হাসপাতালে মশারির ভিতরে রাখা হয়েছে ডেঙ্গি রোগীদের। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশ সফর সেরে ফেরার পরেই এ বিষয়ে মুখ্যসচিবকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন। মমতার নির্দেশে সোমবার রাজ্যের সমস্ত জেলার জেলাশাসক এবং স্বাস্থ্য ভবনের কর্তা, আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। ওই বৈঠকে থাকছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক, জেলা স্বাস্থ্যকর্তা এবং মেডিক্যাল কলেজের সদস্যেরা। সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ এই বৈঠক শুরু হওয়ার কথা।
কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত কয়েক দিনে রাজ্যে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। ফলে শহরে এবং গ্রামাঞ্চলের রাস্তায় খানাখন্দে জল জমেছে বিস্তর। এই জমা জলই ডেঙ্গিবাহী মশার আঁতুড়ঘর। ফলে বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
এমনিতেই বর্তমানে রাজ্যে প্রতি দিন ২৫০ থেকে ৩০০ জন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকের মৃত্যুও হচ্ছে। সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা এখনও জানানো হয়নি। বেসরকারি মতে, প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতে। রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত বেশ কিছু রোগীও আছেন।
ডেঙ্গিতে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও আক্রান্তের লেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী। জেলায় জেলায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু ‘ডেঙ্গি হটস্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গ্রামের হাসপাতালে ডেঙ্গির চিকিৎসার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতি জেলায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এক বা একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে। ডেঙ্গি রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত ওই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করেই নিতে হবে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের।
বলা হয়েছে, চলতি মরসুমে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত রোগীরা অনেকেই হাসপাতালে পৌঁছতে দেরি করে ফেলছেন। বাড়িতে থেকে চিকিৎসা চলাকালীন আচমকা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শহরের হাসপাতালে ‘রেফার’ করতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। তখন আর মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। কাকে ‘রেফার’ করতে হবে, কোন রোগীর চিকিৎসা জেলা থেকেই সম্ভব, সে বিষয়ে পরামর্শ দেবেন জেলায় নিযুক্ত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞেরাই।
এখনও পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার ডেঙ্গি পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক বলে মনে করা হচ্ছে। এই তিন জেলায় আটটি ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে অন্য জেলাতেও ডেঙ্গি পরিস্থিতি খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। ডেঙ্গি ঠেকাতে জারি করা হয়েছে একাধিক সতর্কতা। মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।