মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যানেল থেকে পাওয়া।
নাম নিলেন না। কিন্তু বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে নিজের বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপিকে আক্রমণ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যের শুরুতে বাংলায় কেন শিল্পপতিরা বিনিয়োগ করবেন তা সবিস্তারে তুলে ধরেন মমতা। আর শেষের দিকে গিয়ে জানান, জিএসটি বাবদ প্রাপ্য অংশ কেন্দ্রের কাছ থেকে পাচ্ছে না বাংলা। একই সঙ্গে একশো দিনের কাজের টাকা নিয়েও অভিযোগ তোলেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘রাজ্য কর নিতে পারে না। কেন্দ্র আদায় করে বাংলাকে দেয়। আমাকে দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমরা নিজেদের অংশ পাচ্ছি না। একশো দিনের কাজের টাকাও পাচ্ছি না। শ্রমিকেরা বেতন পাচ্ছেন না।’’
এই রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ নিয়ে বলার শুরুতে একই ভাবে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-সহ অন্যান্য বিরোধী দলকে নিশানা করেন মমতা। তবে এ ক্ষেত্রেও তিনি কোনও দলের নাম নেননি। বক্তৃতার শুরুতেই মমতা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে কোনও ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি নেই। বিবেকানন্দ বলেন, আপনি নিজেকে শক্তিশালী ভাবলে আপনি শক্তিশালী, দুর্বল ভাবলে দুর্বল।’’ এর পরেই মমতা বলেন, ‘‘কিছু রাজনৈতিক দল রাজ্যের বদনাম করার জন্য শুধু এটাই বলতে থাকে যে, বাংলায় শুধু রাজনৈতিক সন্ত্রাস হয়। কিন্তু সেটা সত্যি নয়’’ একই সঙ্গে শিল্পপতিদের উদ্দেশে প্রশ্নের সুরে মমতা বলেন, ‘‘সেটা হলে বাংলায় এত কাজ হল কী করে?’’ মমতা কোনও দলের নাম না বললেও রাজ্যের এক মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল বিজেপিই। কারণ, ওই দলের নেতারাই দেশের অন্য রাজ্যেও বাংলা সম্পর্কে দুর্নাম করে। নানা টিম নিয়ে আসে বাংলায় সন্ত্রাস চলছে বলে মিথ্যা অভিযোগ তুলে।’’
মঙ্গলবার সম্মেলনের প্রথম দিনেই মুকেশ অম্বানী রাজ্যের বড় অঙ্কের বিনিয়োগের ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে অনেক কর্মসংস্থানের আশ্বাসও দেন। এর পরেই বলতে ওঠেন মমতা। সেই সময়ে রাজ্য এখনও পর্যন্ত শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, শিল্প থেকে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে কী কী কাজ করেছে তার বিরবণ দেন। একই সঙ্গে জানান, শিল্পের ক্ষেত্রে রাজ্যে তিনি ১২টি পদক্ষেপ করতে চলেছে যা বাংলার ক্ষেত্রে ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে। তাজপুরে সমুদ্র বন্দর, ডেউচা পাঁচামিতে কয়লা খনি, রানিগঞ্জে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলেন। জানান, রাজ্যে চা-বাগানের জমির ১৫ শতাংশ এলাকায় হোটেল বানানোর ছাড়পত্রও দিচ্ছে রাজ্য।
সেই সঙ্গে শিল্পপতিদের বাংলায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘বাংলায় শক্তিশালী সরকার চলছে। ৩৪ বছর বামেদের ঋণের বোঝা রয়েছে। এর পরেও আমরা ল্যান্ড ম্যাপ বানিয়েছি।’’ রাজ্যের লক্ষ্য বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘‘সামাজিক ক্ষেত্রে আমরা ‘টপ অফ দ্য টপ’। কর্মসংস্থানই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। রাজ্যে এখন ৯০ লক্ষ এমএসএমই ইউনিট রয়েছে। যা দেশের বাকি রাজ্যের তুলনায় বেশি।’’ দুর্গাপুজোর রাজ্যের সব ক্লাবকে অর্থ সহায়তা দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘৪৮ হাজার ক্লাবকে ৭০ হাজার টাকা করে দিয়েছি। ৩০০ কোটি টাকা খরচ করে ৮০ হাজার কোটি আয় করেছি।’’