লক্ষ্যমাত্রাও যথেষ্ট নয় বলেই অভিমত চিকিৎসকদের।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের তরফে চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ি বলেন, ‘‘গোটা দেশেই টিকা দেওয়ার হার ৪ থেকে ৫ শতাংশ। রাজ্যে আরও বেশি সংখ্যায় মানুষকে টিকা দেওয়া প্রয়োজন রয়েছে। ৪৫ বছরের উপরে যারা রয়েছেন, তাঁরা টিকা পাচ্ছেন। সব প্রাপ্তবয়স্কদেরই অবিলম্বে টিকা দেওয়া দরকার।’’

তবে পাশাপাশিই কৌশিকের মতে, ‘‘টিকার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি কোভিড বিধি মেনে চলা। সেটা একেবারেই হচ্ছে না। ভোট প্রচারে বেরিয়ে প্রার্থীদের মুখে একবারও কোভিড বিধি নিয়ে কোনও বক্তব্য শোনা যাচ্ছে না।’’

তৃতীয়ত, টিকা নিতে জনতার অনীহা। চিকিৎসক কুণাল সরকার মনে করেন, টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে ‘অজ্ঞতা এবং ভয়’ রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের মনের ভয় দূর করার কোনও প্রচেষ্টা প্রশাসন করছে বলে মনে হচ্ছে না। ভোট উৎসব নিয়ে মেতে রয়েছেন সকলে। শুনতে খারাপ লাগলেও পরবর্তীকালে এটা গণহত্যার রূপ না নেয়! তাই বহু সংখ্যক মানুষকে দ্রুত টিকা দেওয়া জরুরি।’’

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিক অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফ থেকে যথেষ্ট পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বেশি সংখ্যক মানুষ যাতে টিকা পান, তার জন্য রবিবারেও টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে হাসপাতালগুলিতে। দৈনিক আরও বেশি করে করোনা পরীক্ষার চেষ্টাও চলছে।’’

তবে চিকিৎসকদের দাবি, বাস্তব চিত্র ঠিক তার উল্টো। রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দৈনিক দু’ হাজারের দোরগোড়ায়। এখনও পরীক্ষা হয়ে চলেছে ২৫,০০০ আশপাশে। পরীক্ষা বাড়ছে না। আক্রান্ত বাড়ছে। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে চিকিৎসক মহল। তারা নির্বাচন কমিশনকেও মনে করিয়ে দিয়েছে, সতর্ক না হলে করোনার ঢেউয়ে ভেসে যাবে বাংলা।

আরও পড়ুন
Advertisement