ছবি: প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়ো থেকে।
তৃণমূল টাকা পাইয়ে দিচ্ছে। সমর্থন করবেন তো? সন্দেশখালির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের নাকি এ কথাই বলা হচ্ছে, এমনই অভিযোগ উঠল শাসকদলের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসায় বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আনন্দবাজার অনলাইন অবশ্য ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি। ভিডিয়োটিতে দেখা গিয়েছে, সমর্থনের বিনিময়ে এক মহিলাকে সাহায্যের আশ্বাস দিচ্ছেন আর এক মহিলা। দাবি, যিনি সাহায্যের আশ্বাস দিচ্ছেন, তিনি তৃণমূলের এক নেত্রী। তাঁর নাম দীপিকা পোদ্দার। তিনি সন্দেশখালির পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। তিনি যে মহিলাকে টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলছেন, তিনি সন্দেশখালির বাসিন্দা।
ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসার পরেই শাসকদলকে বিঁধতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে যা ঘটেছে, তা গণরোষের ফল। তৃণমূল যদি ভাবে এ ভাবে টাকা দিয়ে আবার সমর্থন আদায় করবে, তা হলে তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছে।’’ সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূল তো অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। সেই সব প্রতিশ্রুতি তো রাখলই না। উল্টে চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দিয়েছে। আর এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকার বিনিময় সমর্থন চাইছে! গণতন্ত্রকে আর কত লজ্জায় ফেলবেন।’’
সন্দেশখালিতে শাহজাহান শেখ, তাঁর শাগরেদ উত্তম সিংহ ও শিবপ্রসাদ হাজরা (শিবু)দের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে চলতি মাসের শুরুতে উত্তপ্ত হয়েছিল সন্দেশখালি। তার পর থেকেই স্থানীয়দের ক্ষোভ প্রশমনে নেমেছে শাসকদল। উত্তম-শিবুরা যাঁদের জমির লিজ়ের টাকা দেননি বলে অভিযোগ, তাঁদের পাওনা টাকা মেটাতে শুরু করেছে তৃণমূল। তার জন্য বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন শাসকদলের প্রতিনিধিরা। অভিযোগ, তাঁরাই ভোটে সমর্থনের বিনিময়ে সাহায্যের আশ্বাস দিচ্ছেন। প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়ো ঘিরে অভিযোগ, তৃণমূলের ওই নেত্রী দীপিকা সন্দেশখালির এক মহিলার বাড়ি গিয়ে বলছেন, ‘‘আপনাকে তো টাকা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনি তৃণমূলকে সমর্থন করবেন তো?’’
এ বিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা বসিরহাটে তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সুজিত বসু বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। জেনেই যা বলার বলব। না জেনে কিছু বলতে পারব না।’’
এক দিকে প্রশাসন, অন্য দিকে দল। ‘জোড়া অস্ত্রে’ সন্দেশখালির ‘ক্ষত’ মেরামতিতে নেমেছে শাসকদল। গত কয়েক দিন ধরেই তৃণমূলের প্রতিনিধি দল বাড়ি বাড়ি ঘুরে সন্দেশখালির সাধারণ বাসিন্দাদের ক্ষোভ-অভিযোগের কথা শুনছিল। ‘দুয়ারে সরকার’-এর ধাঁচে রবিবার থেকে সেখানে শিবিরও বসিয়েছে প্রশাসন। সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ আছড়ে পড়ার পর গত মঙ্গলবার সন্দেশখালি গিয়ে এলাকা ঘুরে পার্থ স্বীকার করেছিলেন, গত দু’বছর ইজারার টাকা, ভেড়ির টাকা না দেওয়ার অভিযোগ আছে। যাঁদের টাকা ফেরত পাওয়ার কথা, তাঁদের টাকা ফেরত দেবে দল। সেই মতো স্থানীয় ভাবে একটি কমিটিও গঠন করেছিল তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর, সেই দলে রয়েছেন সন্দেশখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গণেশ হালদার, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অষ্টমী সর্দার এবং তৃণমূলের এসসি-এসটি-ওবিসি সেলের নেতা মহেশ্বর সর্দার। সেই দলে দীপিকা কী করে এলেন, তা নিয়ে শাসকদলের অন্দরে ধন্দ তৈরি হয়েছে। ভিডিয়ো প্রসঙ্গে সন্দেশখালির দায়িত্বপ্রাপ্ত আর এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘ওই মহিলা সদস্যকে এ রকম কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ’’