‘বিজয় দিবস’ উদযাপনে সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে প্রথম ‘বিজয় দিবসে’ এ রাজ্যে উঠে এল পড়শি দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গই। হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের উপরে নিপীড়ন বন্ধ করতে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে কূটনৈতিক ভাবে আরও সক্রিয় হতে হবে বলে ফের দাবি তুলল কংগ্রেস। ‘বাঙালি হিন্দু সুরক্ষা সমিতি’র মিছিল ও সমাবেশ থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে আক্রমণের বিরুদ্ধে সরব হলেন বিজেপি নেতারাও।
মুক্তিযুদ্ধের ‘বিজয় দিবস’ উপলক্ষে সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় দফতর ফোর্ট উইলিয়ামে সোমবার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাংলা ও ভারতের ভূমিকা, যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন, তাঁদের কথা ভোলা সম্ভব নয়। এখন বাংলাদেশের কী অবস্থা, জানি না। এই নিয়ে আমার বলা উচিতও নয়। বিষয়টা কেন্দ্র ও দেশের সেনাবাহিনীর উপরে নির্ভরশীল।’’ মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানাই। আমার বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। তিনি ভারত-চিন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে আমাদের দেশের সেনাবাহিনীর কথা বলতেন। বিজয় দিবসের দিন দেশের জন্য শহিদদের স্মরণ করি। তাঁরা জীবন দিয়েছিলেন, কিন্তু হারেননি। দেশের সেনাবাহিনীর জন্য আমরা সব সময় গর্ব অনুভব করি।”
ফোর্ট উইলিয়ামের বিজয় স্মারক সৌধ থেকে মাটি নিয়ে এ দিন ময়দানের অন্য দিকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। তার পরে মিছিল ছিল বাংলাদেশ ডেপুটি হাই-কমিশন পর্যন্ত। ওই দফতরের আগে বেকবাগান মোড়ে অবশ্য মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার-সহ দলের প্রদেশ ও বেশ কিছু জেলার নেতৃত্ব। সেখানে এবং কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরার অবদান সংক্রান্ত তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী করেছে কংগ্রেস। প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্করের বক্তব্য, ‘‘ইন্দিরা গান্ধী সাহস দেখিয়েছিলেন, যা পেরেছিলেন, বিশ্বগুরু তা পারছেন না। যে কোনও রাষ্ট্রের দায়িত্ব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। এর পাশাপাশি বিদেশ নীতি গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক কালে কেন্দ্রের সরকারের বিদেশ নীতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। কূটনৈতিক দৌত্য, আলোচনা কোথায়?’’
আরএসএস-প্রভাবিত হিন্দু সুরক্ষা সমিতির ডাকে এ দিন রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি। তবে গোটা কর্মসূচিতে ছিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও তাঁর সময়কার দুই সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সায়ন্তন বসু। মঞ্চে ছিলেন জিষ্ণু বসু, প্রদীপ্তানন্দ (কার্তিক) মহারাজ প্রমুখ। শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশন-সহ একাধিক জায়গা থেকে মিছিল এসেছিল সমাবেশ-স্থলে। মঞ্চ থেকে উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার নিয়ে সরব হয়েছেন। দিলীপ বলেছেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস কি মৌলবাদীদের পার্টি হয়ে গিয়েছে? যাঁরাই তাদের ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন, তাঁদেরই উদ্বাস্তু বলে দেশ থেকে তাড়ানোর চক্রান্ত করা হচ্ছে।’’