CBI and NSG in Sandeshkhali

সিবিআই-এনএসজি, সঙ্গী রোবটও! ১২ ঘণ্টারও বেশি অস্ত্র-তল্লাশি সন্দেশখালিতে, কী মিলল শেষ পর্যন্ত?

খাল, বিল ঘেরা প্রত্যন্ত সন্দেশখালি তো বটেই, গোটা বাংলায় এমন যন্ত্র ব্যবহার করে বোমা খোঁজার কথা স্মরণাতীত কালের মধ্যে মনে করতে পারছেন না কেউ। শুক্রবারের সন্দেশখালি দেখে ফেলল তা-ও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৫৩
সন্দেশখালিতে বোমা খুঁজতে নামল রোবট।

সন্দেশখালিতে বোমা খুঁজতে নামল রোবট। —নিজস্ব চিত্র।

ভিনগ্রহে পাঠানো স্বয়ংক্রিয় যানের মতো চেহারা। রং কালো। শরীরের দু’পাশে ছ’টি চাকা। ক্যাটারপিলার ট্র্যাক্টে মোড়া চাকা গড়াচ্ছে এ দিক, সে দিক। কাজ তার বোমা খোঁজা এবং তা নিষ্ক্রিয় করা। শুক্রবারের সন্দেশখালিতে এই ‘ক্যালিবার’ যন্ত্র দিয়েই চিরুনি তল্লাশি চালাল এনএসজি। খাল, বিল ঘেরা প্রত্যন্ত সন্দেশখালি তো বটেই, গোটা বাংলায় এমন যন্ত্র ব্যবহার করে বোমা খোঁজার কথা স্মরণাতীত কালের মধ্যে মনে করতে পারছেন না কেউ। শুক্রবারের সন্দেশখালি দেখে ফেলল তা-ও।

Advertisement

ঘড়িতে সময় তখন সকাল ৮টা। কলকাতার অফিস থেকে ‘মিশন সন্দেশখালি’ আরম্ভ করে সিবিআই। তার পর দিনভর উত্তর ২৪ পরগনার এই প্রত্যন্ত দ্বীপে তল্লাশি অভিযান চালালো সিবিআই। কখনও শাহজাহান ঘনিষ্ঠের বাড়ি ঘিরে ধরে তল্লাশি আবার কখনও মাঠে, ময়দানে বোমা, অস্ত্রের খোঁজে খানাতল্লাশি। সিবিআই সূত্রে খবর ছিল, অস্ত্র মিলেছে শাহজাহানের পাড়ায়। শাহজাহান শেখের এক ঘনিষ্ঠের আত্মীয় আবু তালেব মোল্লার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেখানে উদ্ধার হয় বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র। এই সময় সিবিআই ডেকে পাঠায় এনএসজিকে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সন্দেশখালিতে চলে আসেন এনএসজি কম্যান্ডোরা। আসে অত্যাধুনিক বিস্ফোরক সন্ধানী রোবটও।

গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালির সরবেড়িয়া গ্রামে তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়েছিলেন ইডি। কিন্তু শাহজাহানের অনুগামীদের মারমুখী মেজাজের সামনে কার্যত প্রাণ নিয়ে পালাতে হয় তাঁদের। কয়েক জন আহত হন। খোয়া যায় তদন্তের জন্য সঙ্গে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র। তার পর কিছু দিন শান্ত থাকার পর ফেব্রুয়ারির গোড়ায় এলাকার কতিপয় তৃণমূল নেতার ‘অত্যাচার’-এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন সন্দেশখালির মহিলারা। যে আন্দোলনে তোলপাড় পড়ে যায় রাজ্যে। মিনাখাঁ থেকে রাজ্য পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেফতার করলেও আন্দোলনে ভাটা পড়েনি। এই প্রেক্ষাপটে দেশে দ্বিতীয় দফার লোকসভা ভোটের দিন ইডির খোয়া যাওয়া জিনিস খুঁজতে সন্দেশখালিতে তল্লাশি অভিযান শুরু করে সিবিআই। দিনভর তল্লাশি চলে। উদ্ধার হয় অস্ত্রশস্ত্র, পরিচয়পত্র, নথি। সন্ধ্যায় সিবিআইয়ের জারি করা প্রেস বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ইডির জিনিসপত্র এবং আরও কিছু সন্দেহজনক জিনিস লুকিয়ে রাখা হতে পারে শাহজাহানের অনুগামীদের বাড়িতে, এই খবর পেয়ে শুক্রবার তল্লাশি অভিযান শুরু করে সিবিআই। ইডির খোয়া যাওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে কিনা তা সিবিআই না জানালেও সন্দেশখালিতে শাহজাহান অনুগামীদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র, শাহজাহানের সচিত্র পরিচয়পত্র এবং বেশ কিছু নথি।

প্রেস বিবৃতিতে সিবিআই জানায়, তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছে, তিনটি বিদেশি রিভলভার, একটি ভারতীয় রিভলভার, কোল্ট সংস্থার তৈরি পুলিশের ব্যবহার করার একটি রিভলভার, বিদেশে তৈরি একটি পিস্তল, একটি দেশি বন্দুক, ৯ মিলিমিটারের ১২০টি বুলেট, পয়েন্ট ৪৫ ক্যালিবারের ৫০টি কার্তুজ, ৯ মিলিমিটার ক্যালিবারের ১২০টি কার্তুজ, পয়েন্ট ৩৮০ কার্তুজ ৫০টি, পয়েন্ট ৩২ কার্তুজ আটটি।

দিনভর তল্লাশি চালানোর পর রাত ৯টা ৫৪ মিনিটে সন্দেশখালির সরবেড়িয়া মল্লিরপুরের আবু তালেব মোল্লার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সিবিআই এবং এনএসজি আধিকারিকরা। বাড়ি থেকে কিলোমিটার খানেক দূরত্বে একটি নির্জন জায়গায় বালির বস্তা দিয়ে ঘিরে চারটি বোমাও নিষ্ক্রিয় করে এনএসজি। তার পর উদ্ধার হওয়া অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যায় এনএসজি।

যদিও এ নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, সন্দেশখালিতে ইডি, সিবিআই, এনআইএ-র পর এনএসজিও এল! আর কী? সেনা নামাতে হবে? পাল্টা তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এক্সে লেখেন, ‘‘সন্দেশখালি ইস্যু জিইয়ে রাখার জন্য পরিকল্পিত চক্রান্তে অতিনাটকীয় কাজকর্ম করে ভোট প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে দিল্লির তরফ থেকে। আগাম সাজানো নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। খবর ছড়িয়ে, যন্ত্র নামিয়ে বাজার গরম করছে। পুলিশের আরও সতর্ক থাকা দরকার।’’

আরও পড়ুন
Advertisement