প্রতীকী ছবি
ভবিষ্যতে সন্তানের আশায় শুক্রাণু সংগ্রহ করে রাখেন অনেকে। তারপর অন্য যে কোনও সময় সন্তানের পরিকল্পনা করলে কাজে আসে জমিয়ে রাখা শুক্রাণু। কিন্তু তা বলে কী সন্তানের আশায় কোভিড রোগীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে রাখা সম্ভব? সম্প্রতি গুজরাত হাইকোর্টের নির্দেশে কোভিড রোগীর শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়েছে সেখানে। শুধু গুজরাতেই নয় কোভিড রোগীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে কলকাতাতেও। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করে কোভিড রোগীও তাঁর শুক্রাণু পাঁচ বছর পর্যন্ত রেখে দিতে পারেন। তবে করোনা সংক্রণের ভয়ে সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকলেও এই মুহূর্তে কোভিড আক্রান্তের শুক্রাণু সংরক্ষণে রাজি নয় শহরের দু’টি বেসরকারি হাসপাতাল।
গত কয়েকদিনে সবার নজর কেড়েছে গুজরাতের এক মহিলার আবেদন। তাঁর স্বামী করোনা আক্রান্ত হয়ে লাইফ সাপোর্টে হাসপাতালে লড়াই চালাচ্ছিলেন।চিকিৎসক ২৪ ঘন্টা সময় দিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানায় ওই মহিলার পরিবার। হাতে সময় কম কিন্তু স্ত্রী সন্তান ধারণ করতে চান। অগত্যা ওই মহিলা মঙ্গলবার গুজরাত হাইকোর্টে তাঁর স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহের আবেদন জানান। ওই দিনই মহিলার আবেদন মেনে নেয় কোর্ট। মঙ্গলবার রাতেই ওই কোভিড আক্রান্তের শুক্রাণু সংগ্রহ করে রাখা হয় এক বেসরকারি হাসপাতালে।
ওই একই পদ্ধতিতে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগীর শুক্রাণু সংগ্রহ এবং ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করা সম্ভব । বেঙ্গল ইনর্ফাটিলিটি অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ থেরাপি হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর জানান, কোভিড রোগে আক্রান্ত রোগীর শুক্রাণু সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা এবং সতর্কতা নিতে হবে। কম তাপমাত্রায় লিক্যুইড নাইট্রোজেনে শুক্রাণু সঞ্চয় করে রাখা হয়। তবে এই ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে সবসময় চিকিৎসা এবং যুক্তি দুটোর উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
গৌতম জানান, কোনও কোভিড আক্রান্ত রোগী তাঁর শুক্রাণু কেন রেখে দিতে চাইছেন তা আগে বিচার করে দেখতে হবে। শুক্রাণু সঞ্চয় করে রাখা একান্ত জরুরি হলে কোভিড আক্রান্তের থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে আনতে হবে। ওই শুক্রাণু আলাদা ক্যানে পৃথক জায়গায় রাখতে হবে। অন্যান্যদের নমুনার সঙ্গে একত্রে না রাখায় উচিত। যদিও এখনও পর্যন্ত শুক্রাণু তে কোভিড ভাইরাসের উপস্থিতি এবং সংক্রমণ সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়াও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুক্রাণু বছরের পর বছর লিক্যুইড নাইট্রোজেনে রেখে দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে কয়েক বছর পর শুক্রাণুতে ভাইরাস বেঁচে থাকবে কি না তা গবেষণার বিষয় বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
গুজরাতের যে করোনা আক্রন্তের শুক্রাণু সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে। গৌতম জানান, শুক্রাণু সংগ্রহ নিয়ে গুজরাত আদালতের রায়কে স্বাগত জানাই। বিদেশে নাতি নাতনির আশায় মরণাপন্ন অবিবাহিত সন্তানেরও শুক্রাণু সংগ্রহ করে রাখার আবেদন জানান বাবা মায়েরা। আমাদের দেশেও সংক্রামক রোগে আক্রান্তদের শুক্রাণু সংগ্রহের ব্যবস্থা বাড়াতে হবে।