Chopra Assault Case

আর একটাও সালিশি সভা যেন না বসে! চোপড়ার বিধায়ক হামিদুলকে ফোন করে ধমক দিলেন মমতা

উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, চোপড়ায় যাতে আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে চলতে বিধায়ক হামিদুল রহমানকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪ ২১:১২
Chief Minister Mamata Banerjee scolds MLA Hamidul Rahman over Chopra Assault case

(বাঁ দিকে) চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমানকে ফোন করে ধমক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিকেলে দলীয় বিধায়ককে ফোন করেন মমতা। মিনিট পাঁচেক কথাও হয় তাঁদের। উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, চোপড়ায় যাতে আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে চলতে হামিদুলকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে চোপড়ার সমস্ত পঞ্চায়েত ও স্থানীয় ক্লাবগুলিকেও বার্তা পাঠাতে বলেছেন, আগামী দিনে কোনও সালিশি সভা যেন না বসানো হয়। যদি এলাকায় কোনও সমস্যা হয়েই থাকে, তবে তা যেন পুলিশ প্রশাসনের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও চোপড়ার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত যদি দলের কোনও পদে থেকে থাকেন, তা হলে যেন অবিলম্বে তাঁকে সেই পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হয়। এমনই নির্দেশ বিধায়ককে দিয়েছেন মমতা।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর আনন্দবাজার অনলাইনকে হামিদুল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমার অভিভাবক। তাই চোপড়ার ঘটনায় আমাকে বকেছেন, এটা তাঁর অধিকার। আগামী দিনে যাতে এলাকায় এমন কোনও ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।’’ চোপড়ার বিধায়ক দাবি করেছেন, ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের কোনও পদে নেই। তিনি তৃণমূলের ভোটার মাত্র। তাই তাঁকে দল থেকে ছেঁটে ফেলার কোনও প্রশ্নই আসছে না। বরং পুলিশ প্রশাসন যেন তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়। আগামী দিনে কেউ যাতে এমন গণপিটুনির ঘটনা না ঘটাতে পারেন, সে দিকেই নজর রেখে অভিযুক্ত ‘জেসিবি’ ওরফে তাজিমুলকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন হামিদুল।

চোপড়ার ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক হামিদুলকে শোকজ় করেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের এক শীর্ষনেতার নির্দেশেই চোপড়ার বিধায়ককে শোকজ়ের চিঠি পাঠানো হয়। এমনকি, কী মর্মে চিঠি পাঠাতে হবে তা-ও বলে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল, হামিদুলকে শোকজ়ের চিঠি পাঠিয়েছেন। শোকজ় নোটিসের জবাব দেওয়ার জন্য হামিদুলকে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। হামিদুল জবাব দিলে তা রাজ্য নেতৃত্বকে পাঠাবেন জেলা সভাপতি। হামিদুলকে নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্য নেতৃত্বই। সূত্রের খবর, চোপড়ায় যুগলকে গণপিটুনির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর হামিদুল যে মন্তব্য করেছিলেন তার ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে। শোকজ় সম্পর্কে জানতে হামিদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হামিদুল বলেন, ‘‘আমি চিঠি পেয়েছি। অবশ্যই তার জবাব দেব।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথপোকথনে শোকজ় প্রসঙ্গে কোনও কথা হয়নি বলেই জানিয়েছেন চোপড়ার বিধায়ক।

রবিবার দুপুরে চোপড়ার তৃণমূল নেতা তাজিমুল ওরফে ‘জেসিবি’র একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। সেই ভিডিয়োয় দেখা যায় এক তরুণীকে রাস্তার মধ্যে ফেলে এক ছড়া কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক মারছেন জেসিবি। মার খেতে খেতে গুটিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে চুলের মুঠি ধরে টেনে এনে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলা হচ্ছে। তার পরে আবার শুরু হচ্ছে মার। একই সঙ্গে এক তরুণকেও একই ভাবে মারতে দেখা যায় (ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন )। বিরোধীদের দাবি, অভিযুক্ত তাজিমুল বিধায়ক হামিদুলের ‘ঘনিষ্ঠ’। তার প্রেক্ষিতে হামিদুল গোটা ঘটনা নিয়ে শুরুতে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তা নিয়ে আপত্তি তুলে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ফোনের পর তাজিমুলের থেকে দূরত্ব রচনা করতে শুরু করেছেন হামিদুল। বিজেপি বিধায়ক শঙ্করের দাবি, তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল তাঁর বক্তব্যে ‘আমাদের মুসলিম রাষ্ট্র’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন। এই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই তাজিমুলকে গ্রেফতার করেছে। অন্য দিকে, চোপড়ার ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, এ বারের লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং লোকসভার অন্তগর্ত চোপড়া বিধানসভা থেকে তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামা ৯২ হাজার ১৩১ ভোটে এগিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও ওই আসনে বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা পুনরায় জয়ী হয়েছেন। তবে চোপড়ায় তৃণমূলের এই বিরাট ব্যবধানের আসল কারিগর বিধায়ক হামিদুলই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement