বুধবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করেছে ইডি। —ফাইল চিত্র।
প্রাথমিক নিয়োগ মামলা রক্ষাকবচ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্ট তাঁকে জানিয়ে দিল, নতুন করে কোনও রক্ষাকবচের প্রয়োজন নেই তাঁর। কারণ, ইডি আগেই এ ব্যাপারে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে। এবং এ যাবৎ সেই প্রতিশ্রুতি তারা পালনও করেছে।
প্রাথমিকের নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় বুধবারই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেককে সমন পাঠিয়েছে ইডি। বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর অভিষেকের দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকে কমিটির সদস্য হিসাবে যোগ দেওয়ার কথা ছিল অভিষেকের। ওই দিনই ইডি তাঁকে তলব করায় অভিষেক বৈঠকে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে ইডির দফতরে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েওছেন ইতিমধ্যে। তবে একই সঙ্গে তিনি আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে চলা মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া অবধি ইডি যাতে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে না পারে, সে ব্যাপারেই আদালতে রক্ষাকবচ চেয়ে আবেদন করেছিলেন অভিষেক। মঙ্গলবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে শুনানি হয় মামলাটির।
অভিষেকের আবেদন শোনার পর বিচারপতি জানিয়ে দেন, অভিষেকের এই রক্ষাকবচের কোনও প্রয়োজন নেই। তাই মামলাটি নতুন করে শোনারও কোনও দরকার নেই। পাল্টা বিচারপতি অভিষেকের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘ইডির আইনজীবীর মৌখিক প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ইডির আধিকারিকরা এই মামলার শুরু থেকে কোনও কড়া পদক্ষেপ করেননি। এখন এই মামলার শেষ মুহূর্তে কেন নতুন শব্দবন্ধ নির্দেশনামায় লিখতে যাব?’’
বিচারপতি, ইডির আইনজীবী এবং অভিষেকের আইনজীবীর মধ্যে কথোপকথন চলে এ ভাবে—
অভিষেকের আইনজীবী— ‘‘নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ১০ সেপ্টেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমন পাঠিয়েছে। বুধবার তাঁকে ইডির দফতরে হাজির হতে বলা হয়েছে। এর আগেও তাঁকে সমন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মামলা বিচারাধীন থাকাকালীন কী ভাবে ইডি নতুন সমন পাঠাতে পারে? সে ক্ষেত্রে ধরতে হবে, ইডি নিজের পদক্ষেপেকেই চ্যালেঞ্জ করেছে। অভিষেকের বিরুদ্ধে কোনও তথ্য প্রমাণ নেই। শুধুমাত্র লোক দেখানো তদন্তের জন্য সমন করা হয়েছে। তাই অভিষেককে রক্ষাকবচ দেওয়া হোক।’’
ইডির আইনজীবীর যুক্তি— ‘‘এখানে গ্রেফতারির প্রশ্নই উঠছে না। তা হলে তাঁকে রক্ষাকবচ দেওয়ার প্রশ্নই বা আসছে কোথা থেকে। অভিষেককে সমন পাঠানো হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে তাঁর হাজিরা দেওয়া কথা। অনেককেই তো সমন পাঠানো হয়। সবাইকে কি গ্রেফতার করা হয়?’’
বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ— ‘‘এত দিন ধরে মামলা চলছে। মৌখিক ভাবে রক্ষাকবচ দেওয়া রয়েছে। এখন এ নিয়ে আর কোনও নির্দেশ দেবে না আদালত।’’
একই সঙ্গে বিচারপতি জানান, আগামী ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব পক্ষ লিখিত বক্তব্য জমা দিতে পারবে আদালতে। প্রাথমিক নিয়োগের তদন্তে সম্প্রতিই লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানিতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে ইডির তদন্তকারীরা বেআইনি ভাবে কয়েকটি ফাইল ডাউনলোড করেছিলেন। যা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন ওই সংস্থার কর্মচারী। তা নিয়েও মামলা চলছে আদালতে।
বিচারপতি ওই ফাইল পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতেও পাঠানোর কথা বলেছিলেন। মঙ্গলবার অভিষেকের মামলার শুনানি চলাকালীনই বিচারপতি ঘোষ বলেন, ‘‘১৬টি ফাইলের বিস্তারিত রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি।’’ তিনি নির্দেশ দেন, ‘‘লালবাজার সাইবার ক্রাইম থানাকে কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক-সহ যে সব নথি ফরেনসিকের জন্য সিএফএসএল-এ দেওয়া হয়েছিল, তা ফেরত দিতে হবে।