মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার অপেক্ষা। তার আগেই রাজ্য বাজেটে অনেক কিছুর কথা ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বৃহস্পতিবার তৃণমূল সরকারের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যে রাজ্য বাজেট পেশ করেছেন তাতে সমাজের সব ক্ষেত্রকেই ছোঁয়ার চেষ্টা রয়েছে। মহিলাদের হাতে যাতে বেশি টাকা যায় তা দেখার পাশাপাশি নতুন ভোটার থেকে মৎস্যজীবী বা শ্রমিক শ্রেণির কথাও ভাবা হয়েছে। রাজ্য বাজেটে যা বলা হয়েছে তাতে ভোটের বছরে সবার পকেটেই বাড়তি অর্থ ঢুকবে।
মহিলাদের জন্য
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনে করা হয়, সেই ঘোষণার জেরেই বিধানসভায় মহিলা ভোটারদের বড় অংশের সমর্থন পেয়েছিল তৃণমূল। লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই মহিলা ভোটারদের জন্য খুশির বার্তাই দিল রাজ্য সরকার। সাধারণ শ্রেণির মহিলারা এখন মাসে ৫০০ টাকা করে এই প্রকল্প থেকে পান। সেটা বৃদ্ধি পেয়ে হচ্ছে এক হাজার টাকা। এর পাশাপাশি তফসিলি জাতি ও জনজাতির মহিলাদের মাসে পাওনা এক হাজার থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য
মহার্ঘ ভাতা নিয়ে অনেক দিন ধরেই চাপে রয়েছে রাজ্য সরকার। কলকাতা হাই কোর্টের রায় রাজ্যের বিরুদ্ধে যাওয়ায় মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক মাস আগেই চার শতাংশ ডিএ বাড়িয়েছিলেন মমতা। তাতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দাঁড়িয়েছিল ১০ শতাংশ। যা চালু হয়েছে জানুয়ারি মাস থেকে। বাজেটে নতুন করে আরও চার শতাংশ ডিএ-র ঘোষণা করা হয়েছে। যা কার্যকর হবে আগামী মে মাস থেকে। তবে রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির দাবি মতো, এর পরেও কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ডিএ-র ফারাক থেকে যাবে ৩২ শতাংশ।
সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্য
বাজেটে সিভিক ভলান্টিয়ারদের জোড়া সুখবর মিলল। এক দিকে যেমন ভাতা বেড়েছে, তেমনই পুলিশে চাকরির সুযোগও বৃদ্ধির ঘোষণা হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ গ্রিন পুলিশ, ভিলেজ পুলিশের ভাতা মাসে এক হাজার টাকা বেশি করা হয়েছে। এ জন্য ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি এখন থেকে রাজ্য পুলিশের ২০ শতাংশ চাকরি সংরক্ষিত থাকবে সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্য, যা এত দিন ১০ শতাংশ ছিল।
চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য
রাজ্যের ‘সি’ ও ‘ডি’ গ্রুপের চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি পেল। ‘সি’ গ্রুপের ক্ষেত্রে মাসিক আয় বাড়বে তিন হাজার টাকা। আর ‘ডি’ গ্রুপের ক্ষেত্রে মাসিক আয় বাড়বে সাড়ে তিন হাজার টাকা। চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা অবসরের পরে এখন পান দু’লাখ টাকা। এটা বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচ লাখ টাকা হচ্ছে।
১০০ দিনের শ্রমিকদের জন্য
১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের মতান্তর চলছেই। যার জেরে আটকে রয়েছে রাজ্যের প্রাপ্য। যা নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির রাজনৈতিক লড়়াইও চলছে। এর মধ্যে মমতা সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন ২১ লাখ শ্রমিকের প্রাপ্য টাকা রাজ্য সরকার ফেব্রুয়ারি মাসে দিয়ে দেবে। এই সংক্রান্ত বিভাগীয় নির্দেশিকাও দিয়েছে নবান্ন। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে টাকা দেওয়া শুরু হবে। সেই বাবদ রাজ্য খরচ করবে ৩৭০০ কোটি টাকা। ফলে ১০০ দিনের শ্রমিকরা ভোটের আগে হাতে টাকা পাবেন।
শ্রমিকদের জন্য প্রকল্প
১০০ দিনের কাজের টাকা কেন্দ্রের বদলে রাজ্য দিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নতুন ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার বাংলার শ্রমিকদের বছরে ৫০ দিনের কাজ নিশ্চিত করবে এই প্রকল্পে। রাজ্যের প্রতিটি জব কার্ড হোল্ডার এই প্রকল্পের আওতায় কাজের সুযোগ পাবেন।
মৎস্যজীবীদের জন্য
রাজ্যে আরও একটি নতুন প্রকল্প নিয়ে আসতে চায় সরকার। মৎস্যজীবীদের জন্য এই প্রকল্পের নাম ‘সমুদ্রসাথী’। এই প্রকল্পে মৎস্যজীবীরা বছের ১০ হাজার টাকা পাবেন। তবে প্রতি মাসে নয়। এই প্রকল্পে বর্ষার দু’মাস ভাতা বাবদ মৎসজীবীদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। কারণ, এই সময়ে মৎস্যজীবীদের আয় হয় না। সেই কারণেই এই প্রকল্প। বরাদ্দ করা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। উপকৃত হবেন দু’লক্ষ মৎস্যজীবী।
পড়ুয়াদের জন্য
এখন দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা শিক্ষাবর্ষের শুরুতে লেখাপড়ার সুবিধার জন্য স্মার্টফোন পায়। এখন সেটা মিলবে মাধ্যমিক পাশের পরে স্কুলে ভর্তি হলেই। বাজেটের ঘোষণা, একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাও স্মার্টফোন পাবেন। এ জন্য এই খাতে ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মিড ডে মিলের রাঁধুনিদের জন্য
সরকারি স্কুলে মিড-ডে মিল রাঁধুনিরা এখন মাসে ভাতা পান ১০০০ টাকা। এই ভাতা কম বলে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে। এ বার রাজ্য বাজেটে তা বৃদ্ধি পেল। এখন থেকে প্রতি মাসে তাঁরা পাবেন ১,৫০০ টাকা করে। রাজ্যে মিড-ডে মিলের রাঁধুনি আছেন ২ লাখ ৩০ হাজার। এ জন্য ১৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করছে রাজ্য সরকার।