দলের সুবিধা হবে এমন কাউকেই প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দিতে পারেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ফাইল চিত্র।
আগামী অগস্ট মাসে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছ’টি রাজ্যসভার সাংসদ পদ খালি হবে। তাতে সহজ হিসাবেই পাঁচটিতে তৃণমূল প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। একটিতে বিজেপির। এই প্রথম বিজেপি বাংলা থেকে কোনও নির্বাচিত সাংসদ পাঠাতে পারবে সংসদের উচ্চকক্ষে। কিন্তু কে প্রার্থী হবেন? সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন থাকায় এখনই তা নিয়ে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব আলেচনা করছেন না। তবে কোন পদ্ধতিতে প্রার্থী বাছাই হতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলেছে বিজেপির নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তায়।
কেউই এখন এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে না চাইলেও গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবর, তিনটি ফর্মুলায় বাছা হতে পারে প্রার্থী। এমনটাই চাইছেন দলের তিন শীর্ষনেতা। সকলেই জানেন, রাজ্য যাঁর নামই বলুক, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। এই ত্রয়ীর সিদ্ধান্তেই নাম ঘোষণা করা হবে।
বাংলার জনসংখ্যা এবং বিধায়কদের হিসাবে রাজ্য থেকে মোট ১৬ জন রাজ্যসভায় যেতে পারেন। এখন তৃণমূলের ১৪ জন সাংসদ রয়েছেন বাংলা থেকে। বাকি দু’জনের মধ্যে এক জন কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং অপর জন সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তৃণমূল বাধা না দেওয়ায় পর পর দু’বার সহজেই কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে রাজ্যসভায় যান প্রদীপ। তবে বিকাশ বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন।
এ রাজ্যে তিনটি ভাগে হয় রাজ্যসভা নির্বাচন। দুই ভাগে পাঁচটি করে আসন এবং একটি ভাগে ছ’টি আসন। পাঁচটি করে আসনে ভোট হলে বিজেপির যা শক্তি, তাতে তারা একজন প্রার্থীকেই জেতাতে পারবে। কিন্তু অগস্টে ছ’টি আসনে ভোট। তাতেও অবশ্য বিজেপি একটির বেশি আসনে জিততে পারবে না। কংগ্রেসের প্রদীপ ছাড়াও অগস্টে মেয়াদ শেষ হচ্ছে তৃণমূলের পাঁচ সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, শান্তা ছেত্রী, সুখেন্দুশেখর রায়, সুস্মিতা দেব ও দোলা সেনের। এই ছ’জনের মধ্যে প্রদীপের জায়গায় বিজেপি রাজ্যসভায় সাংসদ পাঠাতে পারবে। কারণ, বিধানসভায় সদ্য সাগরদিঘিতে বায়রন বিশ্বাসের জয়ের পরে কংগ্রেসের বিধায়ক মাত্র এক। বামেরা শূন্য। অন্য দিকে, খাতায়কলমে ৭৫ বিধায়কের বিজেপি অনায়াসে একজন প্রার্থীকে জেতাতে পারবে।
তৃণমূলের যে পাঁচ সাংসদের মেয়াদ অগস্ট মাসে শেষ হচ্ছে, তাঁরা সকলেই ফের মনোনয়ন পাবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে প্রথম বার সুযোগ পাওয়া বিজেপি কাকে প্রার্থী করবে, সে দিকেই বেশি নজর রাজনৈতিক মহলের। বিজেপি সূত্রের খবর, তিনটি বিষয় দেখা হতে পারে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে। প্রথম, রাজ্যে ‘নতুন নেতা’ ঠিক করা। এমন কাউকে বাছা হতে পারে, যিনি আগামী দিনে রাজ্য বিজেপির হাল ধরবেন। সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতি থাকতে থাকতেই নির্বাচিত রাজ্যসভা সাংসদের সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ পর্ব চলবে।
দ্বিতীয়, বিজেপি এমন কাউকে খুঁজতে পারে, যিনি আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভোটারদের কাছে ‘চুম্বক’ হিসাবে কাজ করবেন। তাঁকে রাজনীতির লোক হতেই হবে এমন কোনও কথা নেই। অন্য ক্ষেত্রের কোনও বিশিষ্ট হতে পারেন। তবে সর্বস্তরের মানুষের কাছে তাঁর ভাল ভাবমূর্তি থাকা চাই।
তৃতীয় ফর্মুলাও একটি রয়েছে। তবে তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সে ক্ষেত্রে দলের কোনও পুরনো নেতাকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে পুরস্কার দেওয়া। তিনি বাংলার বাসিন্দা না হয়ে ভিনরাজ্যে থাকা বাঙালিও হতে পারেন। এই ‘পুরস্কার’ দেওয়া বিষয়ে অবশ্য আপত্তি মোদী-শাহদের। তাই কাউকে পুরস্কার দিয়ে ‘খুশি’ করার জন্য নয়, দলের সুবিধা হবে এমন কাউকেই প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দিতে পারেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বিজেপি এই প্রথম বাংলা থেকে রাজ্যসভায় সাংসদ পাঠানোর সুযোগ পেলেও গেরুয়া শিবিরের ক্ষেত্রে এটাই প্রথম, তা বলা যাবে না। বিজেপির আদি দল ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রতিনিধি হিসাবে বাংলা থেকে ১৯৫২ সালে রাজ্যসভায় গিয়েছিলেন দেবপ্রসাদ ঘোষ। তবে ১৯৮০ সালে বিজেপি তৈরি হওয়ার পরে এই প্রথম বাংলার বিজেপি রাজ্যসভায় কোনও সদস্য পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছে।
খাতায়কলমে বিধানসভায় বিজেপির শক্তি ৭৫। কিন্তু ইতিমধ্যেই ছ’জন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে শক্তি কমে হয়েছে ৬৯। রাজ্যসভার ভোটের যা অঙ্ক, তাতে এ বার বাংলা থেকে একজন প্রার্থীকে জেতাতে ৪২টি ভোট দরকার। ফলে এক জন প্রার্থীকে জেতানোর পরেও বিজেপির হাতে ১৭টি ভোট থাকবে। অন্য দিকে, পাঁচ জনকে জেতানোর জন্য তৃণমূলের প্রয়োজন ২১০ বিধায়ক। বিজেপি থেকে আসা বিধায়কদের ধরলে তৃণমূলের শক্তি ২২২। তাই জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্যের ভোট না পাওয়া নিয়েও চিন্তার কিছু নেই শাসকদলের।